২০২৩ সালে কেমন যাবে সাত খাতের ব্যবসা

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হলে বিশ্ব অর্থনীতির অবস্থাও ভালো থাকবে না, এটাই স্বাভাবিক। এই বাস্তবতায় বিশ্বের প্রায় সব সংস্থা বিশ্ব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমিয়ে দিয়েছে। বিশ্বখ্যাত ম্যাগাজিন দ্য ইকোনমিস্ট–এর গবেষণা ও বিশ্লেষণবিষয়ক বিভাগ ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট সম্প্রতি আগামী বছরের বিশ্ব অর্থনীতির সাতটি খাত ধরে বিস্তৃত পূর্বাভাস দিয়েছে।

কোভিডের ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই গত ফেব্রুয়ারিতে শুরু হলো রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। ফলে ২০২০ ও ২০২১ সালে যেমন বিশ্ব গণমাধ্যমের বড় অংশ জুড়ে ছিল কোভিড, ২০২২ সালে দ্রুতই সেই জায়গা নিয়ে নিল যুদ্ধের খবর। যুদ্ধ শেষ হওয়ার কোনো লক্ষণ এখনো দেখা যাচ্ছে না। যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হলে বিশ্ব অর্থনীতির অবস্থাও ভালো থাকবে না, এটাই স্বাভাবিক। এই বাস্তবতায় বিশ্বের প্রায় সব সংস্থা বিশ্ব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমিয়ে দিয়েছে। বিশ্বখ্যাত ম্যাগাজিন দ্য ইকোনমিস্ট–এর গবেষণা ও বিশ্লেষণবিষয়ক বিভাগ ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট সম্প্রতি আগামী বছরের বিশ্ব অর্থনীতির সাতটি খাত ধরে বিস্তৃত পূর্বাভাস দিয়েছে।

ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (ইআইইউ) বলছে, ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধ ও চীনের বিভিন্ন অঞ্চলে লকডাউনসহ শূন্য কোভিড নীতির কারণে বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সে কারণে তারা বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস হ্রাস করতে বাধ্য হয়েছে।

উচ্চ মূল্যস্ফীতি সম্পর্কে ইআইইউ বলেছে, এর জেরে বিভিন্ন দেশের সরকার জনসেবামূলক কাজে যথাযথ বিনিয়োগ করতে পারবে না। স্বাস্থ্যসেবা খাত মার খাবে বলেই তাদের ধারণা। তবে পরিবার ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোকে উচ্চ মূল্যস্ফীতির হাত থেকে বাঁচাতে গিয়েই এটি ঘটবে বলে মনে করা হচ্ছে।

উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে কিছু ব্যবসা-বাণিজ্য লাভবান হলেও অনেক প্রতিষ্ঠানের চাহিদা কমবে, তাতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে প্রতিষ্ঠানগুলো। এই বাস্তবতায় ব্যবসায়িক মুনাফা কমে যাবে এবং ক্রমবর্ধমান নীতি সুদহারের কারণে করপোরেট বিনিয়োগের গতি কমবে।

মহামারি করোনার ধাক্কায় মন্দা হওয়ার পর থেকে কোম্পানিগুলো অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের প্রত্যাশায় ছিল। পুনরুদ্ধার হয়েছে, কিন্তু সব খাত সমানভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। ২০২৩ সালে অটোমোবাইল ও পর্যটন খাত ২০১৯ সালের পর্যায়ে ফেরত যেতে পারবে না বলে পূর্বাভাস দিয়েছে ইন্টেলিজেন্স ইউনিট। এ ছাড়া খুচরা বিক্রয় ও স্বাস্থ্যসেবায় মানুষের ব্যয় বাড়বে ঠিকই, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এই দুটি খাতের প্রতিষ্ঠানের মুনাফা বাড়বে না; বরং অনেক ক্ষেত্রে কমবে। এদিকে জ্বালানি ও আর্থিক খাত যে ভূরাজনৈতিক সংকটের মুখে পড়েছে, তা এক বছর আগেও অচিন্তনীয় ছিল। এই বাস্তবতায় ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের পূর্বাভাস বলা হয়েছে, ২০২৩ সালে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়াতে পারে ১ দশমিক ৭ শতাংশ আর ২০২২ সাল শেষে এ প্রবৃদ্ধি দাঁড়াতে পারে ২ দশমিক ৬ শতাংশে।

