আইনি নানা বিধিবিধানের কারণে বাংলাদেশে ভ্রমণ খাতটি কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় বিকশিত হতে পারছে না। দেশের ভেতরে ভ্রমণের ক্ষেত্রে মোট বিলের ওপর ১০ শতাংশ কর কাটা হয়। অথচ কর হওয়ার কথা আয়ের ওপর। আবার যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বড় দেশগুলোর এক শহর থেকে অন্য শহরে ভ্রমণের ক্ষেত্রে আমরা বৈধ পথে বিমান টিকিট সেবা দিতে পারি না গ্রাহকদের। তাই এ ধরনের সেবা দিতে অবৈধ পন্থা অবলম্বন করতে হয়।
দেশ–বিদেশে ভ্রমণপিপাসুদের ভ্রমণ সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান শেয়ারট্রিপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাদিয়া হক এ অভিযোগ করেছেন। তিনি বলেন, আমরা ভ্রমণ খাতের ইকোসিস্টেম গড়ে তোলার চেষ্টা করছি। কিন্তু আইনি নানা বিধিবিধানের কারণে তাতে নানা বাধার মুখে পড়তে হচ্ছে।
সাদিয়া হক আজ বুধবার প্রথম আলো আয়োজিত ‘ডিজিটাল লেনদেনের চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা: পরিপ্রেক্ষিত ভ্যাট বৃদ্ধি’ শীর্ষক এক আলোচনায় এ কথা বলেন। আজ সকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ে এ আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। তাতে ব্যবসায়ী ও ব্যাংকারদের পাশাপাশি অতিথি ছিলেন গভর্নর আহসান এইচ মনসুর ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান।
প্রথম আলোর হেড অব অনলাইন শওকত হোসেনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত আলোচনায় ডিজিটাল লেনদেনের বর্তমান পরিস্থিতি, সমস্যা ও করণীয়বিষয়ক একটি উপস্থাপনা তুলে ধরেন মাস্টারকার্ডের কান্ট্রি ডিরেক্টর সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল।
সাদিয়া হক বলেন, বাংলাদেশের ভ্রমণ খাতের জন্য যেসব বিধিবিধান করা আছে, সেগুলো মেনে ব্যবসা করা প্রায় অসম্ভব বলে মন্তব্য করেন শেয়ারট্রিপের প্রধান নির্বাহী সাদিয়া হক। হজ ও ওমরাহ বাদে অন্যান্য ভ্রমণে ভ্যাট ও ট্যাক্স দিতে হয়, সেটা না থাকলে এই খাত অনেক প্রণোদনা পেত। সেবা আছে, কিন্তু ভিন্ন পন্থায় যেতে হচ্ছে। আবার যেসব বিমান পরিবহন সংস্থা বাংলাদেশে কাজ করছে না, তাদের টিকিট আইনিভাবে কেনার সুযোগ নেই। টিকিট সবাই দিচ্ছে, কিন্তু তা আইন ভঙ্গ করেই করা হচ্ছে। তারা ডলারে টিকিটের মূল্য নিচ্ছে; এরপর বাণিজ্যিক ব্যাংকের বিদেশি মুদ্রার হিসাবের মাধ্যমে সেই অর্থ বিদেশে পাঠানো হচ্ছে। টাকায় লেনদেন করা গেলে আইনিভাবেই করা সম্ভব হতো এবং ডলারও বেরিয়ে যেত না।
ডলারে মূল্য পরিশোধ করতে হয়, এটা শুনলে অনেকেই ভয় পেয়ে যান, পাছে বেশি অর্থ দিতে হয়। সেই ডলার আবার পরিশোধ হচ্ছে তাঁদের ভ্রমণ কোটা থেকে, যেটা তাঁরা সারা বছর ধরে ব্যবহার করতে চান। ভ্রমণকে বৃহত্তর অর্থনীতির অংশ হিসেবে বিবেচনা করা হলে শুধু যে বাংলাদেশ থেকে বাইরে যাওয়া বাড়বে তা নয়, বরং দেশেও মানুষের আসা বাড়বে।
ট্যুর অপারেটরদের বলা হয়েছে, দেশের ভেতরে ভ্রমণের ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ কর দিতে হবে মোট মূল্যের ওপর। এটা কিন্তু আয়ের ওপর নয়। ফলে এসব ক্ষেত্রে ঠিক করে দিতে হবে, কোন ক্ষেত্রে কত কর দিতে হবে। ফ্রেইট ফরোয়ার্ডিংয়ে ২ শতাংশ কর হলে বাংলাদেশে আসা পর্যটকদের ভ্রমণের ওপরও একই হারে কর নেওয়া যেতে পারে। সেই সঙ্গে তিনি ভ্রমণ ও পর্যটন খাতের জন্য উন্মুক্ত এবং কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ সংস্থার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন।