রোজা এগিয়ে এলেও আগের আমেজ নেই, ক্রেতারা অস্বস্তিতে

চট্টগ্রামের বাজারে ব্রয়লার মুরগির দাম প্রতি কেজি ২৫০ টাকার কাছাকাছি। আজ সকাল ১০টায় চট্টগ্রাম নগরের উত্তর কাট্টলী এলাকার ঈশান মহাজন সড়কে
ছবি: জুয়েল শীল

চট্টগ্রাম নগরের বহদ্দারহাট বাজারে মুদিদোকানে কেনাকাটা করছিলেন বেসরকারি কর্মজীবী মোহাম্মদ আসিফ। শুক্রবার আলাপকালে তিনি জানালেন, রোজার বাজারই করছেন। এরপরই তাঁর অভিযোগ, সব পণ্যেরই দাম বেড়েছে। আগের মতো একসঙ্গে অনেক দিনের বাজার করা সম্ভব হচ্ছে না।

আসিফ জানান, বাবা-মা ও স্ত্রী–সন্তান নিয়ে ছয় সদস্যের পরিবার। তাঁর একার আয়েই চলে সংসার। প্রতিবছর রোজার আগে একসঙ্গে ১৫-২০ দিনের বাজার করলেও এবার তা পারছেন না। সবই কিনছেন কাটছাঁট করে।

একই বাজারে মোস্তাফিজুর রহমান নামের একজন পোশাকশ্রমিক জানান, স্ত্রী, দুই সন্তান ও বাবা-মাকে নিয়ে একাই সংসার চালাচ্ছেন তিনি। বাজারে এসে জিনিসপত্রের দাম শুনেই ফিরে যেতে ইচ্ছে হয়। কিন্তু অসুস্থ বাবা-মা ও সন্তানদের কথা ভেবে সামর্থ্য অনুযায়ী বাজার করছেন। তবে রোজা আসছে ভেবেই চিন্তায় আছেন তিনি। কারণ সবকিছুর দামই প্রায় হাতের নাগালের বাইরে। বাজার থেকে ফিরেছেন এক কেজি চাল ও কিছু সবজি কিনে।

নগরের কর্ণফুলী কমপ্লেক্স বাজার, চকবাজার ও পাহাড়তলী বাজারেও শুক্রবার বেশ কয়েকজন ক্রেতার সঙ্গে কথা বলে একই ধরনের বক্তব্য পাওয়া গেছে। তাঁদের অভিযোগ, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে বাজারে এখন আর আগের সেই আমেজ নেই। বাজারে এলেই দুশ্চিন্তায় পড়তে হয়। বিশেষ করে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষেরা আগের মতো একসঙ্গে বাজার করতে পারছেন না। বিক্রেতারাও জানান, যাঁরা আগে ৫ কিংবা ১০ কেজি করে চাল, ডাল কিংবা ছোলা কিনতেন, তাঁরা এখন কিনছেন ১ বা ২ কেজি।

ক্রেতারা বলছেন, বাজার তদারকি সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো থেকে নির্ধারিত মূল্যতালিকা না থাকায় বাজারে ইচ্ছেমতো দাম নেওয়া হচ্ছে। বাজারের প্রবেশমুখে ও ভেতরে দামের পার্থক্য অন্তত ১০ থেকে ১৫ টাকা।

চট্টগ্রামের বাজারগুলোতে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে ব্রয়লার মুরগির দাম নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। বর্তমানে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৪০ থেকে ২৫০ টাকায়। অন্যদিকে প্রতি কেজি সোনালি মুরগি ৩৫০ থেকে ৩৭০, দেশি মুরগি ৫০০ থেকে ৫৫০, হাড়ছাড়া গরুর মাংস ৮০০ থেকে ৮৫০, হাড়সহ গরুর মাংস ৬৮০ থেকে ৭৩০ এবং খাসির মাংস ১ হাজার ৫০ থেকে ১ হাজার ১০০ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া মুরগির ডিম প্রতি ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৪৫ টাকায়। বাজারে আকারভেদে প্রতি কেজি রুই ২৫০ থেকে ৩০০, কাতলা ২৩০ থেকে ৩২০, তেলাপিয়া ১৬০ থেকে ২৫০, রুপচাঁদা ৫৫০ থেকে ৭৫০, পোয়া ১৯০ থেকে ২৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বাজারে নিত্যপণ্যের মধ্যে মানভেদে প্রতি কেজি খোলা চিনি ১০৫ থেকে ১১০, প্যাকেটজাত চিনি ১১০ থেকে ১১৫, দেশি মসুর ডাল ১৩৫ থেকে ১৪০, আমদানি করা মসুর ডাল ১৪০ থেকে ১৪৫, ছোলা ৮৫ থেকে ৯০, মটর ডাল ৬২ থেকে ৬৮, প্যাকেটজাত আটা ৬৫ থেকে ৬৮, খোলা আটা ৫৬ থেকে ৫৮, প্যাকেটজাত ময়দা ৭৫ থেকে ৭৭, খোলা ময়দা ৬২ থেকে ৬৪, পেঁয়াজ ৩০ থেকে ৪০, দেশি রসুন ৯৫ থেকে ১০০, আমদানি করা রসুন ১২৫ থেকে ১৩০ এবং বোতলজাত সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১৭২ থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

খাদ্যশস্যের মধ্যে বাজারে প্রতি কেজি সরু চালের (নাজিরশাল/মিনিকেট) দাম এখন ৭৭ থেকে ৮২ টাকা। মাঝারি মানের চাল (পাইজাম/লতা) ৫৬ থেকে ৬৬ টাকা ও মোটা চাল (স্বর্ণা/চায়না/ইরি) ৪৬ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

সবজি বাজারে আলু ২০ থেকে ২২, বেগুন ২৫ থেকে ৪০, ঢ্যাঁড়স ৭৫ থেকে ৮০, চিচিঙ্গা ৪০ থেকে ৪৫, বরবটি ৭০ থেকে ৮০, করলা ১০০ থেকে ১২০, কচুমুখি ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া বাঁধাকপি ১৫ থেকে ২০, ফুলকপি ২৫ থেকে ৩০, শসা ২৫ থেকে ৩৫, মিষ্টিকুমড়া ৩০ থেকে ৩৫, পাকা টমেটো ২০ থেকে ২৫, কাঁচা পেঁপে ২৫ থেকে ৩০, শিম ৩৫ থেকে ৪৫, গাজর ২০ থেকে ২৫, মুলা ১৫ থেকে ১৮ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া লাউ প্রতি পিস ২৫ থেকে ৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ইকবাল বাহার ছাবেরী প্রথম আলোকে বলেন, বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে নিম্ন আয়ের মানুষেরা তাঁদের আয়ের অর্ধেকের বেশি খরচ করেন খাদ্যের জন্য। সেই নিত্যপণ্যের দাম বাড়তে থাকলে তাঁদের জীবনযাত্রা কষ্টকর হয়ে যাবে। শুধু নিম্ন আয়ের নয়, এর চেয়ে বেশি আয়ের মানুষেরও এখন বাজার করতে কষ্ট হচ্ছে।