আগামী বছর সাতটি খাতে কেমন যেতে পারে, তার পূর্বাভাস দিয়েছে ইকোনমিক ইন্টেলিজেন্স ইউনিট। এই খাতগুলো হলো—অটোমোবাইল, ভোগ্যপণ্য, খুচরা বিক্রয়, জ্বালানি, আর্থিক সেবা, স্বাস্থ্যসেবা ও পর্যটন খাত।

অটোমোবাইল খাত

অর্থনীতির অন্যান্য খাতের মতো অটোমোবাইল খাতের অবস্থাও খুব একটা ভালো যাবে না বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। তবে এর মধ্যে উজ্জ্বল ব্যতিক্রম হয়ে থাকবে বৈদ্যুতিক গাড়ি। জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলায় সারা বিশ্ব যখন জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে, তখন স্বাভাবিকভাবেই বৈদ্যুতিক গাড়ি বিক্রি বৃদ্ধি পাওয়ার কথা। প্রতিবেদনে সেই পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। ইআইইউর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালে বৈদ্যুতিক গাড়ি বিক্রি ২৫ শতাংশ বেড়ে দাঁড়াবে ১০ দশমিক ৭ মিলিয়ন বা ১ কোটি ৭ লাখ ইউনিটে। এ বিক্রি প্রাক্–মহামারি পর্যায়ের চেয়ে পাঁচ গুণ বেশি হবে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়। অন্যান্য খাতের মতো এ ক্ষেত্রেও নেতৃত্ব দেবে চীন। ২০২৪ সালে চীনের রাস্তায় বৈদ্যুতিক গাড়ির সংখ্যা বেড়ে দ্বিগুণ হয়ে যাবে, সংখ্যার হিসাবে তা দাঁড়াবে প্রায় দুই কোটিতে। বৈদ্যুতিক গাড়ি বিক্রি বৃদ্ধির পাশাপাশি চার্জিং স্টেশনে গাড়ির লাইনও দীর্ঘ হচ্ছে। চীনের চতুর্দশ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা অনুসারে, দেশটির সরকার ২০২৩ সালের মধ্যে সব জাতীয় মহাসড়কে চার্জিং স্টেশন স্থাপন করবে। সেটি হলে বৈদ্যুতিক গাড়ি নিয়ে এক প্রদেশ থেকে আরেক প্রদেশে যাওয়ার ক্ষেত্রে কোনো বাধা থাকবে না।

মহামারি করোনার ধাক্কায় মন্দা হওয়ার পর থেকে কোম্পানিগুলো অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের প্রত্যাশায় ছিল। পুনরুদ্ধার হয়েছে, কিন্তু সব খাত সমানভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। ২০২৩ সালে অটোমোবাইল ও পর্যটন খাত ২০১৯ সালের পর্যায়ে ফেরত যেতে পারবে না বলে পূর্বাভাস দিয়েছে ইন্টেলিজেন্স ইউনিট। এ ছাড়া খুচরা বিক্রয় ও স্বাস্থ্যসেবায় মানুষের ব্যয় বাড়বে ঠিকই, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এই দুটি খাতে মানুষের ব্যয় বাড়বে না; বরং অনেক ক্ষেত্রে কমবে।

‘নিও ’নামের বৈদ্যুতিক গাড়িবিষয়ক একটি স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠান ব্যাটারি অদলবদলের ব্যবস্থা তৈরির কাজ করছে। অর্থাৎ তারা বিভিন্ন মডেলের গাড়ি ও বিভিন্ন ভোল্টেজের ব্যাটারি সংরক্ষণ করবে। এর ফলে যে কেউ যেকোনো স্টেশনে গিয়ে নিজের গাড়ির ব্যাটারি বদলে আরেক মডেলের ব্যাটারি নিয়ে তাৎক্ষণিক যাত্রা করতে পারবেন। আর তাঁর রেখে যাওয়া ব্যাটারি সেখানে চার্জ হবে, এরপর অন্য কারও প্রয়োজন হলে সেই ব্যাটারি তিনি নিতে পারবেন, এ রকম একটি ইকোসিস্টেম তৈরি করছে স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠানটি।

