বাজেট ও অর্থনীতি নিয়ে আকবর আলি খানের ১০টি মজার গল্প

আকবর আলি খান

শেষ হয়েছে আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট প্রণয়নের প্রস্তুতি। আগামীকালই অর্থাৎ ৬ জুন বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে প্রায় আট লাখ কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। অর্থমন্ত্রী হিসেবে এটি হবে তাঁর প্রথম বাজেট।

তবে বাজেট এলেই হয়তো অনেকের মনে পড়বে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা প্রয়াত আকবর আলি খানের (১৯৪৪-২০২২) কথা। বাজেটকে তিনি নানাভাবে দেখেছেন ও বিশ্লেষণ করেছেন। তাঁর মতে, বাজেট হচ্ছে সংখ্যার খেলা এবং সংখ্যার খেলার এ বাজেটে প্রচারণাই বেশি।

প্রথমা প্রকাশনের প্রকাশিত ‘বাংলাদেশে বাজেট: অর্থনীতি ও রাজনীতি’ শীর্ষক বইয়ে তিনি লিখেছেন, প্রতিবছর বাজেট এলেই বড় করে ঘোষণা করা হয়, বাজেটের আকার সর্বকালের রেকর্ড ছাড়িয়েছে। যুক্তির চেয়েও এতে প্রচারণা বেশি। তাঁর মতে, এ সংখ্যায় অভিভূত হলে চলবে না। তথ্য এখানে সঠিক। কিন্তু তথ্যের ব্যাখ্যা একেবারেই ভুল।

আকবর আলি খানের বিশ্লেষণ হচ্ছে, ১৯৭২-৭৩ থেকে ২০২০-২১ অর্থবছরে বাজারমূল্যে বাজেট বেড়েছে ৭২২ দশমিক ৬ গুণ। এ যেন অনেকটা পুঁথিসাহিত্যের ‘লাখে লাখে সৈন্য মরে কাতারে কাতার, একুনে শুমার হলো চল্লিশ হাজার’।

তাঁর ব্যাখ্যাটি এ রকম—একটি পরিমাণের সঙ্গে আরেকটি পরিমাণের তুলনা করা হচ্ছে বাজারমূল্য দিয়ে। মূল্যস্ফীতিকে এখানে বিবেচনাতেই নেওয়া হচ্ছে না। অথচ বাজারমূল্যের সঙ্গে মূল্যস্ফীতির ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে এ সময়ে। বাজেটের পরিমাণের মূল্যায়ন ও তুলনা করতে হয় মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ভিত্তিতে।

স্বাধীনতার পর ১৯৭২-৭৩ অর্থবছরে দেশের প্রথম বাজেটের আকার ছিল ৭৮৬ কোটি টাকা। আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট হচ্ছে প্রায় আট লাখ কোটি টাকা।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জন্মগ্রহণকারী আকবর আলি খান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষে কানাডার কুইন্স বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণের জন্য পাকিস্তানের সামরিক আদালত তাঁর অনুপস্থিতিতে তাঁকে ১৪ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছিল।

স্বাধীন বাংলাদেশে বিভিন্ন সময়ে তিনি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান, অর্থসচিব ও মন্ত্রিপরিষদ সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরে দায়িত্ব পালন করেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে। যদিও প্রতিবন্ধকতার মুখে উপদেষ্টার দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করেছিলেন আকবর আলি খান। জীবনের শেষ বছরগুলো কাটে তাঁর বই লেখা ও শিক্ষকতা করে।

১৪ বছর গবেষণা করে লেখা ‘বাংলাদেশে বাজেট: অর্থনীতি ও রাজনীতি’ বইয়ে আকবর আলি খান গল্পের ছলে ও চুটকি বলে বাজেটকে নানাভাবে সামনে এনেছেন। সেগুলো নিয়েই এ প্রতিবেদন।

১. চায়ের বাক্স নদীতে

ম্যাগনা কার্টা মতবাদ একটা সময় যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসী ইংরেজদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে ব্যাপকভাবে। ম্যাগনা কার্টা মতবাদের ভিত্তিতে নতুন কর আরোপ করা হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রে। ১৭৬০-এর দশকের ঘটনা। দেশটির বোস্টন নগরীতে বিদ্রোহী মার্কিন নাগরিকেরা ম্যাগনা কার্টা মতবাদের ভিত্তিতে নতুন করারোপের বিরোধিতা করেন। কারণ, ম্যাসাচুসেটসের গভর্নর ফরাসিদের সঙ্গে যুদ্ধের খরচ বহন করার জন্য বাড়তি অর্থের প্রয়োজন বোধ করলে এশিয়া থেকে আমদানি করা চায়ের ওপর অতিরিক্ত কর বসান তিনি। জনপ্রতিনিধিদের সম্মতি না নেওয়ায় বোস্টনের ব্যবসায়ীরা এ কর দিতে অস্বীকৃতি জানান। প্রতিবাদস্বরূপ আমদানি করা চায়ের বাক্স তাঁরা নদীতে নিক্ষেপ করেন।

