ব্যবসা নিয়ে শঙ্কায় ৪০% সিইও

প্রধান নির্বাহীরা খরচ কমাতে শুরু করেছেন। তবে মেধাবী কর্মীদের ধরে রাখতে ৬০ শতাংশ প্রধান নির্বাহীর বেতন কমানোর পরিকল্পনা নেই।

বিশ্ব অর্থনীতি নিয়ে দুঃসংবাদের পালা যেন শেষই হচ্ছে না। এবার বৈশ্বিক নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রাইস ওয়াটার হাউস কুপার্সের (পিডব্লিউসি) জরিপে জানা গেল, ৭৩ শতাংশ প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বা সিইও মনে করছেন, চলতি বছর বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির হার কমবে। প্রধান নির্বাহীদের কণ্ঠে এমন হতাশার কথা গত এক দশকের মধ্যে কখনোই শোনা যায়নি।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কোম্পানির প্রধান নির্বাহীরা ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে নানা ধরনের চ্যালেঞ্জের কথা বলেছেন। ৪০ শতাংশ প্রধান নির্বাহীর আশঙ্কা, ব্যবসা-বাণিজ্য বর্তমানে যে ধারায় চলছে, সেভাবে চলতে থাকলে আগামী এক দশকের মধ্যে তাঁদের কোম্পানি অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক অবস্থায় থাকবে না। প্রায় সব খাতের প্রধান নির্বাহীরাই এমনটি বলেছেন। যেমন টেলিযোগাযোগ খাতের ৪৬ শতাংশ, উৎপাদনশীল খাতের ৪৩, স্বাস্থ্যসেবা খাতের ৪২ ও প্রযুক্তি খাতের ৪১ শতাংশ প্রধান নির্বাহী এমন শঙ্কা জানিয়েছেন।

এ ছাড়া কোম্পানির ভবিষ্যৎ প্রবৃদ্ধি নিয়েও প্রধান নির্বাহীদের আত্মবিশ্বাস আশঙ্কাজনকভাবে কমেছে। বর্তমানে তাঁদের আত্মবিশ্বাস হ্রাসের হার ২৬ শতাংশ। এর আগে ২০০৮-০৯ সালে বৈশ্বিক মন্দার সময়ের আত্মবিশ্বাস হ্রাসের হার ছিল সর্বোচ্চ ৫৮ শতাংশ।

পিডব্লিউসির বৈশ্বিক প্রধান নির্বাহী জরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছে। বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ৪ হাজার ৪১০ জন সিইও এই জরিপে অংশ নিয়েছেন। গতকাল সোমবার প্রকাশিত জরিপের ফলাফলে বলা হয়, বর্তমানের ব্যবসা-বাণিজ্যের আশঙ্কাজনক বাস্তবতায় প্রধান নির্বাহীরা খরচ কমাতে শুরু করেছেন। তবে উন্নত বিশ্বে যেভাবে মানুষ চাকরি ছাড়ছেন, তাতে মেধাবী কর্মীদের ধরে রাখতে ৬০ শতাংশ প্রধান নির্বাহীর বেতন কমানোর পরিকল্পনা নেই।

এদিকে পিডব্লিউসির ২০২১ ও ২০২২ সালের জরিপে প্রধান নির্বাহীরা আশার কথা শুনিয়েছিলেন। ওই দুই বছর যথাক্রমে ৭৬ ও ৭৭ শতাংশ প্রধান নির্বাহী বলেছিলেন, প্রবৃদ্ধির হার বাড়বে। ফলে এবারের জরিপে সেই ধারায় বড় ধরনের ব্যত্যয় ঘটেছে।

মূল তিন উদ্বেগের জায়গা

গত বছর প্রধান নির্বাহীদের উদ্বেগের মূল জায়গা ছিল সাইবার ও নিরাপত্তাঝুঁকি। এ বছর সেটি অনেকটাই আড়ালে চলে গেছে; বরং অর্থনৈতিক শ্লথগতির প্রভাব কী হবে, তা নিয়ে প্রধান নির্বাহীরা উদ্বিগ্ন। স্বল্প ও মধ্য মেয়াদে সবচেয়ে বড় ঝুঁকি হিসেবে তাঁরা চিহ্নিত করেছেন মূল্যস্ফীতি ও সামষ্টিক অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতাকে। যথাক্রমে ৪০ ও ৩১ শতাংশ প্রধান নির্বাহী এ কথা বলেছেন। এর সঙ্গে ভূরাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে আর্থিক নিরাপত্তাহীনতার কথা বলেছেন ২৫ শতাংশ প্রধান নির্বাহী। সাইবার নিরাপত্তা ও জলবায়ু পরিবর্তনের কথা বলেছে যথাক্রমে ২০ ও ১৪ শতাংশ।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে চলমান ভূরাজনৈতিক দ্বন্দ্বের কারণে প্রধান নির্বাহীরা ব্যবসার মডেল নিয়ে নতুন করে চিন্তা করছেন। তাঁরা ধরেই নিচ্ছেন, নানা ধরনের রাজনৈতিক ঝুঁকির মধ্য দিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করতে হবে। সে জন্য তাঁরা কৌশলে পরিবর্তন আনবেন। ৪৮ শতাংশ প্রধান নির্বাহী বলেছেন, তাঁরা সাইবার নিরাপত্তা ও তথ্য সুরক্ষায় বিনিয়োগ বাড়াবেন। আবার ৪৬ শতাংশ সরবরাহব্যবস্থায় সমন্বয়, ৪৬ শতাংশ বাজারের উপস্থিতি পুনর্মূল্যায়ন বা নতুন বাজার সন্ধান এবং ৪১ শতাংশ প্রধান নির্বাহী নতুন পণ্য ও সেবা আনায় জোর দেওয়ার কথা জানান।

পিডব্লিউসির বৈশ্বিক চেয়ারম্যান বব মরিৎজ বলেছেন, পরিস্থিতি খুব দ্রুত বদলে যাচ্ছে। যাঁরা স্বল্পমেয়াদি ঝুঁকি মোকাবিলার সঙ্গে পরিচালনগত চাহিদার সমন্বয় করতে ব্যর্থ হবেন, তাঁরা টিকতে পারবেন না।