যে পাঁচ প্রকল্প এডিপিতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাচ্ছে

আগামী অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) সব মিলিয়ে প্রকল্প আছে ১ হাজার ২৫৮টি। মোট ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা এসব প্রকল্পে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

এবারে পাঁচটি প্রকল্প পুরো এডিপির ১৩ শতাংশের বেশি বরাদ্দ পাচ্ছে। ওই পাঁচ প্রকল্প পাচ্ছে মোট ৩৫ হাজার ৯৫৪ কোটি টাকা। এবার দেখা যাক, কোন পাঁচটি প্রকল্প সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ পেতে চলেছে।

এডিপির নথি অনুযায়ী, এই পাঁচটি প্রকল্প হলো চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি; রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র; মাতারবাড়ী কয়লাবিদ্যুৎকেন্দ্র; ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ এবং ঢাকা ম্যাস র‍্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (এমআরটি-১)।

এই পাঁচ প্রকল্পের মধ্যে দুটি করে অবকাঠামো এবং বিদ্যুৎ খাতের। বাকি প্রকল্পটি শিক্ষা খাতের। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

বড় অবকাঠামো বিশেষজ্ঞ ও সাবেক সচিব মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান প্রথম আলোকে বলেন, সরকার পর্যাপ্ত রাজস্ব আদায় করতে পারছে না। তাই শিক্ষা-স্বাস্থ্য খাতকে অবহেলা করা হচ্ছে। জনতুষ্টির অবকাঠামো প্রকল্পের দিকে সরকারের মনোযোগ বেশি।

গ্রাফিক্স: প্রথম আলো

কোন প্রকল্পে কত বরাদ্দ

সর্বোচ্চ বরাদ্দ আছে চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচিতে। আগামী অর্থবছরে এই প্রকল্পের জন্য ১১ হাজার ৫৬ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। ২০১৮ সালে চতুর্থবারের মতো এই গুচ্ছ কর্মসূচিটি শুরু হয়।

২০২৫ সালের জুন মাসে প্রকল্প শেষ করতে আগামী এডিপিতে এই বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে এই প্রকল্পের আওতায় খরচ হবে ৩৮ হাজার ২৯১ কোটি টাকা।

দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাচ্ছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। আগামী এডিপিতে এই প্রকল্পটি পাচ্ছে ১০ হাজার ৫০২ কোটি টাকা। রাশিয়ার আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় এই প্রকল্পটির বাস্তবায়ন হচ্ছে। ২০২৫ সালের জুন মাসে প্রকল্পটি শেষ হওয়ার কথা আছে।

তৃতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ যাচ্ছে মাতারবাড়ী কয়লাবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পে। এই প্রকল্প বরাদ্দ পাচ্ছে ৬ হাজার ৫ কোটি টাকা। সর্বমোট ৫১ হাজার ৮৫৪ কোটি টাকার এই প্রকল্প শুরু হয় ২০১৪ সালে। একাধিকবার সংশোধন করে প্রকল্পটি শেষ হবে ২০২৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর।

২৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের ঢাকা–আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের জন্য ২০১৭ সালে প্রকল্প নেওয়া হয়। প্রকল্পের খরচ ধরা হয় ১৬ হাজার ৯০১ কোটি টাকা। ২০২৬ সালের জুন মাসে প্রকল্পটি শেষ হবে। আগামী অর্থবছরে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৩ হাজার ৭৯৭ কোটি টাকা। এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে।

মেট্রোরেলের নতুন প্রকল্প এমআরটি লাইন-১ হাতে নেওয়া হয়েছে। এই প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৫২ হাজার ৫৬১ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরে এই প্রকল্পে বরাদ্দ রাখা হচ্ছে ৩ হাজার ৫৯৪ কোটি টাকা।

বিমানবন্দর থেকে মতিঝিল এবং পূর্বাচল থেকে নতুনবাজার পর্যন্ত মেট্রোরেল নির্মাণ হবে। এখন রূপগঞ্জের পিতলগঞ্জে ডিপো নির্মাণ হচ্ছে।

আগামী অর্থবছরের এডিপির আকার দাঁড়াচ্ছে ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। নতুন এডিপিতে চলতি বছরের মূল এডিপি থেকে মাত্র ২ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ বাড়ছে। মোট বিনিয়োগের মধ্যে ১ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা স্থানীয় উৎস থেকে দেওয়া হবে। এডিপিতে এবারই প্রথমবারের মতো বিদেশি সহায়তা পাওয়ার লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে ১ লাখ কোটি টাকা।

গতকাল মঙ্গলবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বর্ধিত সভায় আগামী অর্থবছরের এডিপির খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। পরিকল্পনামন্ত্রী আবদুস সালামের সভাপতিত্বে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়।