২. কর্মকর্তাদের হোটেলে বন্দী রাখা হতো

আকবর আলি খান তাঁর বইয়ে বাজেটের গোপনীয়তা বজায় রাখার বিষয়ে গুরুত্ব দেন। তাঁর মতে, এ গোপনীয়তা বজায় রাখা শুধু অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব নয়, অর্থসচিবসহ এ বিষয়ে কাজ করা অন্যদেরও দায়িত্ব। অনেক দেশে বাজেটের আগের সপ্তাহে অর্থ মন্ত্রণালয়ের মুখ্য কর্মকর্তাদের একটি হোটেলে প্রায় বন্দী অবস্থায় রাখা হতো, যাতে কেউ তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পারে। তবে অনেক দেশের সংসদেই কর প্রস্তাব আর গোপন থাকে না। কর প্রস্তাব নিয়ে প্রকাশ্যে আলাপ-আলোচনা হয়, দর-কষাকষি হয় এবং আপস করা হয়।

৩. বাজেট ফাঁসে অর্থমন্ত্রীর পদত্যাগ

দেশে দেশে বাজেট ফাঁসও হয়। আকবর আলি খান তাঁর বইয়ে ১৯৪৭ সালের একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করেন। লেখেন, যুক্তরাজ্যের অর্থমন্ত্রী ছিলেন লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসের অধ্যাপক হিউ ডালটন। ব্রিফকেসে বাজেট নিয়ে যখন সংসদে ঢুকছিলেন, নতুন কর নিয়ে সাংবাদিকেরা কিছু প্রশ্ন করেন তাঁকে। তিনিও ঠিক জবাব দেন। আর এ খবর টেলিফোনের মাধ্যমে পত্রিকা অফিসে পৌঁছে যায় তাৎক্ষণিকভাবে। কোনো কোনো খবরের কাগজ শুধু এ সংবাদকে গুরুত্ব দিয়ে বিশেষ সংখ্যাও প্রকাশ করে তখন।

হিউ ডালটন যখন সংসদে মুদ্রিত বাজেট পড়ছিলেন, তখন সংসদ সদস্যদের কাছে পৌঁছে যায় পত্রিকার কপি। বাজেট ফাঁস হয়ে গেছে—এ দাবিতে সংসদে হইচই শুরু করে বিরোধী দল। হিউ ডালটন ভুল স্বীকার করেন এবং অর্থমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন।

৪. মানিব্যাগ থেকেই ব্রিফকেস

বাজেট শব্দটি এল কীভাবে, তার একটি ব্যাখ্যা নিয়ে আসেন আকবর আলি খান। তিনি বলছেন, ‘১৭২৫ থেকে ১৭৪২ সাল পর্যন্ত রবার্ট ওয়ালপোল ছিলেন যুক্তরাজ্যের অর্থমন্ত্রী এবং কার্যত প্রথম প্রধানমন্ত্রী। অর্থমন্ত্রী হিসেবে তিনি সারা বছরই কর কমানো বা কর বাতিলের দাবি পেতেন। সরকারি ও বেসরকারি—উভয় খাত থেকেই নতুন কর আরোপ বা পরিবর্তনের সলাপরামর্শ আসত। আসত নতুন ব্যয়ের দাবিও। এসব তিনি একটি বুজেটে বা মানিব্যাগে ভরে রাখতেন। অর্থবছরের শেষ দিকে যখন বাজেট তৈরির কাজ শুরু হতো, তখন তিনি কাগজগুলোর ভিত্তিতেই বাজেট প্রণয়ন করতেন।’
বইটিতে উল্লেখ করা হয়, শিল্পবিপ্লবের পর ইংল্যান্ডের অর্থনীতি অনেক বড় হয়ে যায়। বাজেটবিষয়ক প্রস্তাবগুলো শুধু একটা মানিব্যাগে সংকুলান করা সম্ভব ছিল না। মানিব্যাগের জায়গায় তাই আসে ব্রিফকেস। ব্রিফকেস ব্যবহারের অন্য কারণও ছিল। সেটি হচ্ছে বাজেটে কোন কর বাড়বে বা কোন কর কমবে, তার গোপনীয়তা বজায় রাখা অপরিহার্য। ব্রিফকেসের ভেতরে থাকা বাজেটের কোনো তথ্য জেনে ব্যবসায়ীরা রাতারাতি বড়লোক বনে যেতে পারেন। ফলে সংগত কারণেই সংসদে বাজেট পেশের আগে প্রস্তাবগুলো গোপন রাখা চাই। যে অর্থমন্ত্রী বাজেটের গোপনীয়তা বজায় রাখতে পারেন না, তার পক্ষে অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা সম্ভব নয়।

