ক্রেতা ও বিক্রি কমেছে ই–কমার্স খাতে

জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধিতে অনলাইনভিত্তিক ব্যবসায়ীদের বিক্রি কমেছে। বাড়তি খরচ সমন্বয় করতে তাঁদের পণ্য পৌঁছে দেওয়ার খরচ বাড়াতে হয়েছে।

ই–কমার্স
প্রতীকী ছবি

মূল্যস্ফীতির কারণে কয়েক মাস ধরে প্রায় সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়ছে। এর সঙ্গে খরচের বাড়তি খাত হিসেবে যোগ হয়েছে সাম্প্রতিক সময়ে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি। এতে পণ্যের দাম ও পরিবহনের খরচ বেড়েছে। এ কারণে ব্যবসায় মার খাচ্ছেন অনলাইনভিত্তিক ছোট উদ্যোক্তারা। এ খাতের বড়দের বিক্রিও আগের তুলনায় কমেছে।

ই–কমার্স খাতের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির কারণে তাঁদের ব্যবসায়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। বাড়তি খরচ সমন্বয় করতে তাঁদের পণ্য পৌঁছে দেওয়ার খরচ তথা কুরিয়ার চার্জ বাড়াতে হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন পণ্য ও সেবার ক্ষেত্রে যেসব ছাড় দিতেন, সেটিও বন্ধ করেছেন তাঁরা।

অনলাইনে নিত্যপণ্যের বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান ডেইলি গুডস। মূল্যবৃদ্ধির কারণে গত এক মাসে এটির বিক্রি প্রায় ৪০ শতাংশ কমেছে। নতুন গ্রাহকের পাশাপাশি কমেছে পুরোনো ও নিয়মিত গ্রাহকের সংখ্যাও।

ডেইলি গুডসের পরিচালন ব্যবস্থাপক আবদুল্লাহ আল মাসুদ প্রথম আলোকে জানান, তাঁদের নিয়মিত গ্রাহকেরা সাধারণত পুরো মাসের বাজার একসঙ্গে করেন। তাঁদের মধ্যে যাঁরা আগে ছয় কেজি আটা নিতেন, তাঁরা সেটি কমিয়ে এখন তিন কেজি নিচ্ছেন। গত মাসে তাঁদের কাছে ডিমের অর্ডার বা ফরমাশ ছিল ৩৬০ ডজনের। এ মাসে এখন পর্যন্ত (১৭ আগস্ট) ডিম বিক্রির ফরমাশ পেয়েছেন মাত্র ৪০ ডজনের।

গ্রাহকের জন্য ডেলিভারি চার্জ বাড়িয়েছেন কি না, জানতে চাইলে মাসুদ বলেন, ‘আমরা বাইসাইকেলে করে পণ্য পৌঁছে দিই। এ জন্য ডেলিভারি চার্জ বাড়াইনি। তবে আগে বিভিন্ন পণ্যে মূল্যছাড় দিতাম, সেটি বন্ধ করেছি। এখন পণ্যের গায়ের মূল্য অনুসারে বিক্রি করছি।’

জ্বালানির দাম বেড়ে যাওয়ায় কুরিয়ার চার্জ বাড়িয়েছে অনলাইনে দেশীয় শাড়ি বিক্রির প্রতিষ্ঠান ‘রঙপল্লী’। প্রতিষ্ঠানটির সহপ্রতিষ্ঠাতা মো. মোক্তার হোসেন প্রথম আলোকে জানান, সম্প্রতি তাঁরা পণ্য সরবরাহের মাশুল ২০ থেকে ৩০ শতাংশ বাড়িয়েছেন।

মোক্তার হোসেন বলেন, ‘ঢাকার মধ্যে আমাদের পণ্য পৌঁছে দেওয়ার মাশুল আগে ছিল ৫০ টাকা। সেটি বাড়িয়ে এখন ৬৫ টাকা করতে হয়েছে। আর ঢাকার বাইরে সরবরাহ মাশুল ছিল ১০০ টাকা, সেটি এখন করা হয়েছে ১২০ টাকা।

এ ছাড়া মূল্যস্ফীতির কারণে পণ্যের ক্রয়াদেশ প্রায় ৩৫ শতাংশ কমেছে বলে জানান মোক্তার হোসেন। তিনি বলেন, ‘আগে দৈনিক ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকার শাড়ি বিক্রি করতাম। এখন তা নেমে এসেছে ৩০ থেকে ৪০ হাজারে।’ গ্রাহকদের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাওয়ায় তাঁদের বিক্রি কমে গেছে বলে মনে করেন এই ই–কমার্স ব্যবসায়ী।

ফেসবুক পেজ ব্যবহার করে হাতে বানানো অলংকার বিক্রি করেন মরিয়ম আক্তার। এই নারী উদ্যোক্তা জানান, গত দুই–তিন মাসে তাঁর ক্রেতার সংখ্যা প্রায় ১০ শতাংশ কমে গেছে। এখন বাড়তি খরচ সামাল দিতে কুরিয়ার খরচ বাড়ানোর চিন্তা করছেন তিনি।

অনলাইনে ট্রাক ভাড়ার মার্কেটপ্লেস হিসেবে কাজ করছে ‘ট্রাক লাগবে’। প্ল্যাটফর্মটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এনায়েত রসিদ জানান, দেশে জ্বালানির সাম্প্রতিক মূল্যবৃদ্ধির পরে তাঁদের ট্রাক ভাড়া ২০ থেকে ২৫ শতাংশ বেড়েছে। এর মধ্যে বড় ট্রাকের ভাড়া ১৮–২০ শতাংশ ও ছোট ট্রাকের ভাড়া ২০–২৫ শতাংশ করে বেড়েছে। এনায়েত রশিদ আরও বলেন, ‘মার্কেটপ্লেস পরিচালনার পাশাপাশি আমরা নিজেরাও বিভিন্ন করপোরেট কোম্পানিতে চুক্তিভিত্তিক ট্রাক ভাড়া দিয়ে থাকি। জ্বালানির দাম বাড়ায় আমরা কোম্পানিগুলোকে ভাড়া বাড়ানোর অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দিয়েছি।’

মূল্যস্ফীতির প্রভাব পড়েছে বড় বড় ই–কমার্স ব্যবসাতেও। অনলাইনভিত্তিক বেচাকেনার অন্যতম বড় প্ল্যাটফর্ম চালডাল ডটকমের সহপ্রতিষ্ঠাতা ওয়াসিম আলীম জানান, বিক্রি নিয়ে তাঁরা এখন চাপের মধ্যে আছেন।