চুক্তির ক্ষেত্রে আঞ্চলিক শক্তির বিপৎসীমা অতিক্রম করা হচ্ছে কি না দেখতে হবে: মাহফুজুর রহমান

মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান, নিরাপত্তা বিশ্লেষকছবি প্রথম আলো

নিরাপত্তা বিশ্লেষক লে. জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের যে ডকুমেন্ট নিয়ে আমরা কথা বলছি, তার ভেতরে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) কথাবার্তা চলে এসেছে। যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্কের ধারণার মধ্যে ১৮ কোটি মানুষের অর্থনৈতিক নিরাপত্তার অংশ রয়েছে। চীনের ওপর নির্ভরতা কমানোর তাগাদা দেওয়ার বিষয়ও আছে। বাংলাদেশকে দুটি প্রতিরক্ষা চুক্তি সই করতে হবে। আমরা যদি চুক্তি সই করি, তা ১৮ মাসের মধ্যে কার্যকর হয়ে যাবে। অথচ সংবিধানের আদর্শিক জায়গার সঙ্গে তা যায় কি না বা আঞ্চলিক শক্তির ক্ষেত্রে বিপৎসীমা অতিক্রম করা হচ্ছে কি না, সেটিও সমীক্ষা করার দরকার আছে।’

আজ রোববার ‘যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক: কোন পথে বাংলাদেশ’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান এ কথা বলেন। দৈনিক প্রথম আলো রাজধানীর এক হোটেলে এ গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে। এতে দেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও গবেষকেরা অংশ নেন।

মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘আমি মনে করছি, যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কের বিষয়টি ভূরাজনৈতিক, ভূ-অর্থনৈতিক ও ভূ–কৌশলগত খেলার অংশ। আমরা শুনে আসছি যে এ অঞ্চলে শক্তিমত্তা সৃষ্টির জন্য যুক্তরাষ্ট্র সচেষ্ট। বাংলাদেশ এখন তার অংশ হয়ে গেছে। ভবিষ্যতের ভূরাজনৈতিক শক্তিমত্তা প্রদর্শিত হবে ভারত মহাসাগরকে কেন্দ্র করে। প্রতিবেশী দেশের ভেতর দিয়ে ভারত মহাসাগরে প্রবেশ করছে চীন। আমরা আমেরিকার অর্থনৈতিক যে শুল্ক চাপ দেখছি তার সঙ্গে ভূরাজনৈতিক, ভূ-অর্থনৈতিক ও ভূ-কৌশলগত বিষয় সবই জড়িত।’

রোহিঙ্গা বিষয় নিয়ে কিছু তথ্য উল্লেখ করে মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘পশ্চিমা বিশ্ব ২০২৩ সাল পর্যন্ত রোহিঙ্গা বিষয়ে ২৫৩ কোটি মার্কিন ডলার সহায়তা করেছে বাংলাদেশকে। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র একাই দিয়েছে ১৬১ কোটি ডলার। ভারত কোনো পয়সা দেয়নি। আর চীন ২০ লাখ ডলার ও রাশিয়া ৪ লাখ ডলার দিয়েছে। এদিকে ২০১৭ সালের পর মিয়ানমারকে ১৪ শতাংশ অস্ত্র দিয়েছে ভারত। চীন ২৯ শতাংশ ও রাশিয়া ৪৯ শতাংশ অস্ত্র দিয়েছে। রাশিয়া ও চীন মিয়ানমারের পাশে দাঁড়িয়েছে। এ জন্য বললাম যে কাদের আমরা পক্ষ নেব। আঞ্চলিক শক্তি ও পরাশক্তির বিপৎসীমা অতিক্রম না করে তাদের থেকে সুবিধা আদায় করতে হবে আমাদের।’

মাহফুজুর রহমান আরও বলেন, ‘রাষ্ট্রীয় জীবনে দর-কষাকষির দক্ষতা বৃদ্ধির কর্মসূচি হাতে নিতে হবে। সব ক্ষেত্রেই করতে হবে মেধার মূল্যায়ন। আর চুক্তির বিষয়ে যদি বলি, আপনি যার কাছ থেকে অস্ত্র কিনছেন, তার সঙ্গে একটা দীর্ঘ সময়ের জন্য চুক্তিতে যেতে হয়। কালকেই বলতে পারেন না যে তার থেকে অস্ত্র কিনবেন না। একইভাবে যিনি দিচ্ছেন তিনিও কালই বলতে পারবেন না যে আপনাকে অস্ত্র দেব না।’