৫. রাজাকেও হতে হয় নিয়মের অধীন

সাংবিধানিক দিক থেকে বাজেটের ভিত্তি হচ্ছে ‘নো ট্যাক্সেশন উইদাউট রিপ্রেজেনটেশন’ অর্থাৎ জনপ্রতিনিধিদের সম্মতি ছাড়া কোনো কর আদায় করা যাবে না। রাষ্ট্র পরিচালনায় জনগণের সম্মতির প্রয়োজনীয়তা ইংল্যান্ডে স্বীকৃত হয় দ্বাদশ শতকে ম্যাগনা কার্টা বিদ্রোহের সময়।

ম্যাগনা কার্টা বিদ্রোহ নিয়ে বিশদ ব্যাখ্যায় যাননি আকবর আলি খান। তবে ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যায়, ম্যাগনা কার্টা ইংল্যান্ডের একটি চুক্তি, যা ১২১৫ সালে স্বাক্ষরিত হয়। ঐতিহাসিকভাবে ম্যাগনা কার্টা এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে একে বর্তমান সাংবিধানিক শাসনের সূচনা বলা যেতে পারে।

তার আগে ১১৮৮ সালে রাজা দ্বিতীয় হেনরি সব অস্থাবর সম্পত্তির ওপর কর ধার্য করেন। যুদ্ধের বিপুল ব্যয়ভার রাজার ওপর এমন চাপ সৃষ্টি করেছিল যে অতিরিক্ত কর ধার্য করা ছাড়া কোনো উপায় ছিল না তাঁর।

অন্যদিকে রাজা দ্বিতীয় হেনরির দুই পুত্র রিচার্ড ও জন ছিলেন স্বৈরাচারী। তাঁরাও পরে রাজা হন। বিশেষ করে রাজা জনের স্বেচ্ছাচারমূলক কাজের জন্য ভূস্বামীরা অতিষ্ঠ হয়ে রাজার ক্ষমতা সংকোচনের জন্য সচেষ্ট হয়ে ওঠেন। ১২১৫ সালে রাজা জন সামন্তদের চাপে পড়ে রাজার অধিকারসংক্রান্ত চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। এরপর রাজাকেও হতে হয়েছিল নিয়মের অধীন।

তবে ক্ষমতালিপ্সু রাজা সহজেই এ চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে চাননি। সব সামন্ত মিলে রাজা জনকে লন্ডনের কাছে এক দ্বীপে বন্দী করে এ চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করেন।

৬. সংবিধানে বাজেট নেই

আকবর আলি খানের পর্যবেক্ষণ হচ্ছে বাংলাদেশের সংবিধানে ‘বাজেট’ শব্দটিই নেই। সংবিধানের ৮৭ (১) অনুচ্ছেদে বলা আছে ‘বার্ষিক আর্থিক বিবৃতি’। সংবিধানে বলা হয়েছে, ‘প্রত্যেক অর্থবছর সম্পর্কে উক্ত অর্থবছরের জন্য সরকারের অনুমিত আয় ও ব্যয়-সংবলিত একটি বিবৃতি সংসদে উপস্থাপিত হবে।’ এই বিবৃতিই আসলে বাজেট।
সংবিধানে না থাকলেও বাজেট আছে সংসদের কার্যপ্রণালি বিধিতে। বিধির ১১১ (১)-এ বার্ষিক আর্থিক বিবৃতিকে ‘বাজেট’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কার্যপ্রণালি বিধিতে সংসদে বাজেট উপস্থাপনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে অর্থমন্ত্রীকে। বিধির ১১১ (২)-এ বলা হয়েছে, ‘সংবিধানের বিধান সাপেক্ষে অর্থমন্ত্রী যে রূপ উপযোগী মনে করবেন, সেই আকারে বাজেট সংসদে পেশ করবেন।’

