এলডিসি থেকে উত্তরণ-পরবর্তী তিন বছরকে কাজে লাগাতে হবে: সিপিডি

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) ও ফ্রিডরিক ইবার্ট স্টিফটুংয়ের (এফইএস) সংলাপে বক্তারা। সোমবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনেছবি: প্রথম আলো

স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণের পরও এলডিসির মতো আরও তিন বছর উন্নত দেশগুলো থেকে সুযোগ-সুবিধা পাবে বাংলাদেশ। এ বিষয়ে প্রস্তুতির জন্য আগামী দুই বছরের পাশাপাশি উত্তরণ–পরবর্তী ওই তিন বছরকেও গুরুত্বের সঙ্গে কাজে লাগাতে হবে। নইলে এলডিসি থেকে উত্তরণের পরও উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে টিকে থাকা বাংলাদেশের জন্য কঠিন হয়ে যেতে পারে।

‘স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণ হতে যাওয়া দেশগুলোর জন্য ডব্লিউটিও–ত্রয়োদশ মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলন কী করেছে: পরিপ্রেক্ষিত বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক সংলাপে এমন সতর্কবার্তা উঠে এসেছে। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি থেকে ১ মার্চ পর্যন্ত মধ্যপ্রাচ্যের সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) আবুধাবিতে পাঁচ দিনের এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) ও ফ্রিডরিক ইবার্ট স্টিফটুং (এফইএস) বাংলাদেশ যৌথভাবে সোমবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে সংলাপটির আয়োজন করে। সিপিডির কর্মসূচি সহযোগী আনিকা তাসনিমকে নিয়ে তৈরি করা মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংস্থাটির সম্মানীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান। সংলাপে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম প্রধান অতিথি ও বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষ বিশেষ অতিথি ছিলেন।

সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুনের সঞ্চালনায় সংলাপে বক্তব্য দেন সিপিডির আরেক সম্মানীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। এতে স্বাগত বক্তব্য দেন এফইএস বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন আবাসিক প্রতিনিধি রিচার্ড কানিওয়েস্কি। বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্টের (বিল্ড) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরদৌস আরা বেগম।

এ ছাড়া মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন সাবেক মহা হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক (সিএজি) মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী, বাংলাদেশ ফরেন ট্রেড ইনস্টিটিউটের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. জাফরউদ্দীন, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের সাবেক সদস্য মোস্তফা আবিদ খান, বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের সদস্য মো. হাফিজুর রহমান এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডব্লিওটিও সেলের সাবেক মহাপরিচালক মুনীর চৌধুরী।

মূল প্রবন্ধে বলা হয়, বাংলাদেশকে তিন পায়ে হাঁটতে হবে। এক পা এলডিসি, এক পা এলডিসি থেকে উত্তরণ এবং আরেক পা ভবিষ্যতের উন্নয়নশীল দেশ। ২০২৬ সালে ক্যামেরুনে যে ডব্লিউটিও-মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলন হবে, তার আগেই জেনেভায় ডব্লিউটিওর প্রধান কার্যালয়ে ভবিষ্যতের উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে বাংলাদেশকে।

কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে দ্বিপক্ষীয় মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি এবং সমন্বিত অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব চুক্তির বিষয়েও। কানাডা, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ভারত, চীন ও অন্য দেশগুলোর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা শুরু করতে হবে গুরুত্বের সঙ্গে। প্রস্তুতি নিতে হবে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশগুলো থেকে জিএসপি প্লাস সুবিধা নেওয়ার জন্য।

সংলাপের বিশেষ বক্তা সিপিডির সম্মানীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, বিভিন্ন খাতে বাংলাদেশ যে নগদ প্রণোদনা দেয়, সেই প্রণোদনার আসক্তি থেকে বের হতে হবে। একক রপ্তানি পণ্যের ওপর নির্ভরশীলতা আর নয়। যেতে হবে বহুধাকরণে। পাশাপাশি উৎপাদনশীলতা বাড়াতে হবে এবং কাঠামোগত পরিবর্তন আনতে হবে।

সিপিডি ও এফইএস আয়োজিত ‘স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণ হতে যাওয়া দেশগুলোর জন্য ডব্লিউটিও–ত্রয়োদশ মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলন কী করেছে: পরিপ্রেক্ষিত বাংলাদেশ’ শীর্ষক সংলাপে বক্তব্য দিচ্ছেন সিপিডির সম্মানীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য
ছবি: প্রথম আলো

একক পণ্যের ওপর নির্ভরশীল দেশ অ্যাংগোলার উদাহরণ দিয়ে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের তুলনা করেন। বলেন, এলডিসি থেকে উত্তরণের জন্য উপযুক্ত হওয়ার পর তিন তিনবার বাদ পড়েছে দেশটি। কারণ, দেশটির প্রধান রপ্তানি পণ্য জ্বালানি তেল। তেল রপ্তানিতে ধস নামায় এলডিসি থেকে দেশটির উত্তরণ হয়নি। যদি প্রধান রপ্তানি পণ্য পোশাক খাতে ধস নামে, বাংলাদেশের জন্যও সমস্যা হবে। তাই রপ্তানি বহুধাকরণ জরুরি।

বিরোধ নিষ্পত্তি করতে না পারা ও সচিবালয়ের স্বচ্ছতার ঘাটতির কথা উল্লেখ করে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য ডব্লিওটিওর সংস্কারের প্রতিও জোর দেন।

সংলাপে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম বলেন, ভবিষ্যতে অনেক চ্যালেঞ্জ। চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশনা দিয়েছেন। চামড়া, পাট ও ওষুধসহ রপ্তানি পণ্যের বহুমুখীকরণে ইতিমধ্যে জোর দেওয়া হয়েছে।

বিল্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ফেরদৌস আরা বেগম বলেন, এলডিসি থেকে উত্তরণের বিষয়টিকে মাথায় রেখে বাংলাদেশকে নিজস্ব কর্মসূচি হাতে নিতে হবে।

বাংলাদেশ ফরেন ট্রেড ইনস্টিটিউটের সিইও মো. জাফরউদ্দীন জানান, ডব্লিওটিওতে বাংলাদেশের আরও জোরালো কণ্ঠস্বর চান তিনি।

বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের সদস্য মো. হাফিজুর রহমান বলেন, ডব্লিউটিওতে পরিবহন খাত নিয়ে দর-কষাকষি চলছে। বাণিজ্য, পরিবেশ ও ফসিল-ফুয়েল তথা জীবাশ্ম জ্বালানি বিষয়ে বাংলাদেশের স্বার্থের দিকগুলো তুলে ধরতে হবে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডব্লিওটিও সেলের সাবেক মহাপরিচালক মুনীর চৌধুরী বলেন, সেবা খাতে ছাড় নিয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছিল নাইরোবি সম্মেলনে। এলডিসিভুক্ত দেশগুলো বিনা বাধায় সেবা খাতে যুক্ত হতে পারবে উন্নত দেশগুলোতে। কিন্তু এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়নি।