খাতুনগঞ্জের ভোগ্যপণ্যের ব্যবসা থেকে হারিয়ে গেছে যারা

ফাইল ছবি

দেশের বৃহত্তম ভোগ্যপণ্যের বাজার খাতুনগঞ্জে একসময় এমইবি, মোস্তফা ও নুরজাহান গ্রুপ একনামেই পরিচিত ছিল। ভোজ্যতেলের বাজারে শীর্ষ তিন প্রতিষ্ঠানের তালিকায় কোনো না কোনো বছর ছিল এই তিন কোম্পানির নাম। তবে ছয় বছরের বেশি সময় ধরে এসব গ্রুপ ভোগ্যপণ্যের ব্যবসায় নেই। ব্যাংকের খেলাপি হয়ে ভোগ্যপণ্যের ব্যবসা থেকে সরে আসতে হয়েছে এসব প্রতিষ্ঠানকে। এই বড় গ্রুপগুলোর মতো ছোট-মাঝারি অনেক ব্যবসায়ীর নাম শোনা যায় না খাতুনগঞ্জে।

আবার খেলাপি না হলেও ট্রেডিং ব্যবসা থেকে বেরিয়ে শিল্পকারখানার বিনিয়োগে মনোযোগ দিয়েছে অনেকে। স্বেচ্ছায় ভোগ্যপণ্যের ব্যবসা থেকে সরে এসেছে তারা। পিএইচপি গ্রুপ এমনই একটি। প্রায় ১৩ বছর আগে ভোগ্যপণ্যের ব্যবসা গুটিয়ে শিল্পকারখানায় বিনিয়োগ বাড়িয়েছে গ্রুপটি। আবুল খায়ের গ্রুপও ভোজ্যতেল থেকে সরে এসেছে দুই দশক আগে।

খাতুনগঞ্জ থেকে ব্যবসা গুটিয়ে নেওয়ার তিনটি কারণ পাওয়া গেছে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে। প্রথমত, শুরুর দিকে প্রতারণার শিকার হয়ে অনেক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান উধাও হয়ে গেছে। দ্বিতীয়ত, স্বেচ্ছায় এই বাজার থেকে বেরিয়ে শিল্পকারখানায় মনোযোগী হয়েছে কিছু প্রতিষ্ঠান। তৃতীয়ত, লোকসানে পড়ে ব্যাংকের খেলাপি হওয়ায় ব্যবসা গুটিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছে কিছু প্রতিষ্ঠান।

১৯৮৬ সালে বিভূতিভূষণ রায় নামের এক ব্যবসায়ী ছয় কোটি টাকা দেনা রেখে পালিয়ে যান। এরপর একের পর এক প্রতারণার ঘটনা ঘটেছে। খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের হিসাবে, গত ৩০ বছরে প্রতারণার অন্তত ৭০টি ঘটনা ঘটেছে। এতে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। প্রতারণার শিকার হওয়া অন্তত শতাধিক ব্যবসায়ীও এই বাজার থেকে ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছেন।

শেয়ারবাজারের মতো উত্থান-পতন হয় ভোগ্যপণ্যের দামেও, তাতে কখনো লোকসান, কখনোবা লাভের মুখ দেখেন ব্যবসায়ীরা। উত্থান-পতনের ধারাবাহিকতায় লোকসানের পাল্লা ভারী হলে টিকতে পারেন না কেউ। এ কারণেই এমইবি, মোস্তফা ও নুরজাহান গ্রুপের মতো অনেকেই এই ব্যবসা থেকে সরে যেতে বাধ্য হয়েছে। তিনটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এখন ব্যাংকের মামলা চলছে।

পণ্যভিত্তিক আমদানির তালিকা অনুযায়ী, ভোজ্যতেলের বাজারে এ তিন প্রতিষ্ঠান ছাড়াও ইয়াকুব অয়েল রিফাইনারি, উত্তম অয়েল মিল, আলহাজ অয়েল মিলের মতো অনেক প্রতিষ্ঠান এখন নেই। চিনিতে মহিউদ্দিন করপোরেশন, ইয়াছির এন্টারপ্রাইজসহ অনেক প্রতিষ্ঠানও হারিয়ে গেছে সময়ের বিবর্তনে। একই অবস্থা গম-ডাল আমদানির ব্যবসাতেও। পুরোনো ব্যবসায়ীদের মধ্যে নীলকৃষ্ণ মজুমদার, হাজী আমজাদ ও হাজী নজির আহমদ সওদাগররাও নেই।

স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলছেন, ২০০৮ সালে বিশ্ববাজারে পণ্যের দামে ছিল বড় ধরনের অস্থিরতা। এ সময়েই মূলত লোকসানে পড়েন ব্যবসায়ীরা। লোকসানে পড়া ব্যবসায়ীরা অনেকে পণ্য বিক্রি করে ব্যাংকের ঋণ শোধ না করে জমি, শেয়ারবাজারসহ অন্য খাতে টাকা বিনিয়োগ করেছেন। অনেকে লোকসানে পড়ে ব্যাংকের কর্মকর্তাদের যোগসাজশে পণ্য বিক্রি করে কোনো টাকাই ফেরত দেননি। উল্টো আমদানি কার্যক্রম বন্ধ করে দেন।

চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, খাতুনগঞ্জে একসময় বড় ও ছোট ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের অনেকে এখন আর নেই। নতুনরাও এখন আসছে না। তিন-চার দশক ধরে যারা ব্যবসা করে আসছে, তাদের এই বাজার থেকে সরে পড়াটা দুঃখজনক। কারণ, ব্যবসায়ীদের সংখ্যা যত বাড়বে, ততই ভোক্তারা প্রতিযোগিতামূলক দাম পাবে।