আকবর আলি খান বলেন, বাংলায় বাজেটের পরিভাষা এখনো রচিত হয়নি। ফলে সরকারি ক্রিয়াকাণ্ডে ‘বাজেট’ শব্দটিই ব্যবহৃত হয়ে আসছে। বাংলা একাডেমির বিবর্তনমূলক বাংলা অভিধানের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, ১৯০২ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলায় বাজেট শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন।

৭. গণিতজ্ঞ, হিসাবরক্ষক ও অর্থনীতিবিদ

আকবর আলি খান তাঁর বইয়ে উল্লেখ করেন, একবার এক সাক্ষাৎকারে ডাক পড়ল একজন গণিতজ্ঞ, একজন হিসাবরক্ষক ও একজন অর্থনীতিবিদের। সাক্ষাৎকারে প্রথমে ডাক পড়ল গণিতজ্ঞের। তাকে প্রশ্ন করা হলো, ‘দুইয়ের সঙ্গে দুই যোগ করলে কত হয়?’ তিনি জবাব দিলেন, ‘৪ ।’ তাকে আবার জিজ্ঞেস করা হয়, ‘এর কোনো ব্যতিক্রম আছে কি না।’ তার সাফ জবাব ‘না।’

এবার হিসাবরক্ষককে ডেকে একই প্রশ্ন করা হয়। তিনি জবাব দিলেন, ‘সাধারণত দুইয়ের সঙ্গে দুই যোগ করলে চার হয়। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে ৫ অথবা ১০ শতাংশ এদিক–সেদিক হতে পারে।’ সবশেষে এলেন অর্থনীতিবিদ। তাকে যখন প্রশ্ন করা হলো দুইয়ের সঙ্গে দুইয়ের যোগফল কত? তিনি নিজের চেয়ার থেকে উঠে প্রশ্নকর্তার কাছে চলে যান এবং তার কানে ফিসফিস করে প্রশ্ন করেন, ‘আপনি কত চান?’

৮. এক বাঙালি ও এক ভারতীয় যুবক

এক বাঙালি ও এক ভারতীয় যুবক উচ্চতর ডিগ্রির জন্য বিলেতে যান। কোনো রকমে ডিগ্রি নিয়ে দুজনই বাড়ি ফেরেন। তাদের উদ্দেশ্য হলো দেশে ফিরে যত তাড়াতাড়ি পারা যায় বড়লোক হতে হবে। তারা দুজনই একমত হন যে অনুন্নত দেশে বড়লোক হওয়ার সহজ উপায় হলো রাজনীতি। দুজনই রাজনীতিতে যোগ দিলেন এবং সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলেন। ২৩ বছর পর ভারতীয় সংসদ সদস্যদের কাছ থেকে বাংলাদেশি সদস্য সস্ত্রীক ভারত সফরের আমন্ত্রণ পান।

বাংলাদেশের সংসদ সদস্য স্ত্রীকে নিয়ে ভারতে গিয়ে দেখেন যে তার ভারতীয় বন্ধু বিরাট বড়লোক হয়ে গেছেন। তার বাড়ি মহারাজার বাড়ির চেয়েও বড়। চাকরবাকরের কোনো অভাব নেই। ধনসম্পদে পরিপূর্ণ তার জীবন। বাংলাদেশি সংসদ সদস্য ভারতীয় সংসদ সদস্যকে প্রশ্ন করেন, কীভাবে তিনি এত তাড়াতাড়ি বড়লোক হলেন। বন্ধু তাকে বলেন, ‘অপেক্ষা করো। তুমি যখন দেশে যাবে, তখন বিমানবন্দরে যাওয়ার সময় তোমাকে বলব আমি কীভাবে এত বড়লোক হয়েছি।’

কয়েক দিন কাটানোর পর দেশে ফেরার সময় এল। গাড়ি চলছে। কিছু দূর যাওয়ার পর ভারতীয় সংসদ সদস্য বাংলাদেশি সংসদ সদস্যকে দূরে একটা সেতু দেখালেন। আর বললেন, এই যে সেতুটি দেখছ, এর অর্ধেকটি মাটির ওপরে আছে, বাকি অর্ধেক আমার ধনসম্পদ হয়ে গেছে। বাংলাদেশি যুবক ইঙ্গিত বুঝতে পারলেন।
দেশে ফিরে আসার বছর দু-একের মধ্যে বাংলাদেশি যুবকও বড়লোক হয়ে গেলেন। এমনকি ভারতীয়র চেয়ে দ্বিগুণ বড়লোক। এবার তিনি ভারতীয় সংসদ সদস্যকে বাংলাদেশ আমন্ত্রণ জানান সস্ত্রীক।

