গণমাধ্যম ও গবেষকের স্বাধীনতা সরকারের অগ্রাধিকার হওয়া উচিত

সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের বই প্রকাশনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত লেখকসহ অন্যান্য আলোচকেরা। সোমবার রাজধানীর গ্রিন রোডে ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড (ইউপিএল) কার্যালয়েছবি –বিজ্ঞপ্তি

রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো রওনক জাহান বলেছেন, গণমাধ্যম, গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও একাডেমিক ব্যক্তিদের কাজের সুরক্ষা দেওয়া সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকার হওয়া প্রয়োজন।

রওনক জাহান বলেন, দেশে মানুষ অনেক ‘সেলফ সেন্সর’ (নিজ থেকেই তথ্য প্রকাশ বা মতামত দিতে বিরত থাকা) করছে। তারপরও ব্যাংক কেলেঙ্কারি ও অর্থ পাচারের মতো নানা দুর্নীতির কথা সামনে আসছে। সেগুলো তো সরকার প্রকাশ করেনি। এসব ঘটনা জানার জন্য গণমাধ্যম ও গবেষকদের পূর্ণ স্বাধীনতা নিশ্চিত করা জরুরি; যাতে তাঁরা যা দেখেন, তা লিখতে পারেন।

রাজধানীর গ্রিন রোডে আজ সোমবার অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের ‘বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় আগামীর করণীয়: জাতীয় সপ্তবার্ষিক কর্মপরিকল্পনার একটি প্রস্তাবিত রূপরেখা’ বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন রওনক জাহান।

ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড (ইউপিএল) থেকে বইটি প্রকাশিত হয়েছে। এ বইয়ে অর্থনীতি, রাজনীতি, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাসহ বিভিন্ন খাতে আজকের বাংলাদেশের করণীয় বিষয়ে নিজের অভিমত তুলে ধরেন মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন।

অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে রওনক জাহান বলেন, ঋণখেলাপির সংস্কৃতি নিয়ে আশির দশক থেকে বিশিষ্টজনেরা বলে আসছেন। ব্যাংকিং কমিশন গঠনের বিষয়েও প্রায় এক দশক আগে বলা হয়েছে। অথচ কোনো অগ্রগতি হয়নি। আবার সরকারও অনেক সময় কিছু ভালো উদ্যোগের কথা বলেছে, তবে বাস্তবায়ন করতে পারেনি। তার মানে সরকারে ভালো কাজ করতে চাইলেও প্রভাবশালী গোষ্ঠীর বাধা অতিক্রম করতে পারছে না। তিনি বলেন, এই প্রভাবশালী গোষ্ঠীকে দমনের কৌশল নিয়ে ভাবতে হবে। তা না হলে ভালো ইচ্ছার তালিকা লম্বা হতে থাকবে; এর বেশি কিছু হবে না।

সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের বই প্রকাশনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত লেখকসহ অন্যান্য আলোচকেরা। সোমবার রাজধানীর গ্রিন রোডে ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড (ইউপিএল) কার্যালয়ে
ছবি –বিজ্ঞপ্তি

রওনক জাহান বলেন, ‘খারাপ লোকের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিয়েও নির্বাচনে জেতা যায়, ক্ষমতায় থাকা যায়, সেটা আমাদের ভাবতে হবে।’

সরকার নীতি নিলেও তার ঠিকভাবে বাস্তবায়ন হয় না উল্লেখ করে রওনক জাহান বলেন, নিজেদের ইচ্ছেমতো পরে তা ঘুরিয়ে দেওয়া হয়। এর একটা ভালো উদাহরণ হতে পারে তত্ত্বাবধায়ক সরকার। এ পদ্ধতির মূলনীতি ছিল নির্দলীয় রাখা। তবে কিছুদিন পর এখানেও দলীয়করণের চেষ্টা শুরু হয়।

অনুষ্ঠানে মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেন, দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সর্বজনীন নয়। দেশে আড়াই কোটি লোকের কর দেওয়ার কথা। এর মধ্যে ৮৭ লাখ অতিধনী; যাঁদের মাত্র ৯ লাখ কর দেন।

বাংলাদেশে অন্যান্য দেশের তুলনায় বৈষম্য কম থাকলেও এখানে ধনীরা অনেক বেশি ধনী হয়েছেন বলে উল্লেখ করেন মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের কাউন্সিল অব ইকোনমিক অ্যাডভাইজারসের আদলে বাংলাদেশে সরকারের আস্থাভাজন কারও নেতৃত্বে একটি কমিশনের মতো গঠন করা যেতে পারে বলে মত দেন।

আলোচক হিসেবে অর্থনীতিবিদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আবদুল বায়েস বলেন, ফরাসউদ্দিনের এই বই সহজেই নীতিনির্ধারকদের কাছে পৌঁছে যাবে। মূল্যস্ফীতি, টিসিবির ভূমিকা, সমবায় পদ্ধতি, দুর্নীতি, ঋণখেলাপি সংস্কৃতি দূর করা, ধনীদের থেকে কর আদায় বাড়ানোসহ ১৪টি বিষয়ে বইটিতে লেখা হয়েছে।

একাত্তর টেলিভিশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোজাম্মেল বাবু অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের বইটিকে চলমান সময়ের করণীয় বিষয়ে একটি নির্বাহী সারসংক্ষেপ বলে উল্লেখ করেন।