হিমাগারের আলুতে লোকসান গুনছেন কৃষক ও ব্যবসায়ীরা

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, উৎপাদন থেকে সংরক্ষণ পর্যন্ত প্রতি বস্তা আলুতে খরচ হয়েছে ১ হাজার ১১০ থেকে দেড় হাজার টাকা।

আলু
ছবি: সংগৃহীত

বগুড়া ও জয়পুরহাটের হিমাগারে গত রোববার প্রতি কেজি আলুর পাইকারি দাম ছিল ১৬ টাকা। কিন্তু উৎপাদন থেকে হিমাগারে রাখা পর্যন্ত এক কেজি আলুর পেছনে কৃষক ও ব্যবসায়ীর খরচ পড়েছে গড়ে ১৯ টাকা। তাতে হিমাগারে আলু রেখে কৃষক ও ব্যবসায়ীরা কেজিতে ৩ টাকা লোকসান গুনছেন।

বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের হিসাব অনুযায়ী, বগুড়া-জয়পুরহাটের ৫৫টি হিমাগারে এবার ৫ লাখ মেট্রিক টনের বেশি আলু সংরক্ষণ করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ১ লাখ মেট্রিক টন বীজ আলু।

বাকি প্রায় ৪ লাখ মেট্রিক টন (প্রতি টনে ১ হাজার কেজি) আলু বিক্রির জন্য রাখা। গত রোববারের বাজারমূল্য ধরে হিসাব করলে তাতে দুই জেলার আলুচাষি ও ব্যবসায়ীরা (কেজিতে ৩ টাকা হিসাবে) ১২০ কোটি টাকা লোকসানের মুখে আছেন। দামের হেরফেরে লোকসানের অঙ্কও ওঠানামা করবে।

বিগত বছরগুলোতে ২০ আগস্টের মধ্যে সাধারণত হিমাগারে রাখা ৫০ ভাগ আলু বাজারে চলে যায়। কিন্তু এবার চাহিদা কমে যাওয়ায় এখন পর্যন্ত হিমাগার থেকে অর্ধেক আলুও বাজারে যায়নি।
মোজাম্মেল হক, সাধারণ সম্পাদক,বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন

বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার সাদুরিয়া এলাকার হিমাদ্রি কোল্ড স্টোরেজ ও বলরামপুর শাহ সুলতান হিমাগারে রাখা অ্যাসটরিক জাতের আলু প্রতি বস্তা (৬৫ কেজি) ১ হাজার ২০ টাকা, দেশি পাকরি আলু ১ হাজার ৪০০ ও ডায়মন্ড জাতের আলু ১ হাজার ১০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে গত রোববার।

অথচ অ্যাসটরিক জাতের আলু উৎপাদন থেকে শুরু করে হিমাগারে সংরক্ষণ পর্যন্ত প্রতি বস্তায় খরচ হয়েছে ১ হাজার ১১০ টাকা। পাকরি আলুর প্রতি বস্তায় খরচ হয় ১ হাজার ৫০০ টাকা ও ডায়মন্ড জাতের আলুতে প্রতি বস্তায় খরচ হয় ১ হাজার ৩০০ টাকা।

হিমাগারে দাম কম থাকলেও বগুড়ার ফতেহ আলী বাজারের রোববার প্রতি কেজি অ্যাসটরিক ও দেশি পাকরি আলু বিক্রি হয়েছে যথাক্রমে ৩০ ও ৩৫ টাকায়। তাতে অ্যাসটরিক আলুর ৬৫ কেজির বস্তার দাম দাঁড়ায় ১ হাজার ৯৫০ টাকা ও পাকরি আলুর ক্ষেত্রে এ দাম ২ হাজার ২৭৫ টাকা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণেই দামের এ ব্যবধান।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) ৩০টিসহ সারা দেশে ৪০৮টি হিমাগারে এ বছর ৪০ লাখ মেট্রিক টন আলু সংরক্ষণ করা আছে। যার মধ্যে রোববার পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে প্রায় ৩৫ ভাগ।

বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক মো. এনামুল হক জানান, এ বছর রেকর্ড আলু উৎপাদিত হয়েছে। বগুড়ায় ৫৭ হাজার ৫০৭ হেক্টর জমিতে ১১ লাখ ২‌১ হাজার মেট্রিক টন আলু উৎপাদিত হয়েছে। এ জেলায় আলুর বার্ষিক চাহিদা প্রায় ৪ লাখ টন। এর মধ্যে জেলার ৩৭টি হিমাগারে ৫ লাখ ৫১ হাজার টন আলু সংরক্ষণে রয়েছে। বাকি আলু দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হয়েছে। তবে তা অন্যান্যবারের তুলনায় কম।

বগুড়ার দুটি হিমাগারে ৩৫০ বস্তা আলু রেখেছিলেন শিবগঞ্জের ঝালখুর গ্রামের আলুচাষি নাজমুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘এক বস্তা অ্যাসটরিক আলু হিমাগারে সংরক্ষণে খরচ হয়েছে ১ হাজার ১১৫ টাকা। আর হিমাগার পর্যায়ে রোববার প্রতি বস্তা আলুর দাম ছিল ১ হাজার ৩০ টাকা। তাতে প্রতি বস্তায় লোকসান ৮৫ টাকা।

বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোজাম্মেল হক প্রথম আলোকে বলেন, বিগত বছরগুলোতে ২০ আগস্টের মধ্যে সাধারণত হিমাগারে রাখা ৫০ ভাগ আলু বাজারে চলে যায়। কিন্তু এবার চাহিদা কমে যাওয়ায় এখন পর্যন্ত হিমাগার থেকে অর্ধেক আলুও বাজারে যায়নি।

হিমাদ্রি কোল্ড স্টোরেজের ব্যবস্থাপক মোস্তফা কামাল মনে করেন, এ বিপর্যয় ঠেকাতে আলু প্রক্রিয়াজাত কারখানার সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি রপ্তানির উদ্যোগ নেওয়া দরকার।

কালাই উপজেলার পুনট কোল্ড স্টোরেজের ব্যবস্থাপক বিপ্লব কুমার ঘোষ বলেন, বাজারে সব সবজির দাম চড়া, শুধু আলুর দাম কম। দুই মাস ধরেই আলুর বাজার ওঠানামা করছে। এ কারণে হিমাগারের আলু খুব বেশি বিক্রি হচ্ছে না। অথচ বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের কারণে হিমাগারের আলু সংরক্ষণের খরচ অনেক বেড়ে গেছে।