চাপের মুখে অর্থনীতি, সমাধান কোন পথে

করোনার ধাক্কা পুরোপুরি কাটিয়ে ওঠার আগেই রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ব অর্থনীতি টালমাটাল। ডলার–সংকট, ভোগ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি, কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় বিদেশি বিনিয়োগ না আসা, পণ্য রপ্তানিতে শঙ্কা, বিদেশি ঋণের চোখ রাঙানি আর বৈশ্বিক মন্দার পদধ্বনিতে দেশের অর্থনীতিতে একধরণের চাপ তৈরি হয়েছে। যুদ্ধ শেষ হওয়ার কোনো ইঙ্গিত নেই। তাহলে সামনে আরও কী অপেক্ষা করছে—এমন প্রেক্ষাপটে করণীয় কী, তা–ই খুঁজে দেখার চেষ্টা করেছেন জাহাঙ্গীর শাহ, সুজয় মহাজন, মাসুদ মিলাদ, শুভংকর কর্মকার, প্রতীক বর্ধন ও সানাউল্লাহ সাকিব।

ডলার–সংকট

রুপি-রুবল-ইউয়ানে সমাধান মিলবে না

আমদানি খরচ বেড়ে যাওয়ায় মে মাস থেকে ডলারের ওপর চাপ শুরু হয়। আবার রপ্তানি বাড়লেও তা আমদানির মতো নয়। এ ছাড়া প্রবাসী আয়ও সেভাবে বাড়েনি। ফলে রপ্তানি ও প্রবাসী আয় দিয়েও আমদানির চাপ মেটানো যাচ্ছে না। সে জন্য দেশে ডলারের সংকট তৈরি হয়েছে। এতে বেড়ে গেছে প্রধান আন্তর্জাতিক মুদ্রাটির দাম।

দেশে গত এক বছরে মার্কিন ডলারের দাম বেড়েছে ১০ টাকার বেশি। এখন আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতি ডলারের দাম ৯৪ টাকা ৭০ পয়সা। তবে প্রবাসী আয় ও পণ্য রপ্তানির বিল নগদায়নেক্ষেত্রে ডলারের দাম ১০৫ টাকার বেশি। ফলে আমদানিকারকদের এর চেয়ে বেশি দামে ডলার কিনতে হচ্ছে।

ডলার-সংকট নিরসনে সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণ বন্ধ করা হয়েছে। দামি গাড়ি, প্রসাধনী, স্বর্ণালংকার, তৈরি পোশাক, গৃহস্থালিতে ব্যবহার্য বৈদ্যুতিক সামগ্রী, পানীয়সহ ২৭ ধরনের পণ্য আমদানি নিরুৎসাহিত করতে ব্যাংকঋণ বন্ধ করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে নতুন ঋণপত্র (এলসি) খোলা কমে গেছে। জুন মাসের তুলনায় গত জুলাই মাসে ঋণপত্র খোলা কমেছে ৩১ শতাংশ। ঈদের কারণে জুলাইয়ে অবশ্য প্রবাসী আয় ২০০ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে। তাতেও ডলারের দাম না কমে, বরং আরও তেজি হয়েছে।

সংকট নিরসনে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি অব্যাহত রেখেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ফলে রিজার্ভ কমে ৩ হাজার ৯৬৬ কোটি ডলারে নেমে এসেছে। পাশাপাশি আমদানি কমাতে ও ডলারের প্রবাহ বাড়াতে নানা পদক্ষেপ নেওয়া অব্যাহত রেখেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

এমন পরিস্থিতিতে ডলারের পরিবর্তে ভারত, রাশিয়া ও চীনা মুদ্রা রুপি, রুবল ও ইউয়ানের সঙ্গে টাকার লেনদেনের বিষয়টি সামনে এসেছে। তবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, রাশিয়ার সঙ্গে লেনদেনে গেলে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞায় পড়ার ঝুঁকি আছে। আর ভারত ও চীন থেকে আমাদের রপ্তানি ও প্রবাসী আয় খুবই কম আসে। আমাদের ডলার আয় আছে, তাই এই মুদ্রাতেই লেনদেন অব্যাহত রাখা ভালো। এতে চাপে থাকলেও বড় ঝুঁকি নেই।

