খুলনার দরকার গ্যাস-বিমানবন্দর-পর্যটনে আরও সরকারি বিনিয়োগ

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল আগামী ১ জুন জাতীয় সংসদে আগামী অর্থবছরের বাজেট পেশ করবেন। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট থেকে স্থানীয়ভাবে কী প্রত্যাশা করা হচ্ছে, তা জানতে ঢাকার বাইরের ব্যবসায়ী নেতাদের অভিমত প্রকাশ করছে প্রথম আলো। কাজী আমিনুল হক টানা ছয়বার খুলনা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। প্রথম আলোর কাছে জানিয়েছেন আগামী বাজেটে তাঁর প্রত্যাশার কথা।

বাজেট ২০২৩–২৪

দীর্ঘদিনেও খুলনায় শিল্পের বিকাশ না হওয়ার অন্যতম কারণ পাইপলাইনে গ্যাস সরবরাহের অনুপস্থিতি। জ্বালানির ওপর মাঝারি বা বড় শিল্পের নির্ভরতা অনেক বেশি। উৎপাদন খরচ কম না হলে উৎপাদিত পণ্য বাজারে টিকতে পারে না। গ্যাস সরবরাহ না থাকায় বিদ্যুৎ ও ফার্নেস অয়েল দিয়ে উৎপাদন চালাতে গিয়ে শিল্পপ্রতিষ্ঠানের উৎপাদন ব্যয় বেশি হয়। ঢাকা ও চট্টগ্রাম এলাকায় গ্যাস সরবরাহ থাকায় ওই সব এলাকায় অপেক্ষাকৃত কম খরচে পণ্য উৎপাদিত হয়। ফলে খুলনার শিল্প উদ্যোক্তারা অসম প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হচ্ছেন। গ্যাস ও জ্বালানির নিশ্চিত করা গেলে খুলনায় বড় শিল্প স্থাপনে বিনিয়োগকারীরা আগ্রহী হতেন। বাড়ত কর্মসংস্থান। মোটকথা, গ্যাস সরবরাহ করা হলে খুলনার চিত্র পাল্টে যাবে।

দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের স্বপ্নের পদ্মা সেতু ঢাকাকে খুলনার কাছাকাছি নিয়ে এসেছে। মানুষের কর্মঘণ্টা বেঁচে যাচ্ছে। ফেরির জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে না। সেই সঙ্গে পণ্যবাহী ট্রাক-পরিবহন অনায়াসে যাতায়াত করতে পারছে। মোংলা থেকে শুরু করে মাদারীপুর, শরীয়তপুর, গোপালগঞ্জের আশপাশের প্রচুর জায়গা দেশি-বিদেশি শিল্পপতিরা কিনে ফেলেছেন। কিছু শিল্প গড়ে উঠেছে। যোগাযোগব্যবস্থার উন্নতির কারণে মোংলা বন্দরের কার্যক্রম বেড়ে যাওয়ায় খুলনা-ঢাকা সড়কে যানজটও বাড়ছে। এ জন্য খুলনাঞ্চলে একটি বিমানবন্দর দরকার।

সাধারণত বিদেশি বিনিয়োগকারী ও ক্রেতারা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে চান। দেখা গেছে, বিমানবন্দর না থাকায় বিনিয়োগকারী ও বিদেশি ক্রেতারা খুলনায় আসতে চান না। পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) অধীন বিনিয়োগকারী না পাওয়ায় খুলনায় খানজাহান আলী বিমানবন্দর নির্মাণ প্রকল্প স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। খুলনা ও মোংলা বন্দরের স্বার্থে খানজাহান আলী বিমানবন্দর সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়ন করা উচিত বলে মনে করি।

খুলনায় বাণিজ্যের প্রধান দুই খাত চিংড়ি ও পাট। খুলনার প্রসিদ্ধ পাটশিল্প রক্ষার জন্য পাটকলগুলোর আধুনিকায়ন করা প্রয়োজন। মান্ধাতা আমলের প্রযুক্তি দিয়ে এ শিল্পকে টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয়। আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এই খাতকে এগিয়ে নিতে হবে। অন্যদিকে, চিংড়ি চাষে সমস্যা বিরাজ করছিল। তবে কাঁচামালের ঘাটতি কাটিয়ে চিংড়িশিল্পকে বাঁচাতে ‘ভেনামি’ চিংড়ি চাষ শুরু হয়েছে। তারপরও চিংড়িশিল্পের বিকাশে বাজেটের সহায়তা দরকার।

জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবিলা ও উপকূলীয় অঞ্চলের উন্নয়নে প্রায় প্রতিবছর বাজেটে বরাদ্দ থাকছে। খুলনা উপকূলে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ ও সুপেয় পানির প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে বাজেটে বরাদ্দ বাড়ানো প্রয়োজন। একই সঙ্গে বেড়িবাঁধ টেকসইভাবে নির্মাণের কাজ আরও দ্রুত করা দরকার।

পর্যটনের জন্য সুন্দরবন আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে। সুন্দরবনকেন্দ্রিক পর্যটনের বিকাশ না করা গেলে এ অঞ্চলের পূর্ণাঙ্গ উন্নয়ন হবে না, কর্মসংস্থানও বাড়বে না। খুলনা থেকে সুন্দরবন পর্যন্ত যাতায়াতকে আরও আধুনিক করা দরকার। খুলনা থেকে সুন্দরবনসংলগ্ন দাকোপের কালাবগী পর্যন্ত সড়কের উন্নয়ন খুব জরুরি। পর্যটকদের থাকার জন্য সুন্দরবনসংলগ্ন এলাকায় মানসম্মত রেস্টহাউস নির্মাণ করাও প্রয়োজন। মোটকথা, সুন্দরবনকেন্দ্রিক পর্যটনের জন্য এখন বাজেটে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ নিশ্চিত করা দরকার।

আগামী অর্থবছরের বাজেটে ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের করমুক্ত আয়ের সীমা চার লাখ টাকা করার দাবি জানাচ্ছি। রাজস্ব আয় বাড়ানোর জন্য করের পরিমাণ নয়, এর পরিধি বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দেওয়া উচিত। খুলনার অনেক ব্যবসায়ীকে এখনো ভ্যাট-ট্যাক্স নিবন্ধনের আওতায় আনা যায়নি। তাঁদের এর আওতায় আনতে ব্যবসায়ী নেতারা রাজস্ব কর্মকর্তাদের সহায়তা দিতে প্রস্তুত।
অনুলিখন: উত্তম মণ্ডল, খুলনা