এসএমই খাত, ফোর লেন ও গ্যাসের জন্য বরাদ্দ চান বরিশালের ব্যবসায়ীরা

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল আগামী ১ জুন জাতীয় সংসদে আগামী অর্থবছরের বাজেট পেশ করবেন। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট থেকে স্থানীয়ভাবে কী প্রত্যাশা করা হচ্ছে, তা জানতে ঢাকার বাইরের ব্যবসায়ী নেতাদের অভিমত প্রকাশ করছে প্রথম আলো। সাইদুর রহমান বরিশাল চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি। প্রথম আলোর কাছে জানিয়েছেন আগামী বাজেটে তাঁর প্রত্যাশার কথা।

বাজেট ২০২৩–২৪

দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করতে অভ্যস্ত হলেও কোভিড মহামারি ছিল নতুন অভিজ্ঞতা। এই দুর্যোগ আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির করে দিয়েছিল। সে ধকল এখনো কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়নি। বরিশাল অঞ্চলে ক্ষুদ্র শিল্প, মৎস্য খাত, ডেইরি ও পোলট্রিশিল্পের ওপর বড় আঘাত এসেছে।

এটা থেকে উত্তরণের শক্তি ব্যবসায়ীদের নেই। যদিও করোনা–পরবর্তী বাজেটে এসব খাতে ব্যয়-বরাদ্দ রাখা হয়েছিল, তবে এর পুনর্বিন্যাস দরকার এবং পিছিয়ে থাকা এলাকাগুলোকে গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। এখন উচিত করোনার ক্ষতি কাটাতে প্রণোদনার দ্বিতীয় পর্যায় হিসেবে আরও কিছু কর-সুদ ও অন্যান্য খাতে ছাড় দেওয়া।

দক্ষিণাঞ্চলে ভারী শিল্প কম। বেশির ভাগই ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প। ব্যাংক ঋণ নিয়ে যাঁরা ব্যবসা-বাণিজ্য করছেন, তাঁদের অনেকেই খারাপ অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষ করে, এসএমই ঋণের ক্ষেত্রে এই সমস্যা প্রবল। বরিশাল বিসিক শিল্পনগরীতে যেসব ক্ষুদ্র শিল্প রয়েছে, তারা শ্রমিকদের বেতন দিতে পারছে না। আর্থিক মন্দার কারণে বরিশালের মাঝারি শিল্পমালিকেরাও শ্রমিক ছাঁটাই করতে বাধ্য হচ্ছেন। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে সহজ শর্তে, কম সুদে ঋণের ব্যবস্থা করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনেক চ্যালেঞ্জ নিয়ে পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন করেছেন। এ জন্য আমরা কৃতজ্ঞ। তবে এই সেতুর পুরো সুফল পেতে হলে ভাঙ্গা থেকে কুয়াকাটা পর্যন্ত মহাসড়ক ফোর লেনে উন্নীত করতে হবে। পাইপলাইনে গ্যাস সরবরাহব্যবস্থা না থাকায় বরিশাল অঞ্চলে শিল্পের বিকাশ ঘটছে না।

ভোলা থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে বরিশালে গ্যাসলাইন করার জন্য সম্প্রতি বাপেক্স ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকার একটি প্রস্তাব জমা দিয়েছে। প্রায় ৬৫ কিলোমিটার দীর্ঘ গ্যাস–সংযোগ লাইন স্থাপন করার কথা বলেছে বাপেক্স। আমরা চাইব এবারের বাজেটে এই পাইপলাইন স্থাপনের জন্য বরাদ্দ রাখা হোক।

বরিশাল অঞ্চল এখনো শিল্পে সমৃদ্ধ নয়। কৃষি ও মৎস্য নির্ভর অর্থনীতির সঙ্গে রয়েছে বিপুল মানুষের যোগসূত্র। যাঁরা ঝুঁকি নিয়ে বড়-মাঝারি ও ক্ষুদ্র শিল্প গড়ে তুলেছেন, তাঁদের নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে। বাজেটে শিল্প খাতে পিছিয়ে থাকা অঞ্চলগুলোর জন্য বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া এবং এসব অঞ্চলে যে শিল্প রয়েছে, সেগুলো যাতে টিকে থাকতে পারে, সে জন্য বিনিয়োগের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।

বিশেষ শিল্পাঞ্চল করার ব্যাপারেও বাজেটে বরাদ্দ থাকা প্রয়োজন। বিশেষ করে, কৃষি, মৎস্য প্রক্রিয়াজাত, ওষুধ, সিমেন্ট, বস্ত্র ও তৈরি পোশাক খাতে বরিশাল অঞ্চলে সম্ভাবনা রয়েছে। এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হলে যেসব সুযোগ-সুবিধা দরকার, তা নিশ্চিত করতে বাজেটে বরাদ্দ রাখা উচিত বলে মনে করি।

অনুলিখন: এম জসীম উদ্দীন, বরিশাল