রাজনীতিবিদেরা অর্থনীতিবিদদের হুকুমের আজ্ঞাবহ হিসেবে দেখতে চান: ফরাসউদ্দিন

মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনছবি–প্রথম আলো

রাজনীতি ও অর্থনীতির মধ্যে সম্পর্ক অসম বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন। তিনি বলেন, রাজনীতিবিদেরা অর্থনীতিবিদদের গৃহভৃত্য না হলেও হুকুমের আজ্ঞাবহ হিসেবে দেখতে চান। বড় বড় খেলাপিরা সাত, আট, নয়বার করে ঋণ পুনঃ তফসিল করতে পারছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি।

ফরাসউদ্দিন আরও বলেন, অর্থনীতিবিদেরা জ্ঞানী; গণমাধ্যমে বা টেলিভিশনে তাঁরা কথা বলেন। রাষ্ট্র পরিচালনাকারীদের উচিত, আমন্ত্রণ জানিয়ে তাঁদের কথা শোনা; সেটা করা গেলে খুব ভালো হতো।

আজ বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) আয়োজিত ‘বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় আগামীর করণীয়’ শীর্ষক বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে ফরাসউদ্দিন এসব কথা বলেন। বইটি তাঁর লেখা।

ফরাসউদ্দিন বলেন, ‘আমি বড় অর্থনীতিবিদ নই। তবু মনে করি, প্রচলিত পথে দারিদ্র্য বিমোচনের পরিবর্তে শিল্পায়নের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনের পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।’

এ ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের পদ সাংবিধানিক করার প্রস্তাব দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন। তিনি বলেছেন, নিদেনপক্ষে গভর্নর পদে ছয় বছরের জন্য নিয়োগ দেওয়া সমীচীন। ফরাসউদ্দিন বাংলাদেশ ব্যাংকের জন্য পৃথক বেতনকাঠামো করার পক্ষে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা মসিউর রহমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ ও ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির উপাচার্য শামস্ রহমান। বিআইডিএসের মহাপরিচালক বিনায়ক সেন অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন।

ফরাসউদ্দিন বলেন, বাংলাদেশ অনেক দূর এগিয়েছে। কী করণীয়, কী বর্জনীয়—এসব বলার জন্যই এই বই লেখা হয়েছে।

ফরাসউদ্দিন আরও বলেন, ‘জিডিপির আকার যদি ৬০ বিলিয়ন ডলার থেকে ৪৬০ বিলিয়ন ডলার হয়ে থাকে, মাথাপিছু আয় যদি বেড়ে থাকে, তাহলে রাজস্ব আয় কেন বাড়বে না; আমার কাছে এটা বড় সমস্যা বলে মনে হয়।’

‘বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় আগামীর করণীয়’ শীর্ষক বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে (বাঁ থেকে) প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা মসিউর রহমান, বিআইডিএসের মহাপরিচালক বিনায়ক সেন, বইয়ের লেখক মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদসহ অতিথিরা
ছবি–প্রথম আলো

বাজেটঘাটতি নিয়ে মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেন, অনেক উৎসের মতো বিদেশ থেকে ঋণ নিয়ে এই ঘাটতি পূরণ করা হয়; কিন্তু টাকার যখন অবমূল্যায়ন হয়, তখন দায় বেড়ে যায়। ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে সরকারের ঋণ নেওয়া শাঁখের করাতের মতো। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ দেওয়া হলে মূল্যস্ফীতি হবে, ব্যাংক থেকে দেওয়া হলে ব্যক্তি খাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

পেশাজীবীদের সবাই ঠিকমতো কর দেন বলে মনে করেন না ফরাসউদ্দিন। তিনি বলেন, কৃষি খাত এখন বাণিজ্যভিত্তিক হচ্ছে। দুই বছরের নোটিশ দিয়ে তাঁদেরও করের আওতায় আনা যেতে পারে।

এ ছাড়া সমীক্ষা করা ছাড়া সরকারি কোনো খাতে বিনিয়োগ করা উচিত নয় বলে মনে করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক এই গভর্নর।

মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেন, আড়াই থেকে তিন বছর ধরে সুদের হার ৯-৬ এবং বহুপক্ষীয় মুদ্রা বিনিময় হার থাকার কারণে অর্থনীতির যে ক্ষতি হয়েছে, তা থেকে বেরিয়ে আসতে অনেক সময় লাগবে। এ ধরনের বিনিময় হার বিশ্বের কোথাও নেই বলেও তিনি উল্লেখ করেন। ঋণখেলাপি ও মুদ্রা পাচারকারীরা একই সূত্রে গাঁথা। এসব সমস্যা প্রধানমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরতে পারলে তিনি সেগুলো দূর করার পদক্ষেপ নেবেন বলে মনে করেন ফরাসউদ্দিন।