জমির নিবন্ধন ব্যয় কমছে
জমিজমা বিক্রিতে অপ্রদর্শিত অর্থ কমিয়ে আনতে নিবন্ধন ব্যয় কিছুটা কমানোর ঘোষণা দিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। দুই বছর আগেও জমির নিবন্ধন ব্যয় কিছুটা কমানো হয়েছিল। তখন জমি নিবন্ধনের খরচ তথা করের পরিমাণ মৌজা ভিত্তিতে করা হয়।
গতকাল সোমবার অর্থ উপদেষ্টা আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করেন। এতে জমি বিক্রেতার হাতে অপ্রদর্শিত অর্থ সৃষ্টি কমাতে প্রকৃত বিক্রয়মূল্যে সম্পত্তি নিবন্ধনে উৎসাহ দিতে মূলধনি মুনাফা কর বা উৎসে কর কমানো হয়েছে।
বর্তমানে জমি বা সম্পত্তি হস্তান্তরে উৎসে কর ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে ৮ শতাংশ, অন্যান্য সিটি করপোরেশন এলাকার জন্য ৬ শতাংশ এবং পৌরসভা পর্যায়ে ৪ শতাংশ। সেটি কমিয়ে যথাক্রমে ৬, ৪ ও ৩ শতাংশ করা হয়েছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ২০২৩ সালে ঢাকা, চট্টগ্রাম, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন এলাকা ও এর বাইরে অবস্থিত জমিকে মৌজা অনুযায়ী ক থেকে ঙ—এই পাঁচ শ্রেণিতে ভাগ করে। তার পর থেকে মৌজার অবস্থান অনুসারে জমির শ্রেণিবিভাগ করে কর নির্ধারণ করা হয়। এ নিয়মে কর কমে যাওয়ায় জমি কেনাবেচায় ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়েই লাভবান হন।
এনবিআরের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী ক শ্রেণির মধ্যে রয়েছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ), গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ, গণপূর্ত অধিদপ্তর ও ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের নিয়ন্ত্রণাধীন বাণিজ্যিক এলাকা। আর ক শ্রেণিতে অন্তর্ভুক্ত সংস্থাগুলোর নিয়ন্ত্রণাধীন আবাসিক এলাকাগুলোকে রাখা হয়েছে খ শ্রেণিতে। অন্যদিকে ক শ্রেণিতে উল্লেখিত সংস্থাগুলোর নিয়ন্ত্রণে নেই কিন্তু আবাসন কোম্পানি বা ভূমি উন্নয়নকারী প্রতিষ্ঠিত বাণিজ্যিক এলাকাকে রাখা হয়েছে গ শ্রেণিতে। এসব স্থানের (গ শ্রেণিভুক্ত) আবাসিক এলাকাকে রাখা হয়েছে ঘ শ্রেণিতে। আর ক, খ, গ, ঘ ছাড়া বাকি সব জমিকে ঙ শ্রেণিতে রাখা হয়েছে।
জানা যায়, বর্তমানে ঢাকার গুলশান, বনানী, মতিঝিল ও তেজগাঁও থানার মৌজার সব শ্রেণির জমির ক্ষেত্রে দলিলে উল্লেখিত জমির মূল্যে ৮ শতাংশ হারে উৎসে কর ধার্য রয়েছে। সেটিকে হ্রাস করে ৬ শতাংশ করার কথা বলা হয়েছে বাজেটে। একইভাবে ধানমন্ডি, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল, রমনা, পল্টন, নিউমার্কেট ও কলাবাগান থানার অন্তর্গত মৌজার ক্ষেত্রে জমির মূল্যে ৮ শতাংশের পরিবর্তে এখন ৬ শতাংশ হারে কর আরোপ করা হবে।
ঢাকা জেলার কাফরুল, মোহাম্মদপুর, সূত্রাপুর, যাত্রাবাড়ী, উত্তরা, ক্যান্টনমেন্ট, চকবাজার, কোতোয়ালি, লালবাগ, খিলগাঁও, শ্যামপুর ও গেন্ডারিয়া মৌজার ক, খ, গ ও ঘ শ্রেণির জমি নিবন্ধনে করহার ভূমির মূল্যের ৮ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৬ শতাংশ হবে। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে এসব এলাকার ঙ শ্রেণির মৌজার জমি নিবন্ধনে করহার ভূমির মূল্যের ৮ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৬ শতাংশ করা হয়। বাজেটের ঘোষণা অনুযায়ী এই করহার কমে ৪ শতাংশে দাঁড়াবে।
ঢাকা বিমানবন্দর, উত্তরা পশ্চিম, মুগদা, রূপনগর, ভাষানটেক, বাড্ডা, পল্লবী, ভাটারা, শাহজাহানপুর, মিরপুর, দারুসসালাম, দক্ষিণখান, উত্তরখান, তুরাগ, শাহ আলী, সবুজবাগ, কদমতলী, কামরাঙ্গীরচর, হাজারীবাগ, ডেমরা ও আদাবর এবং গাজীপুরের জয়দেবপুর, নারায়ণগঞ্জ সদর ও রূপগঞ্জ থানার ক, খ, গ ও ঘ শ্রেণির জমি নিবন্ধনে করহার ভূমির মূল্যের ৮ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৬ শতাংশ হবে। অন্যদিকে এসব এলাকার ঙ শ্রেণির জমি নিবন্ধনে জমির মূল্যের ৬ শতাংশের পরিবর্তে ৪ শতাংশ হবে।
ঢাকা, চট্টগ্রাম, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের এসব এলাকা বাদে অন্যান্য সিটি করপোরেশন ও জেলা সদরে জমি নিবন্ধনে জমির দামের ৬ শতাংশের পরিবর্তে এখন ৪ শতাংশ হারে কর দিতে হবে। এর বাইরে অন্য যেকোনো পৌরসভায় ৪ শতাংশের পরিবর্তে ৩ শতাংশ হারে জমি নিবন্ধন কর দিতে হবে গ্রাহকদের।