ভারতীয় সংসদ সদস্য বাংলাদেশে এসে অবাক হয়ে যান। বললেন, ‘তোমার দেশে তো দারিদ্র্য বেশি। এত সম্পদ কীভাবে সংগ্রহ করলে?’ বাংলাদেশি সংসদ সদস্য তার বন্ধুকে বললেন, ‘অপেক্ষা করো, বলব। বিমানবন্দরে ফেরার পথে আমার ধন সম্পদের রহস্যের কথা বলব।’

ফেরার দিন গাড়ি কিছু দূর যাওয়ার পর বাংলাদেশের সংসদ সদস্য দূরের দিকে আঙুল তুলে বললেন, ‘ওই যে দূরে সেতুটি দেখতে পাচ্ছ, তা–ই আমার ধনসম্পদ।’ ভারতীয় সংসদ সদস্য বললেন, ‘আমি তো কিছু দেখছি না।’ তখন বাংলাদেশের সংসদ বললেন, ‘দেখাই যদি যাবে, তাহলে আমার এত ধনসম্পদ কোথা থেকে আসবে?’

৯. করদাতার টাকা তুই মেরেছিস

বাজেট বরাদ্দ অনুমোদন করেন সংসদ সদস্যরা। তাঁরা সব সময় জনস্বার্থে কাজ করেন না। অনেক সময় নিজেদের স্বার্থে কাজ করেন। মার্কিন সংসদ সদস্যদের সম্পর্কে একটি সুন্দর চুটকি প্রায়ই শোনা যায়।

ঘটনাটি হলো একজন কংগ্রেসম্যান গভীর রাতে সংসদ ভবনের সামনে বিরাট মাঠ পেরিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। এমন সময় তিনি এক ছিনতাইকারীর খপ্পরে পড়েন। ছিনতাইকারী কংগ্রেসম্যানকে বলল, ‘দে ব্যাটা, তোর কাছে যা টাকা আছে তা আমাকে দিয়ে দে।’ কংগ্রেসম্যান বললেন, ‘জানো, তুমি কার সঙ্গে কথা বলছ? আমি একজন কংগ্রেসম্যান।’ ছিনতাইকারী বলল, ‘পিস্তলটা দেখেছিস? উল্টাপাল্টা কিছু করলে শেষ করে দেব। দে, দে, টাকা দে। তোর পকেটের টাকার মালিক তুই নস। আমার মতো করদাতার টাকা তুই মেরেছিস। দে, আমার টাকাই আমাকে ফেরত দে।’ ছিনতাইকারী কিছুটা অতিরঞ্জন করলেও একেবারে মিথ্যা বলেনি।

১০. ঠেলাগাড়ি চুরি

নিরীক্ষকদের পক্ষে কোনো প্রতিষ্ঠানের সব দুর্বলতা অনুমান করা সম্ভব নয়। একবার এক নিরীক্ষক একটি কারখানা নিরীক্ষার দায়িত্ব নেন। বাজারে গুজব ছিল যে কারখানা থেকে বিপুল পরিমাণ চুরি হয়। নিরীক্ষক চুরি ধরার জন্য তৎপর হলেন। কিন্তু অনেক খোঁজাখুঁজির পরও কোনো অনিয়ম ধরতে পারেননি। শুধু বিকেলের দিকে একটি রহস্যজনক ঘটনা দেখতে পান। একটা ঠেলাগাড়ি, যার ওপর অস্বচ্ছ কাপড় দিয়ে ঢাকা, তোরণের দিকে যাচ্ছে। নিরীক্ষক সঙ্গে সঙ্গে ঠেলাগাড়িটি আটকে দেন, কিন্তু কাপড় তুলে কিছুই পাননি।

পর পর সাত দিন একই ঘটনা ঘটল। অষ্টম দিন নিরীক্ষক কারখানার নিরীক্ষা শেষ করে যখন তাঁর অফিসে যাচ্ছিলেন, তিনি আবার অস্বচ্ছ কাপড়ে ঢাকা একটি ঠেলাগাড়ি দেখতে পান। এবার তিন গাড়োয়ানকে বললেন, আমি আর আপনার গাড়ি পরিদর্শন করব না। আমি বুঝতে পারছি আপনি কাপড় দিয়ে ঢেকে কিছু সরাচ্ছেন, কিন্তু কী সরাচ্ছেন তা বুঝতে পারছি না। হলফ করে বলছি, আপনার কোনো ক্ষতি করব না। বরং চিরজীবন কৃতজ্ঞ থাকব যদি মেহেরবানি করে বলেন যে আপনি কী চুরি করছেন। গাড়োয়ান একটু হেসে বললেন, ‘আমি ঠেলাগাড়ি চুরি করি।’