খুলনা–সিলেট নতুন অর্থনৈতিক করিডরের প্রস্তাব এডিবির

দেশে অর্থনৈতিক করিডর গড়ে তোলা হলে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে। সেই সঙ্গে হবে বিপুলসংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থান।

এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মধ্যে অর্থনৈতিক করিডর তৈরি হলে ২০৫০ সাল নাগাদ করিডর অঞ্চলে ৭ কোটি ১৮ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হতে পারে। এই অঞ্চলে করিডরবিহীন অবস্থায় যে পরিমাণ মানুষের কর্মসংস্থান হতো, করিডর তৈরি হলে তার চেয়ে দুই দশমিক তিন গুণ বেশি মানুষের কর্মসংস্থান হবে।

‘বাংলাদেশ ইকোনমিক করিডর ডেভেলপমেন্ট হাইলাইটস’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরেছে এডিবি। বুধবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। বিশেষ অতিথি ছিলেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) অতিরিক্ত সচিব মোস্তাফিজার রহমান ও বাংলাদেশ ইকোনমিক জোনের (বেজা) চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) কান্ট্রি ডিরেক্টর অ্যাডিমন গিন্টিং। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সুন চ্যাং হোং। আলোচনা করেন এডিবির পরিচালক সব্যসাচী মিত্র, প্রাণ-আরএফএলের পরিচালক উজমা চৌধুরী ও পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান ড. মাসরুর রিয়াজ। সমাপনী বক্তব্য দেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী সদস্য অভিজিৎ চৌধুরী।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, সারা দেশেই সড়ক যোগাযোগব্যবস্থায় যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের যোগাযোগব্যবস্থারও উন্নতি হচ্ছে। তবে করিডর গঠনের ক্ষেত্রে তিনি রাজধানী ঢাকাকে এড়িয়ে বিকল্প সংযোগ উন্নয়নের পরামর্শ দেন।

এডিবি মনে করে, এই করিডর গড়ে উঠলে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের অর্থনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২০ সালে এই করিডর অঞ্চলের জিডিপি বা মোট দেশজ উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ৩২ বিলিয়ন ডলার, করিডর গড়ে উঠলে তা ২৮৬ বিলিয়ন ডলার বা ২৮ হাজার ৬০০ কোটি ডলারে উন্নীত হতে পারে।

বর্তমানে দেশের উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল দেশের সবচেয়ে পিছিয়ে থাকা অঞ্চল। তাই বাংলাদেশের ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে আড়াআড়ি এই করিডর গঠনের পরামর্শ দিয়েছে এডিবি—দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল (খুলনা বিভাগ) থেকে উত্তর-পূর্বাঞ্চল (সিলেট) পর্যন্ত। এডিবির মানচিত্র অনুযায়ী, এই করিডর ঢাকা বিভাগের ওপর দিয়ে যাবে। এই অর্থনৈতিক করিডরে মোট ১৪টি জেলা পড়বে, যেখানে মোট জনসংখ্যার ৩৪ শতাংশের বসবাস।

বাংলাদেশ শিগগির স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বেরিয়ে যাবে। তখন অনেক অগ্রাধিকারমূলক বাজার সুবিধা হারাতে হবে। সেই সঙ্গে বাংলাদেশ ২০৪১ সালের মধ্যে উচ্চ আয়ের দেশ হতে চায়। এই বাস্তবতায় এডিবি মনে করে, এসব লক্ষ্য অর্জনযোগ্য, তবে সে জন্য অবকাঠামো খাতে বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন, দরকার যথাযথ পরিকল্পনা। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক করিডর মূলত সেই উদ্দেশ্যে করা হয়েছে বলে জানিয়েছে এডিবি।