মূলধারার জনগোষ্ঠীর তুলনায় চা–শ্রমিকদের জীবনমান অনেক পিছিয়ে। পুষ্টিহীনতা, শিক্ষার হার, মাতৃত্বকালীন মৃত্যু, নারীর ওপর সহিংসতা ও বাল্যবিবাহে জাতীয় গড়ের চেয়েও অনেক পিছিয়ে রয়েছেন তাঁরা। মূলধারার বাইরে থাকার কারণে চা–শ্রমিকেরা চোখের সামনে থাকেন না। সে কারণে নীতি পর্যালোচনায় এই শ্রমিকেরা যথাযথ মনোযোগ পাচ্ছেন না।
রাজধানীর মহাখালীর ব্র্যাক সেন্টার ইনে গতকাল বুধবার এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশের উদ্যোগে আয়োজিত ‘বাংলাদেশের চা–বাগানের শ্রমিকেরা কেন পেছনে পড়ে আছে’ শীর্ষক এক সংলাপে বক্তারা এসব কথা বলেন। সংলাপে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থ মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মো. আব্দুস শহীদ। সংলাপে সভাপতিত্ব করেন নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য তাঁর বক্তব্যে বলেন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বাস্তবায়নে বৈশ্বিক চেতনা হচ্ছে, কাউকে পেছনে রাখা যাবে না। বাংলাদেশে যেসব চিহ্নিত গোষ্ঠী পিছিয়ে রয়েছে, তাদের মধ্যে চা-শ্রমিকেরা অন্যতম। তিনি বলেন, চা–শ্রমিকদের সমস্যা বহুমাত্রিক। তাঁদের মধ্যে পুষ্টিহীনতা, মাতৃত্বকালীন মৃত্যু, শিক্ষার হার ও বাল্যবিবাহ অনেক বেশি। এসব ক্ষেত্রে উন্নয়ন ঘটাতে হবে। তবে চা-শিল্পের আধুনিকায়ন, চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা এবং শিল্পমালিক ও শ্রমিকদের সম্পর্ক উন্নয়নে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেই।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান চা–শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নে কয়েকটি সুপারিশ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, চা–শ্রমিকেরা শিক্ষাব্যবস্থায় বেশ পিছিয়ে রয়েছেন। এ ক্ষেত্রে দ্রুত উন্নয়ন দরকার। তাঁদের কীভাবে সামাজিক সুরক্ষা খাতে অন্তর্ভুক্ত করা যায়, সেদিকে জোর দিতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বাংলাদেশ চা–কন্যা নারী সংগঠনের প্রধান খায়রুন নাহার বলেন, ‘চা–শ্রমিকদের চেয়েও রোহিঙ্গারা অনেক ভালো আছে। ৭০ বছর ধরে জঙ্গল কেটে বসবাস করেও এখনো ভূমির ওপর কোনো অধিকার নেই চা–শ্রমিকদের। আমরা ৩০০ টাকা মজুরির জন্য আন্দোলনে নেমেছিলাম; কিন্তু সরকার নির্ধারণ করেছে মাত্র ১৭০ টাকা। এই টাকায় কীভাবে একটা পরিবার চলে?’
নাগরিক উদ্যোগের নির্বাহী পরিচালক জাকির হোসেন বলেন, চা-শিল্পে প্রায় পাঁচ লাখ শ্রমিক রয়েছেন। তাঁরা প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত। শিশুরা পুষ্টিকর খাবার পায় না। বিশুদ্ধ খাবার পানি ও স্যানিটেশনেও তাঁরা পিছিয়ে।
তিনি বলেন, মজুরি বাড়ানোর দাবি উঠলেই চা-বাগানের মালিকেরা বলেন, এত মজুরি দিতে পারব না। দেশের অভ্যন্তরে চায়ের ভোক্তা বাড়ছে। তাহলে কেন শ্রমিকেরা ন্যায্য মজুরি পাবেন না।
সংসদ সদস্য মো. আব্দুস শহীদ বলেন, চা–শ্রমিকদের সমস্যা সমাধানে মালিক ও শ্রমিকদের মধ্যে আন্তরিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে।
চা–শ্রমিকদেরও অধিকার আদায়ে উৎসাহের সঙ্গে এগিয়ে আসতে হবে। ইতিমধ্যে শ্রমিকদের দুর্দশার কথা সরকারের ইশতেহারে উল্লেখ করা হয়েছে। তাঁদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। আগামী নির্বাচনী ইশতেহারে চা–শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে সোচ্চার হওয়া দরকার।