নিত্যপণ্য

বিশ্ববাজারে কমছে, খরচ বাড়ছে ডলারে

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর বিশ্ববাজারে খাদ্যশস্য ও নিত্যপণ্যের দামে যে অস্বাভাবিক ঊর্ধ্বগতি শুরু হয়, তা কমতে শুরু করে মে মাসে। নিত্যপণ্যের দামে স্বস্তি পাওয়ায় আগেই দেশে শুরু হয় ডলারের বিনিময়মূল্য বৃদ্ধি। শুরুতে ডলারপ্রতি কয়েক টাকা বাড়লেও সময়ের সঙ্গে দর বাড়ছে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, বিশ্ববাজারে যেভাবে দাম কমেছে, সেভাবে এখানে সুফল না পাওয়ার কারণ ডলারের বিনিময়মূল্য বৃদ্ধি। গত কয়েক মাসে ডলারের বিনিময়মূল্য বেড়েছে ১৫-১৮ শতাংশ। এখন বিশ্ববাজারে যদি এর চেয়ে বেশি কমে, তাহলে পণ্য আমদানির খরচ কমবে। ডলারের বিনিময়মূল্য এত বেশি না বাড়লে দেশে নিত্যপণ্যের আমদানি খরচ কমত।

বিশ্ববাজারে তিন মাস আগে পণ্যভেদে দাম কমতে শুরু করে। যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো বোর্ড অব ট্রেডে জুলাই মাসে সয়াবিন তেলের দাম কমে ১ হাজার ৪৪৭ ডলারে নেমে আসে। এ মাসে তা কিছুটা বেড়ে ১ হাজার ৫১২ ডলারে উন্নীত হয়েছে। এরপরও যুদ্ধ শুরুর সময়ের তুলনায় এই দাম কম। একইভাবে ইউক্রেন থেকে শস্য রপ্তানি শুরু হওয়ার পর গমের দাম মোটামুটি স্থিতিশীল রয়েছে। কমোডিটি এক্সচেঞ্জে প্রতি টন গম ২৮৫ ডলারে বেচাকেনা হচ্ছে। আবার মে মাসের তুলনায় চলতি আগস্ট মাসে পাম তেলের দাম কমেছে ৩৮ শতাংশ।

পণ্যবাজার বিশ্লেষক আসির হক প্রথম আলোকে বলেন, ইন্দোনেশিয়া পাম তেল রপ্তানিতে লেভি প্রত্যাহার করেছে। মজুত বেড়েছে। সামনে নতুন ফসল উঠবে। বিপরীতে আমদানিকারক দেশ ভারতে চাহিদা কমেছে। এসব নানামুখী চাপে দাম কমেছে পাম তেলের। আবার ইউক্রেন থেকে শস্য রপ্তানি শুরু হওয়ায় গমের দামে প্রভাব পড়েছে। সামনে নিত্যপণ্যের দাম কমতির দিকেই থাকবে।

কমোডিটি এক্সচেঞ্জে এক-দুই মাস পর সরবরাহ হবে এমন পণ্যের দামে কমতির প্রবণতা রয়েছে। এটি অব্যাহত থাকলে সামনে দেশেও আমদানি খরচ কমবে। তবে ডলারের বিনিময়মূল্য স্থিতিশীল না হলে এর পুরো সুফল পাওয়া যাবে না বলে মনে করেন ব্যবসায়ীরা।

