পোশাক আমদানিতে শুল্ক কমেছে, ক্ষুব্ধ দেশিয় উদ্যোক্তারা
টানা দ্বিতীয় বছর বিদেশ থেকে নারী, পুরুষ ও বাচ্চাদের তৈরি পোশাক আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক কমল। এতে আমদানি করা তৈরি পোশাকের দাম কিছুটা কমবে। এ কারণে আবার দেশিয় পোশাকের ব্র্যান্ড ও বুটিক হাউসগুলো প্রতিযোগিতার মুখে পড়বে—এমনটাই বলছেন উদ্যোক্তারা। তাঁদের দাবি, বিদেশি পোশাক আমদানিকে উৎসাহ দিলে দেশীয় বিনিয়োগকারীরা নিরুৎসাহিত হবেন।
আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে ১৭২ ধরনের পোশাক আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক কমানো হয়েছে। ফলে এসব পণ্য আমদানিতে মোট করভার ১২২ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০০ শতাংশ করা হয়েছে। যেসব পোশাক আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক কমানো হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো নারী, পুরুষ ও বাচ্চাদের টি–শার্ট, ট্রাউজার, স্যুট, জ্যাকেট, শার্ট, রেইনকোট ইত্যাদি।
অর্থমন্ত্রী বাজেট বক্তব্যে বলেন, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের উত্তরণের পাশাপাশি বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) বিধিবিধানের সঙ্গে সংগতি রক্ষার জন্য পণ্যের শুল্কহার যৌক্তিক করতে হবে। এর অন্যতম শর্ত হচ্ছে, বর্তমানে ন্যূনতম ও ট্যারিফ মূল্য এবং নিয়ন্ত্রণমূলক ও সম্পূরক শুল্ক পর্যায়ক্রমে প্রত্যাহার করা।
গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১৭২ ধরনের পোশাক আমদানিতে ১২৭ দশমিক ৭২ শতাংশ করভার ছিল। পরের বছর অর্থাৎ চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সম্পূরক শুল্ক কমানোর কারণে করভার দাঁড়ায় ১২২ দশমিক ৫০ শতাংশ।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্যানুযায়ী, দেশে গত বছর ২ কোটি ৩৫ লাখ তৈরি পোশাক আমদানি হয়, যার মূল্য ৫০২ কোটি
টাকা। অবশ্য ২০২২ সালে ২ কোটি ৬৩ লাখ পিস পোশাক আমদানি হয়েছিল। তখন খরচ হয়েছিল ৪৬৬ কোটি টাকা। মূলত গত বছর ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় পরিমাণে কম পোশাক আমদানি হলেও ব্যয় বেশি হয়েছে।
গত জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত তিন মাসে ৭৫ লাখ পিস পোশাক আমদানি হয়েছে। এতে ব্যয় হয়েছে ২১৪ কোটি টাকা। এসব পোশাক বিশ্বের ৯০টির বেশি দেশ থেকে আসছে। তবে ৯৬ শতাংশই ভারত, পাকিস্তান ও চীন থেকে আসছে।
দেশে আশির দশকের গোড়ার দিকে বুটিক শপের যাত্রা শুরু হয়। নব্বইয়ের দশকে সংখ্যাটি বাড়তে থাকে। ২০০০ সালের পর পোশাক রপ্তানির সঙ্গে যুক্ত ব্যবসায়ীরাও ফ্যাশন হাউসের ব্যবসায় আসতে শুরু করেন। তাঁদের সংখ্যা গত এক দশকে অনেক বেড়েছে।
জানতে চাইলে ফ্যাশন এন্ট্রাপ্রেনিউর অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (এফইএবি) বা ফ্যাশন উদ্যোগের পরিচালক সৌমিক দাশ
প্রথম আলোকে বলেন, শ্রমিকদের মজুরি, কাপড়সহ কাঁচামাল ও বিদ্যুৎ বিলের খরচ বেড়ে যাওয়ায় উদ্যোক্তারা এমনিতেই চ্যালেঞ্জের মধ্যে আছেন। করহার বেশি থাকার পরও বিপুলসংখ্যক তৈরি পোশাক আমদানি হয়েছে। করহার কমানো হলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হবে। আমদানি হওয়া তৈরি পোশাকে বাজার সয়লাব হবে। এতে দেশীয় উদ্যোক্তারা নিরুৎসাহিত হবেন। ফলে দেশীয় শিল্পকে সুরক্ষা দিতে সিদ্ধান্তটি পুনর্বিবেচনা করা দরকার।