বেচাকেনায় ভরসা ছুটির দিন, ক্রেতা টানতে মূল্যছাড়

গ্রাহক টানতে বিভিন্ন পণ্যে ১০ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দিচ্ছে মেলায় অংশ নেওয়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। 

  • ছুটির দিন ছাড়া মেলায় দর্শক–ক্রেতাদের উপস্থিতি কম।

  • নতুন ভেন্যুতে বেচাকেনা আগের চেয়ে অনেক কম হচ্ছে বলে বিক্রেতাদের অভিযোগ।

ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার অন্যতম আকর্ষণ বিভিন্ন দেশের বাহারি কার্পেট। গতকাল মেলার এক বিক্রয়কেন্দ্রে কার্পেট দেখছেন ক্রেতারা
ছবি: প্রথম আলো

রাজধানীর অদূরে পূর্বাচলে আয়োজিত বাণিজ্য মেলার এবারের আসরের প্রথম পাঁচ দিনে ক্রেতা-দর্শনার্থী ছিল প্রায় ৬০ হাজার। আর গত শুক্র ও শনিবার—এই দুই দিনে মেলায় উপস্থিতি ছিল লক্ষাধিক। এর পরের তিন দিনে আবার ক্রেতা-দর্শনার্থী কমেছে। ফলে সপ্তাহের ছুটির দিনগুলোই যেন বেচাকেনার মূল ভরসা মেলায় অংশ নেওয়া ব্যবসায়ীদের কাছে।

এ ছাড়া গ্রাহক টানতে দেওয়া হচ্ছে বিশেষ মূল্যছাড়। আসবাব, ইলেকট্রনিক, হোম টেক্সটাইল, ক্রোকারিজ, পোশাক, প্লাস্টিক, সুগন্ধিসহ বিভিন্ন পণ্যে ১০ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দেওয়া হচ্ছে মেলায়। তাই মূল্যছাড়ে পণ্য কিনতে গ্রাহকেরাও আগ্রহী হচ্ছেন।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত সপ্তাহে রাজধানীসহ সারা দেশে তীব্র শীত থাকায় মেলায় উপস্থিতি খুবই কম। তাই আশানুরূপ বিক্রি হয়নি। তবে শুক্র ও শনিবার শীত উপেক্ষা করে বিপুলসংখ্যক ক্রেতা-দর্শনার্থী মেলায় এসেছেন।

‘শুক্রবার থেকে মেলায় দর্শনার্থীর সমাগম বাড়ছে। আমাদের হিসাবে শুক্রবারে দেড় লাখের মতো দর্শনার্থী মেলায় ভিড় করেন। আবহাওয়া স্বাভাবিক থাকলে আগামী শুক্রবার উপস্থিতি দুই লাখ ছাড়াবে বলে আশা করছি।’
ইফতেখার আহমেদ, মেলার পরিচালক

মেলার পরিচালক ইফতেখার আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘শুক্রবার থেকে মেলায় দর্শনার্থীর সমাগম বাড়ছে। আমাদের হিসাবে শুক্রবারে দেড় লাখের মতো দর্শনার্থী মেলায় ভিড় করেন। আবহাওয়া স্বাভাবিক থাকলে আগামী শুক্রবার উপস্থিতি দুই লাখ ছাড়াবে বলে আশা করছি।’

বাণিজ্য মেলার দিল্লি অ্যালুমিনিয়ামের স্টলে ঢুকতেই দেখা গেল গ্রাহকদের উপচে পড়া ভিড়। তবে গত সপ্তাহে তীব্র শীতের কারণে স্টলে অনেকটা বিপরীত চিত্রই ছিল বলে জানান প্রতিষ্ঠানটির মহাব্যবস্থাপক মো. এয়াছিন গণি। তিনি বলেন, ‘এবারের বাণিজ্য মেলার প্রথম সপ্তাহে আমরা এক প্রকার হতাশই ছিলাম। শুক্রবার বিক্রি বাড়তে শুরু করেছে।’