পণ্য রপ্তানি

নতুন চ্যালেঞ্জের সঙ্গে আছে সম্ভাবনাও

করোনার ধাক্কা কাটিয়ে বেশ ভালোভাবেই ঘুরে দাঁড়ায় পণ্য রপ্তানি খাত। তাতে বিদায়ী ২০২১–২২ অর্থবছরে ৫ হাজার কোটি মার্কিন ডলারের মাইলফলকে পৌঁছে যায় দেশের পণ্য রপ্তানি আয়। অবশ্য অর্থবছর শেষ হওয়ার চার মাস আগেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হলে দুশ্চিন্তা বাড়ে।

ইউক্রেনে হামলার কারণে রাশিয়ার ওপর যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) দেশগুলো নানা ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। প্রথম ধাক্কায় খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ে। হুহু করে বাড়তে থাকে জ্বালানির দামও। দেশে দেশে মূল্যস্ফীতির চাপে পড়ে সাধারণ মানুষ। ফলে জ্বালানি ও নিত্যপণ্যের বাইরে অন্যান্য পণ্যের চাহিদা কমে যায়।

বাংলাদেশের মূল রপ্তানিপণ্য তৈরি পোশাক। আর মূল বাজার যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউ। যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট মূল্যস্ফীতির কারণে বিদেশি ব্র্যান্ডগুলোর বিক্রি কমে গেছে। পণ্যের মজুত বেড়েছে গুদামে। আবার শিগগিরই মন্দার কবলে পড়তে পারে বৈশ্বিক অর্থনীতি। এমন পূর্বাভাসে ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানগুলো ক্রয়াদেশ দেওয়া কমিয়ে দিয়েছে। পোশাক রপ্তানিতে ধাক্কা লাগার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। পোশাক ছাড়া অন্য রপ্তানি খাতও চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়েছে।

বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ এখনো সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছে। ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নের কারণে রপ্তানিকারকদের প্রতিযোগিতা সক্ষমতাও বেড়েছে। করোনার চতুর্থ ঢেউও চোখ রাঙাতে পারেনি। অন্যদিকে প্রতিযোগী দেশ চীন, মিয়ানমার, কম্বোডিয়া প্রত্যেকেই নানামুখী সমস্যায় জর্জরিত।

করোনাকালে নতুন সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য। খাতটি দ্রুতই ১০০ কোটি ডলারের রপ্তানির মাইলফলক ছুঁয়েছে। যদিও গত মাসে পণ্যটির রপ্তানি কমেছে। কারণ, জাহাজভাড়া অস্বাভাবিক বেড়েছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতির মধ্যেও মানুষ খাবার কিনবেই। ফলে এই খাতের সমস্যা নিরসনে জোর দেওয়া প্রয়োজন। একই কথা চামড়া ও পাটশিল্পের জন্যও প্রযোজ্য।

বিদেশি ঋণ

স্বল্প সময়ে বেশি ঋণ পরিশোধ ভোগাবে

কঠিন শর্তের ঋণ দেশের ঋণ পরিশোধের সক্ষমতাকে বেকায়দায় ফেলতে পারে। এ ক্ষেত্রে সুদের হারের চেয়ে ঋণ পরিশোধের সময়সীমা বড় বিষয় হয়ে দাঁড়াতে পারে। কারণ, অল্প সময়ে বেশি অর্থ পরিশোধ করতে হবে। এর ফলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে ঋণ পরিশোধের পরিমাণ দ্বিগুণ হতে পারে।

গত এক দশকে রাশিয়া, চীন ও ভারত—এই তিনটি দেশের কাছ থেকেই তুলনামূলক কঠিন শর্তের ঋণ নিয়েছে বাংলাদেশ। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্রে জানা গেছে, গত ১০ বছরে ১২টি প্রকল্পের জন্য চীনের সঙ্গে ১ হাজার ৭৫৪ কোটি ডলারের ঋণ চুক্তি হয়েছে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য রাশিয়া দিচ্ছে ১ হাজার ১৩৮ কোটি ডলার। আর ভারতের তিনটি লাইন অব ক্রেডিটের আওতায় ৭৩৬ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি আছে। সব মিলিয়ে গত ১০ বছরে এই তিন দেশের কাছ থেকে ৩ হাজার ৬২৮ কোটি ডলার ঋণ নেওয়ার চুক্তি হয়েছে। বর্তমান বাজারদরে টাকার অঙ্কে যার পরিমাণ প্রায় সাড়ে ৩ লাখ কোটি টাকা। সুদ, আসলসহ আগামী ১০–১৫ বছরের মধ্যে সুদ ও আসলে এই বিপুল অঙ্কের ঋণ পরিশোধ করতে হবে।

