ছয় বছরে বাড়ল তিন গুণ

বিদায়ী ২০২১-২২ অর্থবছরে রেকর্ড পরিমাণ বিদেশি সহায়তা এসেছে। এই সহায়তা প্রথমবারের মতো এক হাজার কোটি ডলার ছাড়াল।

বিদায়ী ২০২১-২২ অর্থবছরে রেকর্ড পরিমাণ বিদেশি ঋণ দেশে এসেছে। এ অর্থবছরে প্রথমবারের মতো বিদেশি সহায়তার পরিমাণ ১ হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়েছে। গত জুন পর্যন্ত বিভিন্ন দাতা সংস্থা ও দেশের কাছ থেকে সব মিলিয়ে প্রায় ১ হাজার ১১ কোটি ডলার ঋণসহায়তা পেয়েছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে ঋণ ৯৮১ কোটি ডলার, আর ৩০ কোটি ডলার অনুদান। এখন আর আগের মতো অনুদান দেয় না উন্নয়ন সহযোগীরা। গত ছয় বছরে দেশে বার্ষিক বিদেশি ঋণপ্রবাহ প্রায় তিন গুণ বেড়েছে। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

ইআরডি সূত্রে জানা গেছে, বিদায়ী অর্থবছরে সহজ শর্তে ঋণ দেয় এমন সংস্থা ও দেশগুলো বেশি অর্থ ছাড় করেনি। চীন ও রাশিয়ার মতো কঠিন শর্তের ঋণই বেশি ছাড় হয়েছে। ফলে অর্থ ছাড়ে চীন ও রাশিয়া শীর্ষ পাঁচে ঢুকে গেছে।

দেশের লেনদেন ভারসাম্যে (বিওপি) বড় ধরনের চাপ আছে, তাই পাইপলাইনে থাকা বিদেশি সহায়তা ছাড়ে আরও বেশি উদ্যোগী হতে হবে।
সেলিম রায়হান, নির্বাহী পরিচালক, সানেম

অর্থনীতি এখন চাপের মধ্যে আছে। ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছে অর্থসহায়তা চেয়েছে বাংলাদেশ। আনুমানিক সাড়ে চার শ কোটি ডলার ঋণ নেওয়ার বিষয়ে কথাবার্তা হচ্ছে সংস্থাটির সঙ্গে। বিশ্বব্যাংক ও এডিবির সঙ্গেও ১৭০ কোটি ডলারের বাজেটসহায়তা নিয়ে আলোচনা চলছে। এমন অবস্থায় এক বছরেই এক হাজার কোটি ডলারের বেশি অর্থ ছাড় হয়েছে। পাইপলাইনে আছে বিভিন্ন দাতা সংস্থা ও দেশের প্রতিশ্রুত ৪ হাজার ৮০০ কোটি ডলার।

এ বিষয়ে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান প্রথম আলোকে বলেন, বিদায়ী অর্থবছরে বিদেশি সহায়তা বেশি ছাড় হয়েছে। এখন যেহেতু দেশের লেনদেন ভারসাম্যের (বিওপি) বড় ধরনের চাপ আছে, তাই পাইপলাইনে থাকা বিদেশি সহায়তা ছাড়ে আরও বেশি উদ্যোগী হতে হবে। এ জন্য প্রকল্প বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সংস্কার করা উচিত।

মোট পাঁচ দেশ ও সংস্থা গত অর্থবছরে ১০০ কোটি ডলারের বেশি ছাড় করেছে। তার মধ্যে রয়েছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), জাপান, বিশ্বব্যাংক, রাশিয়া ও চীন। বিদায়ী অর্থবছরে সবচেয়ে বেশি অর্থ ছাড় করেছে এডিবি। সংস্থাটি ২৫৬ কোটি ডলার দিয়েছে। এ ছাড়া জাপান ২২১ কোটি ডলার, বিশ্বব্যাংক ১৬৭ কোটি ডলার, রাশিয়া ১২১ কোটি ডলার ও চীন ১০০ কোটি ডলার দিয়েছে বাংলাদেশকে। এর মধ্যে রাশিয়া ও চীনের ঋণের শর্ত কঠিন। এই দুটি দেশের ঋণ সুদাসলসহ ১০ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে শোধ করতে হবে। অন্যদের ঋণ ৩০ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে পরিশোধ করতে হয়।

ছয় বছরে তিন গুণ

ছয় বছরে বার্ষিক বিদেশি ঋণের প্রবাহ তিন গুণ বেড়েছে। ইআরডি সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে সব মিলিয়ে ৩৩৯ কোটি ডলার
পেয়েছিল বাংলাদেশ। এরপর প্রতিবছরই এই বিদেশি সহায়তা ছাড়ের পরিমাণ বেড়েছে। সর্বশেষ বিদায়ী অর্থবছরে তা প্রথমবারের মতো হাজার কোটি ডলার ছাড়াল। এ ছাড়া ২০২০-২১ অর্থবছরে ৭৯৬ কোটি ডলার, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৭২৭ কোটি ডলার, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৬২০ কোটি ডলার, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৬১০ কোটি ডলার ছাড় হয়েছে। আর ঋণের সুদাসল পরিশোধও বেড়েছে। গত ছয় বছরে সুদাসল পরিশোধেও খরচ বেড়েছে দ্বিগুণ। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল ১১৪ কোটি ডলার। বিদায়ী অর্থবছরে তা ২০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যায়।