স্বচ্ছতা, সুশাসন, সক্ষমতার অভাবই আর্থিক খাতের প্রধান সমস্যা

বিআইডিএসের আয়োজনে তিন দিনব্যাপী উন্নয়ন সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারসহ অন্যরা। বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি হোটেলেছবি: প্রথম আলো

দেশে আর্থিক খাতে এখন যে সমস্যা তৈরি হয়েছে, তার মূল কারণ হিসেবে বৈশ্বিক ঘটনাকে দায়ী করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, করোনার প্রভাব আর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এ খাতের সমস্যা তৈরি করেছে। কিন্তু অনেক আগে থেকেই আর্থিক খাতে তিনটি সমস্যা বিদ্যমান। প্রথমত, স্বচ্ছতা; দ্বিতীয়ত, সুশাসন ও তৃতীয়ত, সক্ষমতার অভাব। এসব সমস্যা পুঞ্জীভূত হয়েই মূলত বর্তমান সমস্যা তৈরি করেছে।

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) তিন দিনব্যাপী বার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধনী দিনের একটি কর্ম–অধিবেশনে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ এসব কথা বলেন। রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে এ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

উদ্বোধনী দিনের শেষ ভাগে বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে সম্প্রতি প্রকাশিত তিনটি বইয়ের ওপর আলোচনা অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সভার মূল আলোচনা পর্বে বক্তব্য দেন বিআইডিএসের তিন সাবেক মহাপরিচালক কাজী শাহাবুদ্দিন, মোস্তফা কে মুজেরি এবং কে এ এস মুর্শিদ। এ ছাড়া বক্তব্য দেন যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্রেচক্লাইট বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক মোজাম্মেল হক।

আরও পড়ুন

বক্তারা তাঁদের বক্তব্যে ব্রিটিশ শাসনামল থেকে পাকিস্তান শাসনামল হয়ে বাংলাদেশ পর্যন্ত অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধরন এবং পথপরিক্রমা তুলে ধরেন। তাঁরা বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর দেশের নতুন উদ্যোক্তাশ্রেণি সাহস নিয়ে নতুন নতুন শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে। অনেক প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক, ওষুধ ও সেবাপণ্য রপ্তানি করছে। দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারও বড় হয়েছে।

অধিবেশনে মূল আলোচনা শেষে প্রশ্নোত্তর পর্বে একজন প্রশ্ন করেন, দেশের অর্থনীতির এত উন্নতির পরও আমরা দেখি কোথাও কোথাও ‘অন্ধ গহ্বর’ তৈরি হয়ে আছে। তাহলে কি অর্থনীতির সব অর্জন নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে। আর দেশের রাজনীতিবিদ ও আমলারা অর্থনীতিবিদ হয়ে উঠছেন। তাঁরা দেশের অর্থনীতির গতিপ্রকৃতি নির্ধারণ করে দিচ্ছেন। এ পরিস্থিতিতে অর্থনীতিবিদের ভূমিকা কী হওয়া উচিত।

আরও পড়ুন

জবাবে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আজ সকাল থেকে গণমাধ্যমকর্মীরা দেশের ব্যাংক ও আর্থিক খাতের কেলেঙ্কারি নিয়ে আমাকে একের পর এক প্রশ্ন করছেন। এসব প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে আমি ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। তবে হ্যাঁ, দেশের অর্থনীতি খাদের মধ্যে না পড়লেও তা খাদের কিনারে এসে দাঁড়িয়েছে।’ তিনি বলেন,  আমলারা সব সময় সরকারকে বোঝাতে চান, কোথাও কোনো সমস্যা নেই, সব ঠিক আছে।

সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, সংকট উত্তরণে শুধু আমলাদের কথা শুনলে হবে না। অর্থনীতিবিদদের কথাও শুনতে হবে। আর দেশের ব্যাংকিং খাতে সমস্যা হলে সেই সমস্যা সমাধানে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিতে হবে।  
অনুষ্ঠানে কাজী শাহাবুদ্দিন বলেন, দেশের অর্থনীতিতে অনেক অগ্রগতি হয়েছে এটা ঠিক। তবে দেশে আঞ্চলিক বৈষম্য রয়ে গেছে।

মোস্তফা কে মুজেরি বলেন, আমাদের দেশে কৃষি খাত এখনো অনেক গুরুত্বপূর্ণ। অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে সংযোজন খাত বড় ভূমিকা রাখতে শুরু করেছিল। কিন্তু সেবা খাত এখন বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। তবে শুধু সেবা খাত দিয়ে অর্থনীতি বেশিদূর এগোবে না।  

কে এ এস মুর্শিদ বলেন, স্বাধীনতার আগে অর্থনীতির প্রধান শক্তি ছিল ধান-চাল। স্বাধীনতার আগেও স্কয়ারের মতো অনেক শিল্পগোষ্ঠী ছিল। কিন্তু স্বাধীনতার পর রাজনৈতিক ক্ষমতা বাংলাদেশিদের হাতে আসায় দেশীয় শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো বড় হওয়ার সুযোগ পায়। আর গ্রামীণ উন্নয়নে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলোর ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।