তবে ২০২৩ সালে জ্বালানিসংকট, চাহিদা হ্রাস ও নানা ঝড়ঝঞ্ঝার কারণে অটোমোবাইল খাত দুর্বল হয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিশেষ করে সরবরাহব্যবস্থায় বিঘ্ন ঘটার কারণে এই শিল্প সংকটে পড়বে। এই বাস্তবতায় আগামী বছর বৈশ্বিক গাড়ি বিক্রির হার তেমন একটা বাড়বে না বলেই মনে করছে ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট। নতুন গাড়ি বিক্রি বাড়তে পারে শূন্য দশমিক ৯ শতাংশ আর নতুন বাণিজ্যিক গাড়ি বিক্রি বাড়তে পারে ১ দশমিক ৩ শতাংশ।

জ্বালানি খাত

এই মুহূর্তে বিশ্বের সবচেয়ে বহুল আলোচিত বিষয় জ্বালানি। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই বিশ্ববাজারে জ্বালানির দাম তরতর করে বাড়ছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে ডলারের দামও। এতে বিপদে পড়েছে জ্বালানি আমদানিকারক দেশগুলো। স্বাভাবিকভাবেই ২০২৩ সালেও জ্বালানির ব্যবহার খুব একটা বাড়বে না। বিপদের কথা হলো, গ্যাসের সরবরাহ সংকট ও জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে অনেক দেশ কয়লাসহ বিভিন্ন ধরনের জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার আবারও বৃদ্ধি করতে পারে। যেমন বাংলাদেশ কয়লাভিত্তিক রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প ও পরমাণু শক্তিভিত্তিক রূপপুর বিদ্যুৎ প্রকল্পের দিকে তাকিয়ে আছে। এ দুটি প্রকল্প থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হলে ডিজেল ও গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের চাহিদা কমবে। ফলে বেঁচে যাবে মূল্যবান ডলার। কিন্তু এসব কারণে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের যে ধারার সৃষ্টি হয়েছিল, অর্থাৎ জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার যে প্রক্রিয়া বিশ্ব সম্প্রদায় শুরু করেছিল, তা আবার ব্যাহত হবে।

এত কিছুর পরও ২০২৩ সালে বিশ্বের জ্বালানি ব্যবহার ১ দশমিক ৩ শতাংশ বাড়বে বলে ধারণা করছে ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট। ২০২২ সাল শেষে যার হার দাঁড়াবে শূন্য দশমিক ৯ শতাংশে।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর তেলের দাম অনেকটা বেড়ে গেলেও সম্প্রতি তা একরকম স্থিতিশীল অবস্থায় পৌঁছেছে। তবে ওপেক ও সহযোগী দেশগুলো তেলের দাম আর পড়তে দিতে চায় না, সে জন্য তারা উৎপাদন কমানোর বিষয়ে একমত হয়েছে। এদিকে রাশিয়ার ওপর পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞা এ বছরের শেষ নাগাদ পূর্ণাঙ্গ রূপ নেবে, ফলে সে দেশের তেল ও গ্যাস উৎপাদনে কমবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে চাহিদা কম থাকায় তেলের দাম হয়তো খুব বেশি বাড়বে না। ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের পূর্বাভাস, আগামী বছর ব্রেন্ট ক্রুড অয়েলের গড় দাম হবে ব্যারেলপ্রতি ৮৯ দশমিক ৬ ডলার।

