‘রাজনৈতিক সরকার ভোটের আগে বড় প্রকল্প শেষ করে’
নির্বাচনের আগে আগে বড় প্রকল্প গ্রহণ এবং একের পর এক প্রকল্প উদ্বোধন করার বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছেন যে সরকার জনগণের সুবিধার জন্য প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে এবং এতে মানুষ উপকৃত হচ্ছেন।
পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘আমরা অবশ্যই ভোটের রাজনীতি করি। প্রকল্প বাস্তবায়ন করার বিষয়ে রাজনৈতিক দলের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি থাকে। প্রকল্প বাস্তবায়নে ভোটের সময় বেশি করে যাব। এখন পর্যন্ত যত বড় প্রকল্পের উদ্বোধন হয়েছে, তা জনগণের কাজে লেগেছে।’
জনতুষ্টির জন্য ভোটের আগে বিভিন্ন বড় প্রকল্প আংশিকভাবে চালু করা হচ্ছে কি না, তা জানতে চাইলে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের বাকি অংশের কাজ আমরা অতি দ্রুত শেষ করব। মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল চালু হবে আগামী মাসে।’
আজ মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভা শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলমসহ অন্যান্য কর্মকর্তা।
পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম এ বিষয়ে বলেন, রাজনৈতিক সরকার ভোটারদের আকৃষ্ট করতে ভোটের আগে বড় বড় প্রকল্প শেষ করে। দুনিয়াজুড়েই এমন হয়। এটি দোষের কিছু নয়। তবে নির্বাচন সামনে রেখে বিশেষ কোনো প্রকল্প পাস করা হচ্ছে না।
সরকার গত এক বছরের বেশি সময়ের মধ্যে পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মতো বড় প্রকল্পগুলো আংশিক চালু করেছে। এ ছাড়া আগামী দু-তিন মাসের মধ্যে পদ্মা সেতু দিয়ে রেল চলাচল, হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল, কক্সবাজার পর্যন্ত রেলপথ, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেলসহ বেশ কিছু বড় প্রকল্প চালু করতে যাচ্ছে।
গত শনিবার অর্থনৈতিক প্রতিবেদকদের সংগঠন ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) এক অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, এখন মর্যাদা বাড়ানোর প্রকল্প (প্রেস্টিজ প্রজেক্ট) করার সময় নয়। এখন গরিব ও নিম্নমধ্যবিত্ত মানুষকে সুরক্ষা দেওয়ার সময়। মেট্রোরেল ১, ২, ৩; কক্সবাজার রেলপথ—এসব প্রকল্প অন্য সময় করলেও হবে।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘শাস্ত্রে আছে, যত মত তত পথ। কারোর মন্তব্যের ওপর মন্তব্য করব না। পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় এই পথ দিয়ে যাওয়া মানুষেরা রোমাঞ্চিত বোধ (ফিল এক্সাইটেড) করেন। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে মানুষ উপকৃত হচ্ছেন। যদি দিন শেষে লাভ হয়, তাহলে লাভ; দিন শেষে ক্ষতি হলে ক্ষতি।’
সামষ্টিক অর্থনীতির সূচক সম্পর্কে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম বলেন, ‘অর্থনীতি কখনো সরলরেখায় চলে না। ওঠানামা থাকবেই। অর্থনীতি নামলে আমরা অখুশি হই। অর্থনীতি কখনো কখনো অবনমিত হয়। অর্থনীতির গতিপথ অনেকটা করাতের মতো।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় সব মিলিয়ে ১৭টি প্রকল্প পাস হয়। এতে খরচ হবে ১২ হাজার ৯৫১ কোটি টাকা।
পাস হওয়া একটি প্রকল্প হলো ১ হাজার ৩৭১ কোটি টাকা ব্যয়ে চাঁদপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল এবং নার্সিং কলেজ স্থাপন প্রকল্প। এই প্রকল্পের জন্য ৩০ একর জমি লাগবে। এর মধ্যে ৫০ শতাংশ জমি বর্ষার সময় পানির নিচে ডুবে যায় বলে পরিকল্পনা কমিশন মতামত দিয়েছিল।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওই সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের আর্থসামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য মোসাম্মৎ নাসিমা বেগম বলেন, ‘আমরা আমাদের মতামত দিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, পুরো জমি লাগবে। তিনি সেভাবেই অনুমোদন দিয়েছেন। সেখানে ২৭টি ভবন হবে।’
এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী জমি অধিগ্রহণের আগে প্রথমবার পরিদর্শনের সময় ছবি তুলে আনার নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী। তিনি বলেন, জমি অধিগ্রহণের কথা উঠলেই ওই সব এলাকায় রাতারাতি ঘরবাড়ি উঠে যায়। তাই তিনি এই নির্দেশনা দিয়েছেন। এ ছাড়া নড়াইল-কালিয়া জেলা মহাসড়কে নবগঙ্গা নদীর ওপর সেতুর নকশা পরিবর্তনে বিরক্তি প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। কারণ, ওই সেতুর উচ্চতা কম হওয়ায় এখন নতুন করে নকশা করতে হয়েছে।