দক্ষতা উন্নয়নে সরকারের পদক্ষেপের সফলতা পাওয়া গেছে, আইএলওর ফোরামে আলোচনা

বাংলাদেশে দক্ষতা উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের ফলাফল পাওয়া যাচ্ছে। জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন নীতি ও ন্যাশনাল কোয়ালিফিকেশন ফ্রেমওয়ার্ক প্রণয়নের পাশাপাশি শিল্প উপযোগী দক্ষতাভিত্তিক শিক্ষায় জোর দেওয়া হচ্ছে। বিশেষ করে গত দেড় দশকে বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে বড় অগ্রগতি অর্জন করেছে।

জেনেভায় আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা বা আইএলওর সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত গ্লোবাল স্কিলস ফোরামে বাংলাদেশের কারিগরি শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়নে অগ্রগতির এই চিত্র তুলে ধরা হয়। সরকার, আইএলও, ইইউ, কানাডা সরকারের অংশীদারত্বে দক্ষতা উন্নয়নে বাংলাদেশের অগ্রগতি ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধির চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা হয়। পরিবর্তনশীল বিশ্বে দক্ষতা উন্নয়ন, কর্মসংস্থানের চ্যালেঞ্জ ও অংশীদারি নিয়ে আলোচনা করতে সরকার, নিয়োগদাতা, শ্রমিক প্রতিনিধি ও উন্নয়ন অংশীদারদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল এই সম্মেলনে। খবর বিজ্ঞপ্তি

এই আন্তর্জাতিক ফোরামে বিভিন্ন অধিবেশনের মধ্যে একটি ছিল দক্ষতা উন্নয়ন ব্যবস্থা গড়ে তোলায় বাংলাদেশের সাফল্য ও সম্ভাবনা নিয়ে। আইএলও সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত এই অধিবেশনে উচ্চপর্যায়ের আলোচনায় শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর পাশাপাশি নিয়োগকর্তা ও শ্রমিক সংগঠনের জ্যেষ্ঠ প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন প্রধান উন্নয়ন অংশীদার, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও কানাডা সরকারের প্রতিনিধিরা।

শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী দক্ষতা উন্নয়নে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি, বিশেষ করে নারী, আদিবাসী সম্প্রদায় ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মতো প্রান্তিক গোষ্ঠীর উন্নয়নে বর্তমান সরকারের প্রতিশ্রুতি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, এসব প্রচেষ্টা সরকারের বর্ণিত রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ও উন্নয়নমূলক অগ্রাধিকারগুলোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত। তা সত্ত্বেও মন্ত্রী শিল্পকারখানার উচ্চ-দক্ষতার চাহিদা এবং সাধারণভাবে স্বল্প দক্ষ শ্রমশক্তির মধ্যে দক্ষতার অমিল দূর করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। মন্ত্রী শিল্প খাত ও উন্নয়ন অংশীদারদের জীবনব্যাপী শিক্ষা বা লাইফলং লার্নিং উৎসাহিত করার মাধ্যমে দক্ষতা উন্নয়নে সক্রিয় পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান; বিশেষ করে ওষুধ, আইসিটি ও কৃষি-খাদ্য প্রক্রিয়াকরণের মতো উদীয়মান শিল্প খাতে।

অধিবেশন চলাকালীন অংশগ্রহণকারীরা বাংলাদেশের অর্জন, বর্তমান চ্যালেঞ্জ ও প্রস্তাবিত কৌশল নিয়ে আলোচনা করেন। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সহযোগিতামূলক অংশীদারত্বের মাধ্যমে জাতীয় দক্ষতা ব্যবস্থা এগিয়ে নেওয়ার জন্য এটি সহায়ক। আইএলওর দক্ষতা ও নিয়োগবিষয়ক প্রধান শ্রীনিবাস রেড্ডি এই অধিবেশন পরিচালনা করেন। দক্ষতা উন্নয়নে বাংলাদেশের প্রধান অর্জনগুলো ভিডিও প্রদর্শনের মাধ্যমে অধিবেশন শুরু হয়।

বাংলাদেশে ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত ও প্রতিনিধিদলের প্রধান চার্লস হোয়াইটলি শুধু দেশীয় কর্মসংস্থানের জন্য নয়, আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারের জন্যও বাংলাদেশি কর্মশক্তির সক্ষমতা বৃদ্ধিতে ইইউর প্রতিশ্রুতি তুলে ধরেন। তিনি ইইউতে বাংলাদেশি দক্ষ কর্মীদের বৈধ অভিবাসনের লক্ষ্যে অংশীদারত্বের ঘোষণা দেন। বাংলাদেশ ও প্রধান ইইউ সদস্যরাষ্ট্রগুলোর মধ্যে আসন্ন ট্যালেন্ট পার্টনারশিপ শিল্প খাতের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিতে উচ্চ দক্ষতাসম্পন্ন শ্রমশক্তি জোগানে ভূমিকা রাখবে বলে তিনি মনে করেন।

বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশনের মহাসচিব ফারুক আহমেদ দক্ষতা উন্নয়নে বেসরকারি খাতের অপরিহার্য ভূমিকার প্রসঙ্গ তুলে ধরেন। দক্ষতা উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে আরও শিক্ষানবিশের প্রয়োজন। তিনি মনে করেন, এই প্রক্রিয়ায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে কর্মসংস্থানে নিরবচ্ছিন্ন রূপান্তর সহজতর হবে। তিনি শিক্ষানবিশ মডেলগুলোকে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বাস্তবায়ন ও সম্প্রসারণে ব্যবসায়ীদের উৎসাহিত করতে প্রণোদনা দেওয়ার পরামর্শ দেন এবং শিল্পসংশ্লিষ্ট কারিগরি শিক্ষার ব্যাপক প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।

প্যানেল প্রতিনিধিরা ২০০৭ সাল থেকে দীর্ঘমেয়াদি অংশীদারত্বের জন্য বাংলাদেশ সরকার, আইএলও এবং উন্নয়ন অংশীদারদের প্রশংসা করেন। এর মধ্য দিয়ে জাতীয় দক্ষতা ব্যবস্থায় উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এসেছে। সরকারের উন্নয়ন দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে সংগতি রেখে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নকে ভবিষ্যতে আরও শক্তিশালী করতে কার্যকর অংশীদারত্ব অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন তাঁরা।