ভোগ্যপণ্য ও খুচরা বিক্রয় খাত

এখন বিশ্বের সবচেয়ে বড় সমস্যা উচ্চ মূল্যস্ফীতি। সেই সঙ্গে মার্কিন ডলারের দর এখন গত কয়েক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। ফলে বিশ্বজুড়ে ভোগ্যপণ্য ও খুচরা বিক্রয় মূল্য মার্কিন ডলারের নিরিখে ৫ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে, কিন্তু বিক্রির পরিমাণ কমবে ও ক্রমবর্ধমান ব্যয়ের কারণে খুচরা বিক্রেতাদের মুনাফা কমে যাবে। খুচরা বিক্রেতারা শ্রমিকের খরচ কমাতে অটোমেশনের দিকে ছুটবেন। সেই সঙ্গে অনলাইন বিক্রি বাড়বে, ২০২৩ সালে যার হার থাকবে ২ অঙ্কের ঘরে। অন্যদিকে চীনের প্রবৃদ্ধির নিম্নগতির কারণে বৈশ্বিক বিলাসবহুল ব্র্যান্ডগুলো মার খাবে। ইন্টেলিজেন্স ইউনিট বলছে, চীনের শূন্য কোভিড নীতি এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অর্থনৈতিক শ্লথগতির কারণে পণ্যবাজার মার খাবে।

আবার চীনের এই শ্লথগতির কারণে বিশ্বের অন্যান্য বাজারও মার খাবে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৩ সালে বিশ্বের অতি ধনী জনগোষ্ঠীর ২৩ শতাংশের বসবাস হবে এশিয়া অঞ্চলে, যার এক-তৃতীয়াংশের বসবাস হবে চীনে। ফলে এ অঞ্চলের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে গেলে স্বাভাবিকভাবেই বিশ্বের বিলাসবহুল ব্র্যান্ডগুলো মার খাবে।

আর্থিক খাত

ক্রমবর্ধমান নীতি সুদহার এবং অর্থনৈতিক ক্ষতির কারণে সারা বিশ্বের ব্যাংক খাত ২০২৩ সালে আরও কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হবে। বিমা খাত, তহবিল ব্যবস্থাপনা—সব ক্ষেত্রেই এ পূর্বাভাস প্রযোজ্য। অন্যদিকে প্রযুক্তিভিত্তিক আর্থিক খাত ও ক্রিপ্টোকারেন্সি বিক্রেতারাও নতুন আর্থিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবেন। কারণ, বিনিয়োগকারীরা মুনাফার জন্য চাপ দেবেন।

ঝুঁকির কারণ হলো, রাশিয়ার ওপর বিভিন্ন পশ্চিমা দেশের নিষেধাজ্ঞা। এ কারণে সে দেশ থেকে পুঁজি বের করা যাচ্ছে না। বাধ্য হয়ে অনেক পশ্চিমা ব্যাংক ও আর্থিক কোম্পানি তাদের রাশিয়ার শাখা বিক্রি করে দিতে বাধ্য হচ্ছে বা ক্ষেত্রবিশেষে বন্ধ করে দিচ্ছে। অন্যদিকে পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলো মহাদেশজুড়ে রাশিয়ার বিভিন্ন ফার্মের কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে। এটা আর্থিক খাতের জন্য বড় ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অশনিসংকেত হলো, চীন যদি ২০২৩ সালে তাইওয়ান অধিগ্রহণ করে, তাহলে এই পরিস্থিতি আরও মারাত্মক আকার ধারণ করবে।

স্বাস্থ্যসেবা খাত

একদিকে উচ্চ মূল্যস্ফীতি, অন্যদিকে অর্থনীতির শ্লথগতি—দুই কারণে স্বাস্থ্যসেবায় মানুষের ব্যয় প্রকৃত অর্থে কমে যাবে বলেই আশঙ্কা করছে ইন্টেলিজেন্স ইউনিট। এ ছাড়া স্বাস্থ্যবিষয়ক তথ্যউপাত্ত ব্যবহারের ক্ষেত্রে আরও কঠোর বিধিনিষেধ আরোপিত হবে। ওষুধ খাত গভীর চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবে। একদিকে সরবরাহ খরচ বেড়ে যাওয়া, অন্যদিকে পেটেন্ট রাইট শেষ হয়ে যাওয়ার কারণে ওষুধ কোম্পানিগুলোর মুনাফার হার কমে যাবে বলে আশঙ্কা করছে ইন্টেলিজেন্স ইউনিট।

