দূতাবাসের কমার্শিয়াল উইংগুলো নিয়ে আলাদা সংস্থা প্রয়োজন: ইপিবি ভাইস চেয়ারম্যান
বিদেশে বিভিন্ন বাংলাদেশি দূতাবাসে থাকা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কমার্শিয়াল উইংগুলোকে একীভূত করে একটি স্বতন্ত্র ট্রেড প্রমোশন এজেন্সি বা বাণিজ্য উন্নয়ন সংস্থা গঠনের প্রস্তাব করেছেন রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হাসান আরিফ।
হাসান আরিফ বলেন, ‘আমাদের দেশের বাইরে বিভিন্ন দূতাবাসে কমার্শিয়াল উইং আছে। বিদ্যমান ব্যবস্থায় এই কমার্শিয়াল উইংগুলো কতটা কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে, তা নিয়ে একজন সাবেক কমার্শিয়াল কাউন্সিলর হিসেবে আমার নিজেরই সন্দেহ আছে। এ কারণে অন্যান্য দেশের মতো করে এসব কমার্শিয়াল উইংসহ ইপিবিকে একটি আলাদা ট্রেড প্রমোশন এজেন্সি করা সময়ের দাবি হয়ে গেছে।’
আজ বুধবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ে ‘রপ্তানি বৈচিত্র্যকরণ: চ্যালেঞ্জ ও করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে এ কথা বলেন মোহাম্মদ হাসান আরিফ। গোলটেবিল বৈঠক আয়োজনে সহায়তা করেছে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ।
গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথি ছিলেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী সদস্য নাহিয়ান রহমান, বার্জার পেইন্টসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রুপালি চৌধুরী, রেনাটার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ এস কায়সার কবির, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান ও সিইও আহসান খান চৌধুরী, দ্য হংকং অ্যান্ড সাংহাই ব্যাংকিং করপোরেশন (এইচএসবিসি) বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাহবুব উর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) সায়েমা হক বিদিশা, চামড়া পণ্য, জুতা উৎপাদন ও রপ্তানিকারক সমিতির (এলএফএমইএবি) সহসভাপতি মো. নাসির খান, বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. শাহজাহান চৌধুরী ও বাংলাদেশ প্লাস্টিক দ্রব্য প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সামিম আহমেদ।
ইপিবি ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, একজন কমার্শিয়াল কাউন্সিলর চার বছর (দূতাবাসে) কাজ করে কাজ শেখেন। এরপর দেশে ফিরে উপসচিব হিসেবে কৃষি মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব পালন করেন। অর্থাৎ আমাদের কমার্শিয়াল উইংগুলোতে কোনো রকম কার্যকর উন্নয়ন হচ্ছে না। ফলাফলও তাই খুবই দুর্বল।
জাপান এক্সটার্নাল ট্রেড অর্গানাইজেশন (জেট্রো), কোরিয়া ট্রেড-ইনভেস্টমেন্ট প্রমোশন এজেন্সি (কোট্রা) বা মালয়েশিয়া এক্সটার্নাল ট্রেড ডেভেলপমেন্ট করপোরেশনের (ম্যাট্রেড) মতো বাংলাদেশেও একটি স্বতন্ত্র ট্রেড প্রমোশন এজেন্সি করার সময় হয়েছে বলে জানান মোহাম্মদ হাসান আরিফ। তিনি বলেন, এই সংস্থা ইপিবি ও কমার্শিয়াল উইংগুলোকে সমন্বয় করে এবং বিদেশে অবস্থান করে শুধু বাণিজ্য ও বিনিয়োগ প্রমোশনের কাজ করবে। বেসরকারি খাতকে কীভাবে এই প্রক্রিয়ায় যুক্ত করা যায়, সেটিও গুরুত্বসহকারে ভাবতে হবে।
রপ্তানিবিরোধী মনোভাব দূর করতে হবে
নতুন বাজার খুঁজে বের করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মন্তব্য করেন ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হাসান আরিফ। তিনি বলেন, পণ্য বৈচিত্র্যকরণের পাশাপাশি নতুন বাজার শনাক্ত করা এবং পণ্যের চাহিদার সঙ্গে মিল রেখে রপ্তানি বাড়ানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাজার অনুসন্ধানে সরকার, ইপিবি এবং উদ্যোক্তাদের যৌথভাবে এগোতে হবে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মেলায় অংশগ্রহণ ও ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদলের সফর করতে হবে। যে অঞ্চলগুলোতে এখনো আমরা খুব বেশি প্রবেশ করতে পারিনি, বিশেষ করে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য, আসিয়ান বা দক্ষিণ আমেরিকার মতো দেশগুলোতে নজর দেওয়া প্রয়োজন।
তৈরি পোশাক পণ্য নিয়েও নতুন করে ভাবার পরামর্শ দেন ইপিবি ভাইস চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, তৈরি পোশাক রপ্তানি কি শুধু যুক্তরাষ্ট্র বা ইইউর ওপর নির্ভর থাকবে, নাকি নতুন বাজার খুঁজবে, সেটি ভাবতে হবে। হাই ভ্যালু প্রোডাক্ট ও ম্যানমেড ফাইবারের দিকে রূপান্তরের মাধ্যমেও তৈরি পোশাক খাতে বৈচিত্র্য আনতে হবে।
হাসান আরিফ বলেন, একজন ভোক্তা হিসেবে আমি চাইব দেশে ভালো মানের পণ্য কম দামে পাওয়া যাক। এর জন্য অর্থনীতিতে বিদ্যমান অ্যান্টি-এক্সপোর্ট বায়াস (রপ্তানিবিরোধী মনোভাব) দূর করা জরুরি। উদ্যোক্তাদের বৈশ্বিকভাবে প্রতিযোগিতাপূর্ণ পণ্য তৈরি করতে হবে। তাতে একদিকে রপ্তানি বাড়বে, অন্যদিকে দেশীয় ভোক্তাও উপকার পাবে।