মুঠোফোনে আর্থিক লেনদেনে এগিয়ে রংপুরের মানুষ

বিবিএসের হিসাবে, রংপুরের সাড়ে ৪৩ শতাংশ মানুষ মোবাইল ব্যাংকিংয়ে লেনদেন করেন। কম লেনদেন করেন সিলেট বিভাগের মানুষ।

দেশের মধ্যে রংপুরের মানুষ সবচেয়ে বেশি বিকাশ, নগদ, রকেট, উপায়ের মতো মোবাইল আর্থিক সেবায় (এমএফএস) লেনদেন করেন। তার মানে হলো, রংপুর বিভাগের মানুষেরা দেশের বিভিন্ন স্থানে বিকাশ, নগদ, রকেট, উপায়সহ বিভিন্ন ধরনের মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহার করে টাকাপয়সা লেনদেন করেন। রংপুরের প্রায় সাড়ে ৪৩ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ মোবাইলে আর্থিক লেনদেন করেন।

অন্যদিকে মোবাইলে আর্থিক সেবা ব্যবহার করে সবচেয়ে কম লেনদেন করেন সিলেট বিভাগের মানুষ। বিভাগটিতে এই হার প্রায় ৩০ শতাংশ।

সম্প্রতি প্রকাশিত জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২-এর চূড়ান্ত প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। প্রতিবেদনে জনগণের মধ্যে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি কেমন হলো, তা দেখানো হয়েছে।

ব্যাংকিং সেবার বাইরে অথবা সীমিত ব্যাংকিং সেবার আওতায় থাকা জনগোষ্ঠীর আর্থিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করে দৈনন্দিন লেনদেনে সক্ষমতা ও স্বাধীনতা এনেছে মোবাইলে আর্থিক সেবা।
শামসুদ্দিন হায়দার ডালিম, মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান বিকাশের হেড অব করপোরেট কমিউনিকেশনস

দেশে নগদ, বিকাশ, উপায়সহ বিভিন্ন ধরনের মোবাইল আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। নিজের মুঠোফোন ব্যবহার করে বা এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলোর নিযুক্ত এজেন্ট পয়েন্ট থেকে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে লেনদেন করা যায়। গত এক দশকে এ সেবা বেশ জনপ্রিয় হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত অক্টোবর শেষে এমএফএসের মাধ্যমে দৈনিক গড় লেনদেন ছিল চার হাজার কোটি টাকার বেশি।

মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান বিকাশের হেড অব করপোরেট কমিউনিকেশনস শামসুদ্দিন হায়দার ডালিম প্রথম আলোকে বলেন, ব্যাংকিং সেবার বাইরে অথবা সীমিত ব্যাংকিং সেবার আওতায় থাকা জনগোষ্ঠীর আর্থিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করে দৈনন্দিন লেনদেনে সক্ষমতা ও স্বাধীনতা এনেছে মোবাইলে আর্থিক সেবা। বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, যাঁদের অনেকেই জীবিকার তাগিদে রাজধানীসহ বড় শহরগুলোয় কাজ করতে আসেন, তাঁরা বিকাশের মতো এমএফএসের মাধ্যমে বাড়িতে প্রিয়জনের কাছে টাকা পাঠান।

বিবিএসের প্রতিবেদনে, ১৫ বছরের বেশি বয়সী নারী-পুরুষদের মধ্যে যাঁরা মোবাইল ব্যাংকিং করেন, সেই চিত্রও উঠে এসেছে। বিবিএস বলছে, যাঁদের নগদ, বিকাশ, রকেটের মতো প্রতিষ্ঠানে মোবাইল ব্যাংকিং হিসাব আছে এবং শুমারির আগের ১২ মাসের মধ্যে অন্তত একবার লেনদেন করেছেন, তাঁদের তথ্যও উল্লেখ করা হয়েছে।

বিবিএসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, রংপুরের ৫৪ লাখ ৮০ হাজার ৩৭৩ জন নারী-পুরুষ মোবাইল ব্যাংকিং সুবিধা নেন, যা রংপুর বিভাগের মোট জনগোষ্ঠীর সাড়ে ৪৩ শতাংশ। অন্যদিকে সবচেয়ে কম লেনদেন করেন সিলেট বিভাগের মানুষ। সেখানকার ২২ লাখ ৩৬ হাজার ৯৩৬ জন নারী-পুরুষ এই সুবিধা নেন, যা সিলেটের মোট জনগোষ্ঠীর প্রায় ৩০ শতাংশ।

মানুষের সংখ্যা হিসেবে সবচেয়ে বেশি মোবাইল ব্যাংকিং বা আর্থিক সুবিধা নেন ঢাকা বিভাগের মানুষ। ঢাকা বিভাগের জেলাগুলোর ১ কোটি ৩৪ লাখ ৮ হাজার ৯৫৭ মানুষ এই সুবিধায় টাকা লেনদেন করেন। অবশ্য তা ঢাকা জেলার মোট জনগোষ্ঠীর সাড়ে ৪১ শতাংশ এবং বিভাগওয়ারি হিসেবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এ ছাড়া মোট জনগোষ্ঠীর মধ্যে খুলনা ও বরিশালে ৪১ শতাংশ, রাজশাহীতে ৩৯ শতাংশ, ময়মনসিংহ ও চট্টগ্রাম বিভাগে ৩৫ শতাংশ নারী-পুরুষ মোবাইল ব্যাংকিংয়ে লেনদেন করেন।

সব মিলিয়ে সারা দেশে ৪ কোটি ৬১ লাখ ১৪ হাজার ৬৬৮ মানুষ মোবাইল আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আর্থিক লেনদেন করেন। অনেকে কেনাকাটায়ও এমএফএস ব্যবহার করেন। এ সেবায় নারীর চেয়ে দ্বিগুণ গ্রাহক পুরুষ। পুরুষ গ্রাহকের সংখ্যা তিন কোটি।

অন্যদিকে শহরের চেয়ে গ্রামের মানুষ বেশি মোবাইল ব্যাংকিংয়ে বেশি অভ্যস্ত। গ্রামের প্রায় ২ কোটি ৯২ লাখ নারী-পুরুষ এ সেবা ব্যবহার করেন। আর শহরে মাত্র ১ কোটি ৬৮ লাখ মানুষ এ সেবা ব্যবহার করেন।

এ বিষয়ে জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২ প্রকল্পের পরিচালক দিলদার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, আর্থিক অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যের (এসডিজি) একটি। এ জন্য এবার প্রথমবারের মতো এটি আদমশুমারিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এটি উন্নয়নের একটি সূচকও। তিনি আরও বলেন, মুঠোফোন এখন বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হয়। গ্রামের অনেক মানুষ এখনো ব্যাংক সেবার বাইরে আছেন। তাঁরাই ব্যাংকের বিকল্প হিসেবে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ওপর নির্ভরশীল হচ্ছেন।