আমদানি করা পেঁয়াজ গেল কোথায়

পেঁয়াজপ্রথম আলো ফাইল ছবি

ভারতের রপ্তানি বন্ধের পর পাইকারি বাজারে প্রতিবেশী এই দেশ থেকে আমদানি করা পেঁয়াজের দেখা মিলছে কম। খুচরা দোকানেও এখন পেঁয়াজ নাই নাই অবস্থা। অথচ ৭ ডিসেম্বর ভারতের রপ্তানি বন্ধের পর স্থলবন্দর দিয়ে গত রোববারও পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। পেঁয়াজ এসেছে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়েও।

ব্যবসায়ীরা জানান, পেঁয়াজ পচনশীল পণ্য হওয়ায় আমদানির পর যত দ্রুত সম্ভব বাজারজাতের চেষ্টা করা হয়। তবে আমদানিকারক থেকে আড়ত ও খুচরা দোকান হয়ে ভোক্তার কাছে পেঁয়াজ পৌঁছাতে ৭ থেকে ১০ দিন সময় লাগে। এ হিসাবে বাজারজাত প্রক্রিয়ার নানা ধাপে গত ৭ থেকে ১০ দিন সময়ে আমদানি করা পেঁয়াজ থাকার থাকা।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) হিসাবে দেখা যায়, ডিসেম্বরের প্রথম ১০ দিনে স্থলবন্দর ও সমুদ্রবন্দর দিয়ে পেঁয়াজ খালাস হয়েছে ২৩ হাজার ১৪৪ টন বা ২ কোটি ৩১ লাখ কেজি। এর মধ্যে শেষ ছয় দিনে (৪-১০ ডিসেম্বর) খালাস হয় ১ কোটি ৫৭ লাখ কেজি পেঁয়াজ বা ১৫ হাজার ৭১০ টন। ছয় দিনের হিসাব আমলে নেওয়া হলেও বাজারে অন্তত কোটি কেজি পেঁয়াজ থাকার কথা।

৭ ডিসেম্বর ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের পরের দিন সন্ধ্যা থেকেই বাজারে সরবরাহ কমে যায়। চট্টগ্রামে দোকানভর্তি পেঁয়াজের বড় অংশ সরিয়ে ফেলেন অনেকে। এই সংকটের কারণে দামও বাড়তে থাকে লাফিয়ে লাফিয়ে। তবে হঠাৎ করে এত পেঁয়াজ কোথায় গেল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের অভিযানের পর অবশ্য কিছু পেঁয়াজের খোঁজ মেলে। যেমন চট্টগ্রামের পাহাড়তলী বাজারে গত রোববার মেসার্স বাছামিয়া সওদাগরের দোকানে মূল্যতালিকায় লেখা ছিল ‘পেঁয়াজ নেই’। তবে অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা তাঁর গুদামে ৩৬ বস্তা পেঁয়াজ খুঁজে পান। এসব বস্তায় ছিল প্রায় ১ হাজার ৭০০ কেজি পেঁয়াজ। একই অবস্থা দেখা গেছে খাতুনগঞ্জের আরও কিছু পাইকারি আড়তেও।

জানতে চাইলে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম কার্যালয়ের উপপরিচালক মোহাম্মদ ফয়েজ উল্যাহ প্রথম আলোকে বলেন, ‘চট্টগ্রামের দুই পাইকারি আড়তের অনেক দোকানে আমরা দেখেছি পেঁয়াজ নেই, তবে গুদামে লুকিয়ে রাখা পেঁয়াজ পেয়েছি। ভারত রপ্তানি বন্ধ করলেও এত দ্রুত পেঁয়াজের সরবরাহ কমার কথা নয়। কারণ, ৭-১০ দিনের আমদানি করা পেঁয়াজ বাজার ব্যবস্থায় নানা ধাপে থাকার কথা।’

বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ হঠাৎ কমে গেল কেন জানতে চাইলে খাতুনগঞ্জে পেঁয়াজের আড়ত হামিদুল্লাহ মিঞা মার্কেটের ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইদ্রিস প্রথম আলোকে বলেন, দাম বাড়ার কারণে খাতুনগঞ্জের পাইকারি আড়তে পেঁয়াজের সরবরাহ এমনিতেই কম ছিল। তবে এখন দেশি পেঁয়াজের ফলন উঠতে শুরু করেছে। পেঁয়াজের সরবরাহ খুব দ্রুত বাড়বে।

স্থলবন্দর ও সমুদ্রবন্দর দিয়ে আমদানি হওয়া পেঁয়াজ মূলত ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের কয়েকটি এলাকার পাইকারি আড়ত থেকে সারা দেশে সরবরাহ হয়। সরবরাহ ব্যবস্থায় আড়ত থেকে পাইকারি বাজারে এবং পরে পাইকারি দোকান থেকে খুচরা বিক্রেতাদের হাত ঘুরে পেঁয়াজ ক্রেতার কাছে পৌঁছায়।