দেশে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় ৮০০ কোটি ডলারের তহবিল হচ্ছে

দেশে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় সরকার বিভিন্ন আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান, দ্বিপক্ষীয় উন্নয়ন সহযোগী ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো মিলে একটি তহবিল গঠনের ঘোষণা দিয়েছে। সবার অর্থায়নে গড়ে উঠবে ‘বাংলাদেশ জলবায়ু ও উন্নয়ন প্ল্যাটফর্ম’ (বিসিডিপি) নামের এই তহবিল, যার আকার হবে প্রায় ৮০০ কোটি মার্কিন ডলার। আর তহবিলের অর্থ খরচ হবে সহযোগিতামূলক পদ্ধতিতে।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পক্ষ থেকে গতকাল ৩ ডিসেম্বর রোববার এক বিবৃতিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা বলা হয়, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশ এখন একটি ঝুঁকিপূর্ণ দেশ। তাই বিসিডিপি বাস্তবায়নে আইএমএফের সহযোগিতা ও পরামর্শ থাকবে সব সময়। আর অর্থ ব্যয় হবে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায়, অর্থাৎ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে যেসব জনগোষ্ঠীর জীবনমান ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে তাদের জন্য।

বিবৃতি অনুযায়ী এই উদ্যোগে আইএমএফ ছাড়া অন্য যেসব সংস্থা রয়েছে, সেগুলো হচ্ছে বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), বিশ্বব্যাংকের সহযোগী সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশন (আইএফসি), বহুপক্ষীয় বিনিয়োগ নিশ্চয়তা এজেন্সি (এমআইজিএ), এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংক (এআইআইবি), এজেন্সি ফ্র্যান্সাইস দ্য ডেভেলপমেন্ট (এএফডি), ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও ইউরোপীয় বিনিয়োগ ব্যাংক (ইআইবি), গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ড (জিসিএফ), কোরিয়া সরকার এবং জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা)।

বিবৃতিটির কথা জানিয়ে প্রথম আলোর পক্ষ থেকে বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ও আইএমএফের সাবেক কর্মকর্তা আহসান এইচ মনসুরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি বলেন, ‘আমি এটা একনজর পড়েছি। খুশির বিষয় যে বড় একটা প্রতিশ্রুতির কথা শোনা গেল। আসার পর এ অর্থ ব্যবহার করতে পারলেই হলো। যেহেতু নতুন উদ্যোগ, তাই বেশি কিছু বলা মুশকিল। তবে কোন ধরনের প্রকল্পে, কীভাবে অর্থ খরচ হবে, তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’ প্রকল্পগুলোর অর্থ খরচের বিষয়ে সরকারি সংস্থাগুলোকে গণমাধ্যম যেন সব সময় নজরদারির মধ্যে রাখে, এ আহ্বানও জানান আহসান এইচ মনসুর।

আইএমএফের পাঠানো বিবৃতি বিশ্লেষণে দেখা যায়, সবচেয়ে বেশি সহায়তা দেবে এডিবি। সংস্থাটির পক্ষ থেকে এখন ৪০ কোটি মার্কিন ডলার প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। ২০২৩ সালের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে ১৯০ কোটি ডলার, যার ৫৩ শতাংশই জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় ব্যয় করার কথা। এ ছাড়া ২০২৪ থেকে ২০২৬ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে এডিবি ৫৫০ কোটি ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, যার অর্ধেক অর্থাৎ ৫০ শতাংশই থাকছে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায়।

মোট ৮০০ কোটি ডলারের মধ্যে আইএমএফের অংশ হচ্ছে ১৪০ কোটি ডলার। গত জানুয়ারিতে আইএমএফ যে ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন করেছে, তার মধ্যেই এটি অন্তর্ভুক্ত। এ ছাড়া বিশ্বব্যাংকের ১০০ কোটি, এআইআইবির ৪০ কোটি এবং কোরীয় সরকারের ৪ কোটি ডলার থাকছে। অন্য সংস্থাগুলোরও কমবেশি অর্থায়ন থাকছে।

বিবৃতিতে আইএমএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা বলেন, ‘জলবায়ু সহনশীলতা, অভিযোজন, প্রস্তুতি ও সংরক্ষণকে আরও শক্তিশালী করতে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নিচ্ছে। আমরা জলবায়ু কর্মসূচি বাস্তবায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় বৈশ্বিক সম্মিলিত উদ্যোগের প্রচারে বাংলাদেশের প্রচেষ্টার প্রশংসা করি।’

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় বড় অংকের সহায়তা আসছে
ফাইল ছবি

এ নিয়ে কথা বলেছেন বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট অজয় বাঙ্গাও। তিনি বলেন, ‘জলবায়ু ঝুঁকি বৃদ্ধির ঘটনা বাংলাদেশের লাখ লাখ মানুষের জীবন ও জীবিকাকে প্রভাবিত করছে। তবে দুর্যোগ প্রস্তুতি ও অভিযোজনের ক্ষেত্রে দেশটি ভালো করছে। আজকের (রোববার) ঘোষণার মধ্য দিয়ে জলবায়ু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় অংশীদারদের সঙ্গে সহযোগিতার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের দৃঢ় প্রতিশ্রুতি আবারও প্রকাশিত হলো। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলার বিষয়টি অত্যন্ত জরুরি। এ জন্য পারস্পরিক জ্ঞান ভাগ করে নেওয়া ও সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোকে অর্থায়নের জন্য আমাদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে।’

এডিবি প্রেসিডেন্ট মাসাতসুগু আসাকাওয়া বলেন, বৈশ্বিক জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবিলায় যথাযথ পদক্ষেপ ও শক্তিশালী অংশীদারত্ব প্রয়োজন। যথাযথ নেতৃত্ব ও প্রতিশ্রুতির মাধ্যমে জলবায়ু কর্মসূচি বাস্তবায়নে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অন্য সব উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে মিলে এডিবিও বাংলাদেশকে সহায়তা করবে।

এ ছাড়া স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) নাসের এজাজ বিজয় বলেন, ‘বাংলাদেশে জলবায়ু অভিযোজনের জন্য অর্থায়ন ও প্রশমনের উদ্যোগে সমর্থন করতে পেরে আমরা আনন্দিত। পরিবেশবান্ধব, জলবায়ু সহনশীল ও স্বল্প কার্বনের অর্থনৈতিক রূপান্তরকে ত্বরান্বিত করতে সব অংশীদারের সম্মিলিত নেওয়া উদ্যোগ প্রয়োজন।’