অভিজাত এলাকা গুলশানে দারিদ্র্য বেড়েছে
দেশের অভিজাত এলাকা গুলশানে দারিদ্র্য বেড়েছে। সেখানে প্রতি এক শ জনে তিনজনের বেশি গরিব। দেশের এই অভিজাত এলাকার দারিদ্র্যের হার ৩ দশমিক ২ শতাংশ। ঠিক ৮ বছর আগে ২০১৬ সালে সেখানে প্রতি ২৫০ জনে একজন বাসিন্দা ছিলেন গরিব।
গত সপ্তাহে প্রকাশিত বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ বাংলাদেশের দারিদ্র্য মানচিত্রে এই চিত্র উঠে এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে, গুলশান এলাকায় ৯৩ হাজার ৬৬ জন বসবাস করেন। দারিদ্র্যের হার ৩ দশমিক ২ শতাংশ বিবেচনায় আনলে গুলশানে ২ হাজার ৯৭৮ জন গরিব।
গুলশান দেশের সবচেয়ে অভিজাত এলাকা। বড় ব্যবসায়ী, আমলা, মন্ত্রী, বড় চাকরিজীবীসহ অভিজাত শ্রেণির মানুষেরা গুলশান এলাকায় বাস করেন। দেশের সবচেয়ে দামি বিপণিবিতানগুলো এই এলাকায় অবস্থিত।
বিষয়টি হলো, দৈনন্দিন জীবনযাপনে নিত্যপণ্য ও সেবা কেনার জন্য একজন মানুষের প্রতি মাসে গড়ে ৩ হাজার ৮২২ টাকা খরচ করার সামর্থ্য যদি না থাকে, তাহলে তিনি দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যাবেন বা গরিব হয়ে যাবেন। এটি উচ্চ দারিদ্র্যরেখা। পাশাপাশি দারিদ্র্য পরিমাপে ১১৯ ধরনের বৈশিষ্ট্য বিবেচনায় নেন বিবিএস কর্মকর্তারা।
এ বিষয়ে বিবিএসের উপপরিচালক মহিউদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, খানা আয় ও ব্যয় জরিপ এবং জনশুমারির তথ্য বিশ্লেষণ করে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত মডেলের মাধ্যমে দারিদ্র্য মানচিত্র করা হয়েছে। জনশুমারির সামাজিক বৈশিষ্ট্যগুলোই বেশি প্রতিফলিত হয়েছে দারিদ্র্য মানচিত্রে। কিন্তু গুলশানের মতো অভিজাত এলাকায় কেন দারিদ্র্য বেড়েছে, তা খতিয়ে দেখবেন গবেষকেরা। বিবিএস শুধু মাঠপর্যায়ের তথ্য বিশ্লেষণ করে।
রাজধানীর আরেক ধনী এলাকা ধানমন্ডিতে দারিদ্র্য কিছুটা কমেছে। ধানমন্ডি এলাকায় প্রতি ১৫০ জনে একজন মানুষ গরিব। সেখানে দারিদ্র্যের হার ১ দশমিক ৫ শতাংশ। বিবিএসের হিসাব অনুসারে, ধানমন্ডির জনসংখ্যা ৮৬ হাজার ৭৬৫ জন। দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করেন ১ হাজার ৩০১ জন। ২০১৬ সালে ধানমন্ডিতে দারিদ্র্যের হার ছিল ২ দশমিক ৭ শতাংশ।
আট বছরের ব্যবধানে বনানী এলাকায় দারিদ্র্যের হার এখনো ১০ শতাংশের বেশি। সেখানে দারিদ্র্যের হার ১১ দশমিক ৩ শতাংশ। বনানী থানায় ১ লাখ ৫৫ হাজার ৭৩৭ জনের বসবাস। তাঁদের মধ্যে গরিব ১৭ হাজার ৫৯৮ জন। বনানী এলাকায় বস্তি আছে, আবার কিছু মহল্লাও আছে।
আট বছর আগে গুলশান এলাকায় দেশের সবচেয়ে কম দারিদ্র্য ছিল। বিবিএসের সর্বশেষ দারিদ্র্য মানচিত্রের হিসাবে, আট বছরের ব্যবধানে গুলশানকে ছাপিয়ে রাজধানীর পল্টন থানা এখন দেশের সবচেয়ে কম দরিদ্র এলাকা। সেখানে প্রতি ১০০ জনে মাত্র একজন গরিব। পল্টন এলাকায় ৪৩ হাজার ৬৩ জনের বসবাস। সেখানে গরিবের সংখ্যা মাত্র ৪৩০।
সর্বশেষ দারিদ্র্য মানচিত্র অনুসারে, দেশের সবচেয়ে কম দরিদ্র, এমন থানাগুলোর অন্যতম কয়েকটি হলো রাজধানী ঢাকার পল্টন, বিমানবন্দর, ধানমন্ডি, নিউমার্কেট, উত্তরা পশ্চিম, শাহবাগ, চট্টগ্রামের ডবলমুরিং ও পাঁচলাইশ। এসব থানায় দারিদ্র্যের হার ২ শতাংশের কম।
উপজেলা ও থানা হিসেবে মাদারীপুর জেলার ডাসার উপজেলায় দারিদ্র্যের হার সবচেয়ে বেশি। ডাসারে ৬৩ দশমিক ২ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করেন। দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে মাদারীপুরে দারিদ্র্যের হার সবচেয়ে বেশি ৫৪ দশমিক ৪ শতাংশ।
আট বছর আগে সবচেয়ে গরিব উপজেলা ছিল কুড়িগ্রামের রাজীবপুর। ওই উপজেলার দারিদ্র্যের হার এখন সাড়ে ৩৮ শতাংশে নেমে এসেছে। ২০১৬ সালের হিসাবে ওই উপজেলায় দারিদ্র্যের হার ছিল প্রায় ৮০ শতাংশ।
দেশের সবচেয়ে কম দারিদ্র্যের হার নোয়াখালী জেলায়। এ জেলার দারিদ্র্যের হার ৬ দশমিক ১ শতাংশ।