যুদ্ধের কারণে মহামারির খবর এখন আর তেমন গুরুত্ব পায় না। বিজ্ঞানীরা বলছেন, অমিক্রন সম্ভবত করোনাভাইরাসের শেষ রূপান্তর। তার মারণ ক্ষমতাও অনেক কমে এসেছে। কিন্তু এখন যাতায়াতে বিধিনিষেধ উঠে যাওয়ার কারণে করোনাভাইরাস আবারও ছড়াতে পারে। যাতায়াতে বিধিনিষেধ না থাকায় আগামী বছর চীনে কেবল অমিক্রনের কারণে বিপুলসংখ্যক মানুষের মৃত্যু হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ফলে চীন সরকার যে এখনো শূন্য কোভিড নীতিতে পরিচালিত হচ্ছে, তা একদম ভিত্তিহীন নয়। সে জন্য ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের পরামর্শ, চীনে করোনাভাইরাসের টিকা কার্যক্রম আবারও জোরদার করা। প্রয়োজনে স্থানীয় টিকা দিয়েই তা করতে হবে।

প্রযুক্তি খাত

২০২০ ও ২০২১ সালে অর্থনীতির অন্যান্য খাত মার খেলেও প্রযুক্তি খাত ভালো করেছে। কিন্তু ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, অর্থনীতিতে যে ঝোড়ো বাতাস বইছে, প্রযুক্তি খাতও তার বাইরে থাকবে না। এ খাতের কোম্পানিগুলো আগামী বছর মেটাভার্সে বিনিয়োগ বাড়াবে। সেই সঙ্গে স্ট্যান্ডার্ডাইজেশন ও নিয়ন্ত্রণ সংস্থাগুলোর সঙ্গে তাদের লড়াই চলবে। ২০২৩ সালে এশিয়ার টেলিযোগাযোগ খাত আরও সংহত হবে। শ্রীলঙ্কা, জাপান ও ভারতের কোম্পানিগুলো বড় ধরনের চুক্তি করবে।

তবে সাইবার হামলা বিশ্ব অর্থনীতির জন্য বড় ধরনের হুমকি হয়ে উঠতে পারে। বড় কোম্পানিগুলো এ হামলার শিকার হলে পরিস্থিতি গুরুতর হয়ে উঠবে। অধিকাংশ কোম্পানি ডিজিটাল রূপান্তরের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে, ফলে হ্যাকারদের কাজের আওতাও বাড়ছে। নরওয়েজীয় সভরিন ফান্ড কর্তৃপক্ষ বলছে, তারা প্রতিদিন গড়ে বড় ধরনের তিনটি সাইবার হামলা সামলাচ্ছে। অবকাঠামো ও স্বাস্থ্যসেবা খাত সাইবার হামলার বড় শিকার হতে পারে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে ইন্টেলিজেন্স ইউনিট। তারা বলছে, এ ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রক সংস্থার বড় ধরনের ভূমিকা পালনের অবকাশ আছে।

পর্যটন খাত

বিশ্বজুড়ে পর্যটন খাত গত বছর থেকে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। ২০২২ সালে এ খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬০ শতাংশ, ২০২৩ সালে এ খাতের ৩০ শতাংশ প্রবৃদ্ধির আশা করা হচ্ছে। তা সত্ত্বেও পর্যটন খাত প্রাক্‌মহামারি পর্যায়ে ফিরবে না। কারণ, রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা, চীনের শূন্য কোভিড নীতি, অর্থনীতির শ্লথগতি—এসব কারণে বিশ্বজুড়ে পর্যটকদের চলাচল ব্যাহত হবে। এর মধ্যেও বিমান সংস্থাগুলো মুনাফার ধারায় ফিরবে বলে জানিয়েছে ইন্টেলিজেন্স ইউনিট। বিশ্বজুড়ে উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধির দাবি জোরালো হচ্ছে। এতে হোটেল-রেস্তোরাঁয় শ্রমিকসংকট হতে পারে। এ ছাড়া ডলারের দরবৃদ্ধির কারণে বিশ্বের অধিকাংশ দেশের মানুষের ভ্রমণ আরও ব্যয়বহুল হবে। যুদ্ধের কারণে রাশিয়া-ইউক্রেনের মানুষ এ সময় ভ্রমণ করবেন না, এটাই স্বাভাবিক। তাই যুদ্ধের কারণে বিমানপথ সংকুচিত হবে—ভ্রমণকারীর সংখ্যা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে এটা নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।