ইআরডি সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরে সব মিলিয়ে ২৭৮ কোটি ডলার পরিশোধ করতে হবে। প্রতিবছরই এ পরিমাণ বাড়বে। ২০২৯-৩০ অর্থবছরে ঋণ পরিশোধে সর্বোচ্চ ৫১৫ কোটি ডলার খরচ হবে। এরপর ঋণ পরিশোধ কমতে থাকবে। বিদ্যমান ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে আগামী তিন বছর বাংলাদেশের ক্রম পুঞ্জীভূত ঋণের পরিমাণও বাড়তে থাকবে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ক্রম পুঞ্জীভূত ঋণের পরিমাণ দাঁড়াবে ৮ হাজার ৫২৪ কোটি ডলারে। ২০২৯-৩০ অর্থবছর নাগাদ তা কমে ৭ হাজার ২৯১ কোটি ডলার হবে।

স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত বিভিন্ন দাতা দেশ ও সংস্থার কাছ থেকে ১১ হাজার কোটি ডলারের মতো ঋণ ও অনুদান পাওয়া গেছে। জাপানসহ বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ও দাতা সংস্থার কাছ থেকে নমনীয় শর্তে প্রায় ৭০ শতাংশ ঋণ পাওয়া গেছে।

সম্ভাব্য মন্দা

আবারও মন্দার পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে

আবারও মন্দার পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে বিশ্ব অর্থনীতিতে। যার অর্থ, অনেক মানুষ কর্মহীন হবে এবং অনেকের আয় কমবে। ফলে বাজার থেকে প্রয়োজনীয় পণ্য কেনার সামর্থ্য থাকবে না এসব মানুষের। যুক্তরাষ্ট্রে পরপর দুই প্রান্তিকে অর্থনীতি সংকুচিত হয়েছে। যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নে মূল্যস্ফীতি আকাশ ছুঁয়েছে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় তারা নীতি সুদহার বাড়িয়েই চলেছে। এ সবকিছুর মূল কারণ রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। রাশিয়ার ওপর পশ্চিমারা নানা ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে আর সে কারণে তারা নিজেরাই বিপাকে পড়েছে। শিগগিরই এ পরিস্থিতির উত্তরণের সম্ভাবনা নেই।

তবে এবারের মন্দা ১৯৩০-এর দশকের মহামন্দা বা ২০০৮-০৯ সালের বন্ধকি ঋণের সংকটের মতো অতটা গভীর হবে না বলেই ধারণা করছেন বিশ্লেষকেরা। যাকে বলে মৃদু মন্দা, এবারের মন্দার চরিত্র এমনটাই হবে বলে ধারণা।

প্রযুক্তিগতভাবে কর্মসংস্থান, ভোক্তা ব্যয়, ব্যক্তিগত আয় ও উৎপাদনের মাপকাঠি পর্যবেক্ষণ করে মার্কিন বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, শিগগিরই অর্থনৈতিক মন্দার মুখোমুখি হতে চলেছে দেশটি। একই সঙ্গে চার দশকের মধ্যে মূল্যস্ফীতি সর্বোচ্চ পর্যায়ে থাকায় যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের একাংশ মনে করছে, দেশটিতে ইতিমধ্যে মন্দা শুরু হয়েছে। অন্যদিকে যুক্তরাজ্যের সরকারি পূর্বাভাস, এ বছরের শেষ প্রান্তিকে দেশটির অর্থনীতি আবার সংকুচিত হবে।

