ফাইল ছবি

চলতি ২০২৩–২৪ অর্থবছরে প্রায় ২০০ কোটি মার্কিন ডলারের বাজেট–সহায়তা পেতে পারে বাংলাদেশ। এই সহায়তা দেশীয় মুদ্রায় প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা (প্রতি ডলার ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা ধরে)। বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংকসহ (এআইআইবি) জাপানি ও ফরাসি সাহায্য সংস্থাগুলো থেকে এই বাজেট–সহায়তা আশা করা হচ্ছে। তবে এ জন্য ব্যাংক ও আর্থিক খাত এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠায় আইনি সংস্কার করতে হবে। পূরণ করতে হবে বিভিন্ন খাতে বড় ধরনের সংস্কারের শর্ত।

সরকারি ও বেসরকারি দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, ডিসেম্বর মাসের মধ্যে এডিবির কাছ থেকে ১০০ কোটি ডলারের বেশি ছাড় হতে পারে, যা বর্তমান বাজার মূল্যে ১১ হাজার কোটি টাকার মতো। বাকি অর্থ মিলবে অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধে।

কোভিড মহামারি শুরু হওয়ার পর জরুরি ভিত্তিতে বাজেট–সহায়তা চায় সরকার। দেশের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারই ছিল এই সহায়তা চাওয়ার প্রধান উদ্দেশ্য। সে অনুযায়ী গত কয়েক বছরে এডিবি, বিশ্বব্যাংকসহ বিভিন্ন ঋণদাতা সংস্থার কাছ থেকে অন্তত ৩০০ কোটি ডলারের বাজেট–সহায়তা মিলেছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, চলতি অর্থবছরে সব মিলিয়ে ১৮৩ কোটি ডলার পাওয়ার কথা। এর মধ্যে এডিবি ১১০ কোটি, বিশ্বব্যাংক ৫০ কোটি ও জাপান সাড়ে ২২ কোটি ডলার দেবে। এ ছাড়া বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে নতুন বাজেট–সহায়তা নিয়ে প্রাথমিক কথাবার্তা চলছে বলে জানা গেছে। এর পাশাপাশি ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকার জোট ব্রিকসের নেতৃত্বাধীন নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের কাছ থেকেও অর্থ পাওয়ার প্রক্রিয়া চলমান।

ডলার–সংকটসহ অর্থনীতিতে চাপের সময় বিদেশি ঋণদাতা সংস্থার কাছ থেকে বাজেট–সহায়তা বাবদ ঋণ নেওয়া খারাপ নয়। কারণ, বিদেশিদের কাছে না গেলে বাংলাদেশ ব্যাংক টাকা ছাপাত কিংবা স্থানীয় ব্যাংকের কাছ থেকে বেশি সুদে ঋণ নিত। এসব ঋণে আরও বেশি খরচ হতো।
সেলিম রায়হান, নির্বাহী পরিচালক, সানেম

এ বিষয়ে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান প্রথম আলোকে বলেন, ডলার–সংকটসহ অর্থনীতিতে এই চাপের সময় বিদেশি ঋণদাতা সংস্থাগুলোর কাছ থেকে বাজেট–সহায়তা বাবদ ঋণ নেওয়া খারাপ নয়। কারণ, বিদেশিদের কাছে না গেলে বাংলাদেশ ব্যাংক টাকা ছাপাত কিংবা স্থানীয় ব্যাংকের কাছ থেকে বেশি সুদে ঋণ নিত। এসব ঋণে আরও বেশি খরচ হতো। তিনি মনে করেন, ঋণ যেন যথাযথভাবে খরচ হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। 

এডিবি জোগাড় করছে ১১০ কোটি ডলার

অর্থ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সূত্রে জানা গেছে, ঋণদাতা সংস্থাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বাজেট–সহায়তা পাওয়া যাবে এডিবি থেকে। সংস্থাটির সঙ্গে প্রায় ১১০ কোটি ডলার পাওয়া নিয়ে আলোচনা চলছে। এর মধ্যে ৫০ কোটি ডলার এডিবি নিজে দেবে, যা মূলত জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলাসহ সংশ্লিষ্ট খাতে খরচ হবে। এ ছাড়া ৬০ কোটি ডলার বিভিন্ন দাতা দেশ ও সংস্থার কাছ থেকে জোগাড় করে দেবে এডিবি। এ নিয়ে জাপান, এআইআইবি, ফরাসি সাহায্য সংস্থা এএফডির সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে এডিবি।

জানা গেছে, এই ৬০ কোটি ডলার পেতে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় আইনি সংস্কারে বেশি জোর দিতে হবে। এ নিয়ে এডিবি ও সরকারি সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর মধ্যে দর-কষাকষি চলছে। দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, ডিসেম্বর মাসের মধ্যেই এই অর্থ ছাড় করার সম্ভাবনা আছে। 

বিশ্বব্যাংকের পাইপলাইনে ৫০ কোটি ডলার

দুটি আলাদা কর্মসূচির মাধ্যমে চলতি ২০২৩–২৪ অর্থবছরে বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে ৫০ কোটি ডলার পেতে পারে বাংলাদেশ। এর মধ্যে ডেভেলপমেন্ট পলিসি ক্রেডিটের (ডিপিসি) আওতায় শেষ কিস্তির ২৫ কোটি ডলার মিলবে। বিশ্বব্যাংকের ২০২৪ সালের মে মাসে এই কিস্তি অনুমোদন হতে পারে। এ জন্য অবশ্য সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে রাশ টানতে হবে। এই ঋণের বড় শর্ত নতুন ব্যাংক কোম্পানি আইন ইতিমধ্যে হয়ে গেছে।

কোভিডের প্রভাব কাটাতে ও টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিতে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে ডেভেলপমেন্ট পলিসি ক্রেডিট (ডিপিসি) কর্মসূচিতে গেছে বাংলাদেশ। এর আওতায় ইতিমধ্যে ২৫ কোটি ডলার মিলেছে।

বিশ্বব্যাংকের গ্রিন অ্যান্ড ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্ট ডেভেলপমেন্ট কর্মসূচির আওতায় আরও ২৫ কোটি ডলার মিলবে। যদিও কবে নাগাদ এই অর্থ পাওয়া যাবে, তা নিশ্চিত নয়। এই ঋণের অন্যতম শর্ত হলো, সবুজ প্রবৃদ্ধির জন্য একটি কৌশল প্রণয়ন এবং সবুজ প্রবৃদ্ধি নিশ্চিতে একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করা। ইতিমধ্যে তা নিয়ে কাজ চলছে বলে জানা গেছে। এর আগে গত ২০২২–২৩ অর্থবছরে এই কর্মসূচির আওতায় ২৫ কোটি ডলার পাওয়া গিয়েছিল। 

বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে বাজেট–সহায়তা পাওয়ার নিয়ম হলো, প্রতিটি কিস্তির জন্য আলাদা শর্ত পূরণ করতে হয়। যখন শর্ত পূরণ হবে, তখনই সংস্থাটি অর্থ ছাড় করবে।

এ ছাড়া জাপান সরকার বাংলাদেশকে সাড়ে ২২ কোটি ডলারের বাজেট–সহায়তা দিতে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। গত জুন মাসে এই চুক্তি হয়। অর্থনৈতিক পুনর্গঠন এবং সরকারি অর্থ ব্যবস্থাপনায় সক্ষমতা বাড়াতে এই অর্থ খরচ করা হবে। এর আগে ২০২০ ও ২০২২ সালে জাপান সরকার ৬৮ কোটি ডলারের বাজেট–সহায়তা দিয়েছিল।