পণ্যভেদে ৫ থেকে ১০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড়ে মেলায় আসবাব বিক্রি করছে হাতিল ফার্নিচার। প্রতিষ্ঠানটি শুক্র ও শনিবার ২০ লাখ টাকার পণ্য বিক্রি করেছে। মেলার শেষ দিকে বেচাবিক্রি আরও বাড়বে বলে আশা করছেন হাতিলের কর্মীরা।

মেলায় এক্সক্লুসিভ হোমটেক্সের স্টলে মিলছে বিছানার চাদর ও কমফোর্টার। স্টলটিতে সর্বনিম্ন ২০০ থেকে সর্বোচ্চ ৪ হাজার টাকার পণ্য বিক্রি হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির বিক্রয়কর্মী মো. রয়েল বলেন, ‘গ্রাহকদের মধ্যে হোম টেক্সটাইল পণ্যের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। আমরাও গ্রাহক টানতে পাইকারি দরে এসব পণ্য বিক্রি করছি।’

মেলায় বিভিন্ন ধরনের আতর, পারফিউম ও সুগন্ধি ছড়ানোর ইলেকট্রিক বার্নার বিক্রি করছে মাশহুর বিডি নামে একটি প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটির মালিক মো. সোহেল আহমেদ বলেন, ‘আমাদের কাছে ওরিয়েন্টাল (মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক) ও ফ্রেঞ্চ ধরনের অ্যালকোহলমুক্ত পারফিউম ও আতর রয়েছে। এসব পণ্যে ১০ শতাংশ পর্যন্ত মূল্যছাড় দেওয়া হচ্ছে।’

মেলায় ওয়ালটনের স্টলে প্রদর্শন করা হচ্ছে বিভিন্ন প্রযুক্তিপণ্য। প্রতিষ্ঠানটির সহকারী ব্যবস্থাপক সঞ্জিত গুহ বলেন, ‘আমরা মেলায় কোনো পণ্য বিক্রি করছি না। বাজারে ওয়ালটনের নতুন প্রযুক্তির যেসব পণ্য আসছে, সেগুলো সম্পর্কে গ্রাহকদের জানানোই আমাদের মূল উদ্দেশ্য।’

স্থান পরিবর্তন করে গত বছর থেকে পূর্বাচলে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী প্রদর্শনী কেন্দ্রে (বিবিসিএফইসি) অনুষ্ঠিত হচ্ছে বাণিজ্য মেলা। নতুন স্থানে গত বছর প্রথমবারের মতো আয়োজিত এই মেলায় দেশি-বিদেশি অনেক প্রতিষ্ঠানই অংশ নেয়নি। তবে এবার সে সংখ্যা কিছুটা বেড়েছে।

এর মধ্যে একটি ভারতের দিল্লির তারিক কার্পেট ইন্ডাস্ট্রিজ। প্রতিষ্ঠানটি উলেন ও সিল্ক ধরনের কার্পেট বিক্রি করছে। এতে মূল্যছাড় দিচ্ছে সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ পর্যন্ত। জানতে চাইলে কোম্পানির ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ আয়াজ বলেন, ‘প্রথম ১০ দিনে তো বেচাকেনা ভালো হয়নি। সাধারণত আমাদের ব্যবসা হয় মেলার শেষ ১০ দিনে। এবারও সেই আশায় আছি।’

তবে মেলার পুরোনো ভেন্যু রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের তুলনায় পূর্বাচলের মেলায় অনেক কম বিক্রি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন অনেক বিক্রেতা। ব্লেজারের দোকান দেশ কালেকশনের স্টল ব্যবস্থাপক মইনুদ্দিন চঞ্চল জানান, ‘এবারের মেলার প্রথম ৯ দিনে প্রায় আড়াই লাখ টাকার পণ্য বিক্রি করেছি। অথচ শেরেবাংলা নগরে যখন মেলা হতো, তখন শুরুর দিনগুলোতে সাত-আট লাখ টাকার বিক্রি হতো।’