এখন বিষয় হচ্ছে, উন্নত দেশে অর্থনৈতিক মন্দা হলে আমাদের মতো দেশের সমস্যা কী। বিশ্বায়িত পৃথিবীতে উন্নত দেশের মন্দার প্রভাব উন্নয়নশীল দেশগুলোয় অবধারিতভাবেই পড়ে, এটা এড়ানোর উপায় নেই। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের সবচেয়ে বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ। সেখানকার মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে গেলে আমাদের রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত হবে, এটাই স্বাভাবিক। তবে সুবিধা হলো, মন্দার কারণে বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম কমলে আমদানি ব্যয় কমে যাবে। আর বাংলাদেশ যেহেতু আমদানিনির্ভর দেশ, সেহেতু দেশের বাণিজ্যঘাটতি হ্রাস পাওয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়।

বিদেশি বিনিয়োগ

পুনর্বিনিয়োগই বড় ভরসা বিদেশি বিনিয়োগে

করোনার ধাক্কায় দেশে বিদেশি বিনিয়োগে কিছুটা সুবাতাস ফিরেছে। যদিও তা কাঙ্ক্ষিত বিনিয়োগের তুলনায় কম। সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে দেশে বিদেশি বিনিয়োগ হয়েছে প্রায় ৪৭১ কোটি মার্কিন ডলারের, যা আগের বছরের চেয়ে প্রায় ৩৯ শতাংশ বেশি। ২০২০–২১ অর্থবছরে বিদেশি বিনিয়োগ এসেছিল প্রায় ৩৩৯ কোটি ডলারের। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

২০২০–২১ অর্থবছরে করোনার কারণে বিদেশি বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হয়েছিল। ওই বছর বিদেশি বিনিয়োগের বড় অংশই এসেছিল পুনর্বিনিয়োগ থেকে। বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এখনো বড় ভরসা পুনর্বিনিয়োগ। অর্থাৎ বিদ্যমান বিদেশি বিনিয়োগকারীরা তাঁদের মুনাফার একটি অংশ নতুন করে এ দেশের বিনিয়োগ করেন। তাতে বছর বছর বাড়ে বিদেশি বিনিয়োগ। নতুন করে বিদেশি বিনিয়োগ আসার পরিমাণ কয়েক বছর ধরেই কম। ডলার–সংকটের এ সময়ে নতুন বিদেশি বিনিয়োগ বাড়লে সেটি অর্থনীতির জন্য কিছুটা স্বস্তিদায়ক হতো।

গত অর্থবছরে যে বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে, তার বড় অংশই পুনর্বিনিয়োগ। গত অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে বিদেশি বিনিয়োগের ২৩৪ কোটি ডলারই ছিল পুনর্বিনিয়োগ ও সংশ্লিষ্ট কোম্পানির অভ্যন্তরীণ ঋণ। নতুন বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ১১৯ কোটি ডলার।

আবার বিদেশি বিনিয়োগের বড় অংশই আসছে ঘুরে ফিরে কয়েকটি খাতে। এর মধ্যে কয়েক বছর ধরে বিদেশি বিনিয়োগের বড় অংশই এসেছে বিদ্যুৎ খাতে। এর পরের অবস্থানে রয়েছে বস্ত্র খাত।

গবেষণা সংস্থা পলিসি এক্সচেঞ্জের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান মাশরুর রিয়াজ বলেন, ‘বিদেশি বিনিয়োগের জন্য দরকার নিয়মতান্ত্রিক বিনিয়োগ উদ্বুদ্ধকরণ পরিকল্পনা। যার অধীন কোন কোন খাতে আমরা বিনিয়োগ চাই, কাদের বিনিয়োগ চাই, সেটি সবার আগে নির্ধারণ করতে হবে। এরপর ওই সব খাতে বিনিয়োগের যেসব প্রতিবন্ধকতা রয়েছে, সেগুলোর দূর করার ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।