প্রবৃদ্ধিতে টান পড়বে, মূল্যস্ফীতিও কমবে

বাংলাদেশের জন্য ২০২৪ সালটি হবে একদিকে সুখবরের, অন্যদিকে খারাপ খবরেরও আশঙ্কা আছে। ভালো খবরটি মূল্যস্ফীতি কমার। আর খারাপ খবরটি হলো, মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি কমে যাবে। জাতিসংঘের সদ্য প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এমন পূর্বাভাসই দেওয়া হয়েছে।

জাতিসংঘ বলছে, চলতি ২০২৪ সালে বাংলাদেশের গড় মূল্যস্ফীতি কমে ৬ দশমিক ৮ শতাংশ নামতে পারে; আর জিডিপি প্রবৃদ্ধি কিছুটা কমে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ হবে। মূল্যস্ফীতির চাপ কমা মানুষের জন্য ভালো; আবার জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়া খারাপ।

৪ জানুয়ারি (বাংলাদেশ সময় শুক্রবার) জাতিসংঘের ডিপার্টমেন্ট অব ইকোনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল অ্যাফেয়ার্স ‘বৈশ্বিক অর্থনীতির অবস্থা এবং সম্ভাবনা ২০২৪’ শীর্ষক এই প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেখানে বাংলাদেশ সম্পর্কে এসব কথা বলেছে।

মূল্যস্ফীতির চাপ কমবে

জাতিসংঘের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালে বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতি কমবে। সদ্যবিদায়ী ২০২৩ সালে এ দেশে গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৬ শতাংশ। নতুন বছর তা বেশ খানিকটা কমে ৬ দশমিক ৮ শতাংশে নামবে। ২০২৫ সালে সেটি আরও কমে সাড়ে ৫ শতাংশ হবে।

রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতি বাড়তে শুরু করে। ২০২২ সালের আগস্ট মাসে বাংলাদেশে সব ধরনের জ্বালানি তেলের ৫০ শতাংশের মতো বাড়ানোর পর মূল্যস্ফীতি অনেক বেড়ে যায়। পুরো ২০২৩ সালজুড়েও মূল্যস্ফীতির খুব চাপ অনুভব করেছেন সাধারণ মানুষ।

২০২৩ সালে মূল্যস্ফীতির দুটি রেকর্ড হয়েছে। একটি হলো, গত মে মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশে উঠেছে, যা ১৩৪ মাস বা ১১ বছর দুই মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগে ২০১২ সালের মার্চে সর্বোচ্চ ১০ দশমিক ১০ শতাংশ মূল্যস্ফীতি দেখা গিয়েছিল। এরপর আর কখনো মূল্যস্ফীতি দুই অঙ্কের ঘরে যায়নি।

গত আগস্ট মাসে অন্য রেকর্ডটি হয়, যখন হঠাৎ করেই খাদ্য মূল্যস্ফীতি প্রথমবারের মতো দুই অঙ্কের ঘরে ওঠে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে, গত আগস্ট মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়ে ১২ দশমিক ৫৪ শতাংশে উঠেছে, যা গত ১১ বছর ৭ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগে ২০১২ সালের জানুয়ারি মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ১২ দশমিক ৭৩ শতাংশ।

দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তান গত তিন বছরে হাইপার মূল্যস্ফীতি (২০ শতাংশের বেশি) হয়েছে। জাতিসংঘ বলছে, শ্রীলঙ্কার মূল্যস্ফীতি ২০২২ সালে ছিল ৪৫ শতাংশ। পরের বছর তা ১৭-১৮ শতাংশে নেমে আসে। চলতি ২০২৪ সালে দেশটিতে মূল্যস্ফীতি ৫ শতাংশ হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে জাতিসংঘ। অন্যদিকে পাকিস্তানের মূল্যস্ফীতি ২০২৩ সালে ৩০ শতাংশে উঠেছিল, যা চলতি বছরে কমে ১৯ শতাংশ হতে পারে।

জাতিসংঘ বলেছে, বিদায়ী ২০২৩ সালে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভোগা মানুষের সংখ্যা বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে বেশি বেড়েছে। বৈশ্বিক সংস্থাটি আরও বলেছে, খাদ্যের বাড়তি দাম উন্নয়নশীল দেশগুলোতে ব্যাপকভাবে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা বাড়িয়েছে, যা দরিদ্র পরিবারগুলোর ওপর বেশি চাপ সৃষ্টি করছে। গত ২০২৩ সালে বিশ্বে ২৩ কোটি ৮০ লাখ মানুষ তীব্র খাদ্য নিরাপত্তায় ভুগেছে। এর আগের বছর এই সংখ্যা ছিল ২১ কোটি ৬০ লাখ।

প্রবৃদ্ধি কমবে

জাতিসংঘ বলেছে, ২০২৩ সালে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৬ শতাংশ। নতুন বছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি কিছুটা কমে ৫ দশমিক ৬ শতাংশে নামবে। তবে ২০২৫ সালে তা কিছুটা বেড়ে ৫ দশমিক ৮ শতাংশে উঠতে পারে।

এসব নিয়ে জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) জ্যেষ্ঠ গবেষক তৌফিকুল ইসলাম খান বলেন, এক-দেড় বছর ধরেই সামষ্টিক অর্থনীতির প্রায় সব সূচকই চাপের মধ্যে ছিল। ২০২৪ সালে এসব সূচক ঠিক করতে সরকার কী ধরনের সংস্কার কার্যক্রম নিচ্ছে, তার ওপর নির্ভর করছে এ বছর অর্থনীতি কেমন যাবে। তিনি আরও বলেন, মূল্যস্ফীতি কমাতে হলে সুদের হার বাড়াতে হবে, মুদ্রা বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করতে হবে। খরচে সাশ্রয়ী হতে হবে।

টাকার অতিমূল্যায়নের প্রবণতা কমেছে

জাতিসংঘ আরও বলছে, বাংলাদেশে বিনিময় হারে টাকা অতিমূল্যায়িত হয়ে আছে। গত ১০ বছরের একটি হিসাব দেখিয়ে জাতিসংঘ বলছে, বাংলাদেশে টাকা সবচেয়ে বেশি অতিমূল্যায়িত ছিল ২০২০ সালে। ওই বছর টাকার প্রকৃত বিনিময় হার ছিল ১৫৫ শতাংশ। এর পর থেকে তা কমতে শুরু করেছে। ২০২৩ সালে তা ১২৬ শতাংশে নেমে আসে।