খোলাবাজারে ডলারের দামে রেকর্ড হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর মানি এক্সচেঞ্জ ও খোলাবাজারে প্রতি ডলার সর্বোচ্চ ১১২ টাকায় কেনাবেচা হয়েছে। তবে গত রাতে তা ১০৯ টাকায় নেমে আসে। হঠাৎ এক দিনের ব্যবধানে ডলারের দাম আট টাকা বেড়ে যাওয়ার কোনো কারণ খুঁজে পাচ্ছেন না খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তাঁরা বলছেন, গুজব ছড়িয়ে ডলারের দাম বাড়ানো হচ্ছে।
খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ডলারের দাম আরও বাড়বে, এমন আতঙ্ক ছড়িয়ে একটি পক্ষ দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। তাতে কেউ কেউ প্রয়োজন না থাকলেও ডলার কিনছেন। আবার বিদেশি এক্সচেঞ্জ হাউস ডলার ধরে রেখে দাম বাড়ানোর চেষ্টা করছে। এ জন্য দাম বেড়ে গেছে। তাই খোলাবাজারে ডলারের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি রোধে অবৈধ মানি এক্সচেঞ্জ ও খোলাবাজারে ডলার কেনাবেচা বন্ধ করতে হবে।
এদিকে ব্যাংকগুলো গতকাল প্রবাসী আয় আনতে ডলারপ্রতি ১০৫ টাকার বেশি দাম দিয়েছে, এটি সাম্প্রতিক সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ। ফলে আমদানিকারকদেরও বাড়তি দাম দিয়ে আমদানি দায় শোধ করতে হয়েছে। জানা গেছে, প্রথম প্রজন্মের কয়েকটি ব্যাংক গতকাল প্রবাসী আয় আনতে ডলারপ্রতি ১০৩ টাকা দাম দেয়। তবে এই দামে কোনো ডলার পায়নি তারা। যেসব ব্যাংক ১০৫ টাকার বেশি দাম দিয়েছে, শুধু তারাই ডলার পেয়েছে। ফলে আমদানিকারকদের প্রতি ডলারের জন্য ১০৬-১০৭ টাকা পরিশোধ করে আমদানি বিল শোধ করতে হয়েছে। এই সুযোগে মুনাফার আশায় অনেক রপ্তানিকারকও ডলার ধরে রাখার চেষ্টা করছে।
ডলার–সংকট প্রকট হলেও বাংলাদেশ ব্যাংক গতকাল ডলারের দামে কোনো পরিবর্তন করেনি। গতকাল কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতি ডলার ৯৪ টাকা ৭০ পয়সা দামে ৫ কোটি ডলার বিক্রি করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বাজার বিবেচনা করে ডলারের দামে কোনো পরিবর্তন করা হয়নি। আগের দামে ডলার বিক্রি করা হয়েছে।
গতকাল রাজধানীর মতিঝিল ও গুলশানের মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতি ডলার কিনেছে ১০৯ টাকা ৫০ পয়সায়। সাধারণত এসব প্রতিষ্ঠান বিদেশফেরত ব্যক্তি ও পর্যটকদের কাছ থেকে ডলার সংগ্রহ করে। এসব প্রতিষ্ঠান গতকাল প্রতি ডলার বিক্রি করেছে ১১০ টাকা থেকে ১১২ টাকায়। তবে মূল্যবৃদ্ধির কারণে খুব বেশি কেনাবেচাও হয়নি।
গুলশানের রাতুল মানি চেঞ্জারের মালিক সাইফুল ইসলাম গত রাতে প্রথম আলোকে বলেন, দিনে প্রতি ডলারের দাম ১১২ টাকায় উঠেছিল। আর রাতে বিক্রি হয়েছে ১১০ টাকায়।
ব্যাংকে ডলারের দাম বাড়ার সঙ্গে খোলাবাজারের দামের কোনো সম্পর্ক নেই। খোলাবাজারে দাম বেড়ে গেলে অবৈধ পথে প্রবাসী আয় আসা বেড়ে যায়। আবার অবৈধ পথে আয় আসা বেড়ে গেলে অর্থ পাচারও বেড়ে যায়। ফলে অর্থনীতি চাপে পড়ায় কেউ সুযোগ নিচ্ছে কি না, তা–ও খতিয়ে দেখা প্রয়োজন বলে মনে করেন ব্যাংক খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
বাংলাদেশে ডলারের সংকট শুরু হয় গত বছরের নভেম্বর-ডিসেম্বরে। ওই সময় ডলারের দাম ধরে রাখে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ফলে আয় পাঠাতে অবৈধ পথ বেছে নেন অনেক প্রবাসী। ওই সময় কিছু আমদানিকারক আমদানি দায় পরিশোধের সময় ছয় মাস পিছিয়ে দেন, যা পরিশোধের সময় হয় চলতি বছরের মে মাসে। আবার মে মাসে দেশে প্রবাসী আয় কমে যায়।