অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মুখে দাঁড়িয়ে যেসব দেশ

আফ্রিকার অনেক দেশের ঋণ জিপিডির ৭০ শতাংশের ওপরে। কিন্তু তাদের রাজস্ব বৃদ্ধির সম্ভাবনা কম বলে বিপর্যয়ের আশঙ্কা আছে।

ঋণসংকটে জর্জরিত শ্রীলঙ্কার অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয়। গণরোষে সে দেশের প্রেসিডেন্টকে দেশ ছেড়ে পালাতে হয়েছে। তবে শুধু শ্রীলঙ্কা নয়, বিশ্বের অনেক দেশ এখন ঋণে জর্জরিত। ব্রিটেন ও যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশের ঋণও তাদের জিডিপির চেয়ে বেশি। তাদের এই ঋণসংকট মোকাবিলা করার মতো সামর্থ্য আছে। আফ্রিকার দেশগুলোর অবস্থা তাদের মতো নয়। অথচ বাস্তবতা হলো, আফ্রিকার অনেক দেশের ঋণ জিডিপির ৭০ শতাংশের ওপরে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক বিশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৈদেশিক ঋণ এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভসংকটের কারণে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটের একেবারে দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে বিশ্বের অন্তত ১২টি দেশ।

বলা হয়েছে, শ্রীলঙ্কার মতো প্রায় একই পরিণতি হতে পারে লেবানন, সুরিনাম ও জাম্বিয়ার মতো দেশগুলোর। তালিকায় থাকা অন্য দেশগুলো হলো আর্জেন্টিনা, ইউক্রেন, তিউনিসিয়া, ঘানা, মিসর, কেনিয়া, ইথিওপিয়া, এল সালভাদর, পাকিস্তান, ইকুয়েডর, বেলারুশ ও নাইজেরিয়া।

ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হতে পারে, এমন দেশের তালিকায় প্রথমেই আছে আর্জেন্টিনা। দেশটির বৈদেশিক ঋণ প্রায় ১৫০ বিলিয়ন ডলার। তালিকায় দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে আছে মিসর ও ইকুয়েডর। দেশ দুটির ঋণ যথাক্রমে ৪৫ বিলিয়ন ও ৪০ বিলিয়ন ডলার।

তবে অনেক অর্থনীতিবিদের আশা, এ তালিকার অনেক দেশই খেলাপি হওয়ার ধাক্কা থেকে বাঁচতে পারে। তবে সে জন্য প্রধান শর্ত দুটি—বিশ্ববাজার দ্রুত স্থিতিশীল হতে হবে এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও বিশ্বব্যাংকের এগিয়ে আসতে হবে।

আর্জেন্টিনার মুদ্রা পেসোর অবমূল্যায়ন এত বেশি হয়েছে যে কালোবাজারে এই মুদ্রা ব্যাংক নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে ৫০ শতাংশ কম দামে বিক্রি হচ্ছে। সরকারি বন্ডের দাম পড়ে গেছে। বিক্রি হচ্ছে মাত্র ২০ সেন্টে। ২০২৪ সাল নাগাদ দেশটিকে বড় ধরনের ঋণ পরিশোধ করতে না হলেও এরপর বিপদে পড়তে পারে দেশটি।

এদিকে যুদ্ধের কারণে বিশ্বের অন্যতম খাদ্যশস্য রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে পরিচিত ইউক্রেনের খাদ্যশস্য রপ্তানি বন্ধ হয়ে গেছে। যুদ্ধের ব্যয় বহন, রপ্তানি কমে যাওয়ার কারণে তাদের খেলাপি হওয়ার যথেষ্ট আশঙ্কা আছে। রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুদ্ধের কারণে ইউক্রেনের ২০ বিলিয়ন ডলারের অতিরিক্ত ঋণ পুনর্গঠনের বিকল্প নেই। সেপ্টেম্বর মাসে তাদের ১২০ কোটি ডলারের কিস্তি পরিশোধ করতে হবে। তখনই তারা ঋণ পুনর্গঠনের আবেদন করবে বলে মনে করছে মরগ্যান স্ট্যানলি ও আমুন্দির মতো বিনিয়োগকারীরা।

এদিকে আইএমএফের ভাষ্যমতে, আফ্রিকার দেশগুলো বেশ কিছু ঝুঁকির মধ্যে থাকলেও তিউনিসিয়ার অবস্থা সবচেয়ে বেশি আশঙ্কাজনক। বাজেটে ঘাটতি, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উচ্চ বেতন ইত্যাদি কারণে দেশটিতে জনরোষ ক্রমেই বাড়ছে। দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান মারওয়ান আব্বাসির মতে, এ মুহূর্তে আইএমএফের সহায়তাই দেশটিকে বিপর্যয় থেকে রক্ষা করতে পারে।

মিসরের অবস্থা ঘানার চেয়েও ভয়াবহ। দেশটির বