সব খাতে ১৫% ভ্যাট চায় আইএমএফ 

গতকাল জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ভ্যাট ও আয়কর বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে সভা করে আইএমএফ। 

সব খাতে অভিন্ন হারে মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট চায় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। বার্ষিক লেনদেন তিন কোটি টাকার বেশি হয়, এমন প্রতিষ্ঠানের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপের প্রস্তাব দিয়েছে সংস্থাটি। পোশাক, পাদুকা, এলপিজি, মুঠোফোন, বিনোদন, খাবারের ওপর কম হারে ভ্যাট (সংকুচিত ভিত্তি মূল্যে) প্রত্যাহার করার সুপারিশও করেছে আইএমএফ। এমনকি প্রবাসী আয়ে কর বসানোর প্রস্তাব করেছে আইএমএফ।

আইএমএফের গবেষণা বিভাগের উন্নয়ন সামষ্টিক অর্থনীতি শাখার প্রধান ক্রিস পাপাজর্জিওয়ের নেতৃত্বে একটি দল গতকাল রোববার আগারগাঁওয়ের জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ভ্যাট ও আয়কর বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে সভা করেন। সভায় এসব পরামর্শ দেওয়া হয়েছে বলে দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে। 

সূত্রগুলো জানিয়েছে, এনবিআরের কর্মকর্তারা আইএমএফ প্রতিনিধিদলের কাছে তাঁদের মতামত তুলে ধরেছেন। এনবিআর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বাস্তবতার ভিত্তিতে পদক্ষেপ নিতে হবে। চাইলেই সব করছাড় প্রত্যাহার করা যাবে না বা কর আরোপ করা যাবে না। তবে সরকার রাজস্ব আদায় বৃদ্ধির বিষয়ে সচেষ্ট রয়েছে।

উৎপাদন খাতে ১৫ শতাংশ ভ্যাট হওয়া উচিত। তবে চিকিৎসক, আইনজীবী, রেস্টুরেন্ট সেবাসহ বেশ কিছু সেবা খাতে ভ্যাট–হার কমানো যেতে পারে। 
আহসান এইচ মনসুর, নির্বাহী পরিচালক, পিআরআই

আইএমএফ ভ্যাট, আয়কর ও কাস্টমস বিভাগের সার্বিক সংস্কারের পরামর্শ দিয়েছে। এর আগে বিভিন্ন খাতে করছাড় কমানোর জন্য নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দিয়েছিল আইএমএফ। সেসব বিষয়ে আগামী বাজেটে কী ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে, গতকালের বৈঠকে সে বিষয়ে জানতে চেয়েছেন আইএমএফের কর্মকর্তারা। আগামী অর্থবছরের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) দশমিক ৫ শতাংশের সমপরিমাণ অতিরিক্ত শুল্ক-কর আদায়ের শর্ত দিয়েছে আইএমএফ।

গত বছরের শুরুর দিকে বাংলাদেশের জন্য ঋণ অনুমোদন করে আইএমএফ। ২০২৬ সাল পর্যন্ত সাড়ে তিন বছরে মোট সাত কিস্তিতে পাওয়া যাবে ৪৭০ কোটি ডলার। এর মধ্যে দুই কিস্তির অর্থ পাওয়া গেছে। তৃতীয় কিস্তির অর্থ ছাড়ের আগে অর্থনীতি পর্যালোচনা করতে আইএমএফের মিশনটি এখন বাংলাদেশ সফর করছে। 

তথ্যপ্রযুক্তিতে করছাড় নয়

সব মিলিয়ে ২৭ ধরনের তথ্যপ্রযুক্তি সেবা এক যুগ ধরে কর অব্যাহতি সুবিধা পেয়ে আসছে। এখন সেই করছাড় প্রত্যাহারের পরামর্শ দিয়েছে আইএমএফ। কর অব্যাহতির এই সুবিধা চলতি অর্থবছরের ৩০ জুনে শেষ হচ্ছে। আইএমএফ গতকালের বৈঠক বলেছে, এর মেয়াদ যেন আর বাড়ানো না হয়।

তবে বৈঠকে এনবিআর কর্মকর্তারা বলেছেন, হুট করে সব করছাড় তুলে দেওয়া সম্ভব নয়। রয়েসয়ে করছাড় তোলা হবে। বিষয়টি নিয়ে এনবিআর পর্যালোচনা করছে।

শিল্পে করছাড়

২০২৫ সালে ৩৩টি শিল্প খাতের করছাড় প্রত্যাহার করতে আইএমএফ আগে পরামর্শ দিয়েছিল। গতকালের বৈঠকে আইএমএফ পুনরায় একই পরামর্শ দিয়েছে বলে জানা গেছে। আইএমএফ বলছে, উৎপাদন খাতের কর অবকাশ সুবিধা ২০২৫ সালের জুন মাসে শেষ হবে। এই মেয়াদ যেন আর নবায়ন না করা হয়। সার্বিকভাবে ২০২৭ সালের ৩০ জুনের মধ্যে সব ধরনের কর সুবিধা প্রত্যাহারের সুপারিশ করেছে আইএমএফ।

বাড়তি রাজস্ব আদায়

গতকালের বৈঠকে বলা হয়, আইএমএফের শর্ত অনুসারে আগামী অর্থবছরের স্বাভাবিক রাজস্ব প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি বাড়তি কর আদায় করতে হবে ১৫ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। এই বাড়তি অর্থ আদায়ে কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে, এনবিআরের কাছে তা জানাতে চেয়েছে আইএমএফ। এনবিআর কর্মকর্তারা মনে করেন, করের যাবতীয় বিধিবিধান প্রতিপালন নিশ্চিত করতে পারলেই বাড়তি শুল্ক-করের সিংহভাগ অর্থ আদায় করা সম্ভব হবে। 

অভিন্ন ভ্যাট–হারের বিষয়ে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর প্রথম আলোকে বলেন, ১৯৯১ সালের ভ্যাট আইনে অভিন্ন ১৫ শতাংশ ভ্যাট–হার আরোপের কথা বলা ছিল। ২০১২ সালের মূল আইনেও ১৫ শতাংশ ভ্যাট–হার ছিল। কিন্তু ব্যবসায়ীদের চাপে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী তা পরিবর্তন করেন।

আহসান এইচ মনসুর বলেন, উৎপাদন খাতে ১৫ শতাংশ ভ্যাট হওয়া উচিত। তবে চিকিৎসক, আইনজীবী, রেস্টুরেন্ট সেবাসহ বেশ কিছু সেবা খাতে ভ্যাট–হার কমানো যেতে পারে। কারণ, এসব খাতে মূল্য সংযোজন কম হয়।