২০২৩–২৪ অর্থবছরের তৃতীয় প্রান্তিকে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬.১২%

জিডিপিপ্রতীকী ছবি

হঠাৎ করে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধিতে বড় উল্লম্ফন ঘটেছে। সদ্য বিদায়ী ২০২৩–২৪ অর্থবছরের তৃতীয় প্রান্তিক জানুয়ারি-মার্চে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬ দশমিক ১২ শতাংশ, যা আগের প্রান্তিকের প্রায় দ্বিগুণের কাছাকাছি।

সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) আজ মঙ্গলবার ত্রৈমাসিক জিডিপির আকার ও প্রবৃদ্ধির তথ্য প্রকাশ করেছে। এতে বিদায়ী অর্থবছরের প্রথম তিন প্রান্তিক জুলাই–মার্চ পর্যন্ত প্রবৃদ্ধির চিত্র উঠে এসেছে। প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) ৬ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ ও দ্বিতীয় প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) ৩ দশমিক ৭৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছিল। সব মিলিয়ে তিন প্রান্তিকে গড় জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫ দশমিক ৩০ শতাংশ।

বিবিএস সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংক গত অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসের প্রকৃত রপ্তানির তথ্য প্রকাশ করেছে। তাতে রপ্তানি কমার কথা বলা হলেও এই তথ্য বিবিএসের তৃতীয় প্রান্তিকের জিডিপি গণনায় আমলে নেওয়া হয়নি।

মূলত আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের শর্ত অনুসারে, এক বছর ধরে ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে জিডিপির হিসাব প্রকাশ করে আসছে বিবিএস।

এ বিষয়ে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর প্রথম আলোকে বলেন, ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে জিডিপির হিসাব দেওয়ায় এখন অর্থনীতির গতিপ্রকৃতি বোঝা যায়। তাঁর মতে, কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হলে শেষ প্রান্তিকে সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি হতে হবে। তবে তা অসম্ভব নয়।

এদিকে গত মে মাসে ছয় মাসের তথ্য–উপাত্তের ভিত্তিতে পুরো ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধির একটি সাময়িক প্রাক্কলন করে বিবিএস। তখন আলোচ্য বছরে ৫ দশমিক ৮২ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির কথা বলা হয়। হিসাব করে দেখা গেছে, এই প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হলে শেষ প্রান্তিক, অর্থাৎ এপ্রিল-জুন সময়ে ৭ দশমিক ৩৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হতে হবে।

বিবিএসের হিসাব পর্যালোচনায় দেখা যায়, বিদায়ী অর্থবছরের তৃতীয় প্রান্তিকে জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে বড় ধরনের উল্লম্ফন ঘটেছে। আগের অর্থবছরের তৃতীয় প্রান্তিকে মাত্র ২ দশমিক ৩০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছিল। সে তুলনায় এবারে প্রবৃদ্ধি বেড়েছে ১৬৬ শতাংশ।

গত অর্থবছরের তৃতীয় প্রান্তিকে শিল্প, সেবা ও কৃষি মিলিয়ে সব খাতে প্রবৃদ্ধি অনেক বেড়েছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ৭ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে শিল্প খাতে। গত জানুয়ারি-মার্চ সময়ে স্থিরমূল্যে জিডিপিতে যুক্ত হয়েছে ৮ লাখ ৬৩ হাজার ২০০ কোটি টাকা।

মোটাদাগে ১১টি উপখাতের ওপর ভিত্তি করে জিডিপি গণনা করা হয়। সেখানে দেখা যায়, জানুয়ারি-মার্চ সময়ে নির্মাণ খাতে সর্বোচ্চ ৯ দশমিক ৪৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি হয় উৎপাদন খাতের কলকারখানায়। এ উপখাতে প্রবৃদ্ধি হয় ৬ দশমিক ৯৯ শতাংশ। এ ছাড়া পাইকারি ও খুচরা বিক্রি উপখাতে ৬ দশমিক ২২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।

বিদায়ী অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিক অক্টোবর-ডিসেম্বরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয় সবচেয়ে কম, ৩ দশমিক ৭৮ শতাংশ। বাকি দুই প্রান্তিকে প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশের বেশি হয়েছে। জিডিপি গণনার সঙ্গে সম্পৃক্ত বিবিএসের জাতীয় আয় শাখার এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মূলত জাতীয় নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক অস্থিরতায় শিল্প খাত শ্লথ ছিল। তখন কলকারখানায় উৎপাদন কম হয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে জিডিপিতে।