তিন সফল গুণীজনকে সংবর্ধনা

বণিক বার্তা ও গবেষণা সংস্থা বিআইডিএস আয়োজিত গুণীজন সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সংবর্ধিত ব্যক্তি ও তাঁদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ও আমন্ত্রিত অতিথিরা। গতকাল রাতে ঢাকার র‍্যাডিসন হোটেলেছবি: প্রথম আলো

বাংলাদেশে এখন সজ্জনতা, পেশাদারত্ব ও দায়িত্ববোধের প্রয়োজনীয়তা আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। যাঁদের মধ্যে এসব গুণ রয়েছে, তাঁদের সম্মানিত করার পাশাপাশি এমন মানুষ তৈরি করতে হবে, যাঁরা মেধা, নৈতিকতা ও দেশপ্রেম দিয়ে দেশকে এগিয়ে নেবেন।

দৈনিক বণিক বার্তা ও বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) যৌথভাবে আয়োজিত ‘গুণীজন সংবর্ধনা’র অষ্টম আসরে এমন অভিমত উঠে আসে। এবারের আসরে অর্থনীতি, ব্যবসা, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ দেশের বিভিন্ন খাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনজন কৃতী গুণীজনকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। এর মধ্যে দেশের বেসরকারি খাতের সফল উদ্যোক্তা ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সৈয়দ মঞ্জুর এলাহীকে মরণোত্তর সম্মাননা জানানো হয়। অন্য দুজন হলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আমিরুল ইসলাম চৌধুরী ও বিজ্ঞানী ফেরদৌসী কাদরী।

গতকাল মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর একটি পাঁচ তারকা হোটেলে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে স্বাগত বক্তব্য দেন বিআইডিএসের মহাপরিচালক এ কে এনামুল হক। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বণিক বার্তার সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ। সহযোগিতায় ছিল ইউনাইটেড ফাইন্যান্স ও প্রাইম ব্যাংক।

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আনিসুজ্জামান চৌধুরী; সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) নির্বাহী চেয়ারম্যান হোসেন জিল্লুর রহমান; সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান ও নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন; ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স (আইসিসি), বাংলাদেশের সভাপতি মাহবুবুর রহমান; মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এমসিসিআই) সভাপতি কামরান টি রহমান; বিআইডিএসের মহাপরিচালক এ কে এনামুল হক; সাবেক সচিব ও বাংলাদেশ একাডেমি অব সায়েন্সের ফেলো হাসিনা খান প্রমুখ।

সৈয়দ মঞ্জুর এলাহীর পক্ষে তাঁর ছেলে সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর সম্মাননা গ্রহণ করেন। অধ্যাপক আমিরুল ইসলাম চৌধুরী, বিজ্ঞানী ফেরদৌসী কাদরীসহ তিনজনের হাতে সম্মাননা ক্রেস্ট তুলে দেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, শিক্ষক, গবেষক ও অর্থনীতিবিদ আমিরুল ইসলাম চৌধুরী দীর্ঘ কর্মজীবনে নীতি প্রণয়নসহ দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। আর বিজ্ঞানী ফেরদৌসী কাদরী টিকা উদ্ভাবন, পরীক্ষণ ও প্রয়োগ এবং দেশে সংক্রামক রোগ নিয়ে গবেষণায় উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন।

অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, অধ্যাপক আমিরুল ইসলাম চৌধুরী একজন অত্যন্ত বিনয়ী ও জ্ঞানী মানুষ। ফেরদৌসী কাদরী কাজপাগল ও নিবেদিতপ্রাণ বিজ্ঞানী। আর সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী ছিলেন দক্ষ ও দৃঢ়চেতা ব্যবস্থাপক। স্বল্পভাষী হলেও তাঁর কথাবার্তায় ছিল দৃঢ়তা। তিনজনই প্রবল দেশপ্রেমিক এবং বাংলাদেশকে গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখতেন।

পিপিআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, আজকের বাংলাদেশে তিনটি গুণ সবচেয়ে জরুরি—সজ্জনতা, পেশাদারত্ব ও দায়িত্ববোধ। অধ্যাপক আমিরুল ইসলাম চৌধুরী ছিলেন এসব গুণের উজ্জ্বল উদাহরণ। তিনি সর্বোচ্চ পেশাদারত্ব বজায় রেখে দায়িত্বশীলতার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।

সম্মাননা পাওয়ার প্রতিক্রিয়ায় অধ্যাপক আমিরুল ইসলাম চৌধুরী জানান, এ আয়োজনে উপস্থিত হয়ে তিনি আনন্দিত। তিনি সবাইকে ধন্যবাদ জানান।

বিজ্ঞানী ফেরদৌসী কাদরী জানান, তিনি নিজেকে খুব সাধারণ মানুষ মনে করেন এবং কাজ করতেই বেশি ভালোবাসেন। তিনি রাজনীতি করেন না বা বোঝেন না, তবে দেশকে গভীরভাবে ভালোবাসেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ থেকে পাওয়া স্বীকৃতি তাঁর কাছে যেকোনো আন্তর্জাতিক পুরস্কারের চেয়েও বেশি মূল্যবান।

সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর বলেন, আজ যাঁদের সম্মাননা দেওয়া হয়েছে, তাঁদের জীবন থেকে তিনটি গুণ বিশেষভাবে শেখার আছে—দেশপ্রেম, নৈতিকতা ও মেধা। তিনি জানান, তাঁর বাবা সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত বলতেন, সবকিছুর আগে দেশ। নৈতিকতা ছিল তাঁদের জীবনের সবচেয়ে বড় মূল্যবোধ। নিজেদের মেধা ও পরিশ্রম দিয়েই তাঁরা সব অর্জন করেছেন।

আইসিসি বাংলাদেশের সভাপতি মাহবুবুর রহমান বলেন, সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী নীরবে ব্যবসায়িক নেতৃত্ব দিয়ে দেশকে এগিয়ে নিতে বড় ভূমিকা রেখেছেন। কেয়ারটেকার সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে তিনি গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছেন এবং সরকারকে বিতর্কের ঊর্ধ্বে রাখতে অনন্য অবদান রেখেছেন।

সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, অধ্যাপক আমিরুল ইসলাম চৌধুরী শুধু শ্রেণিকক্ষের শিক্ষক নন, বাস্তব জীবনেরও শিক্ষক। অর্থনীতিকে তত্ত্বের গণ্ডি পেরিয়ে বাস্তব জীবনের সঙ্গে যুক্ত করার শিক্ষা তিনি ছাত্রদের দিয়েছেন।

সাবেক সচিব হাসিনা খান বলেন, বিজ্ঞানে অবহেলিত একটি দেশে ফেরদৌসী কাদরীর মতো আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বিজ্ঞানীকে সম্মাননা জানানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে একজন নারী বিজ্ঞানী হিসেবে তাঁর অবদান দেশের জন্য পরম সৌভাগ্যের।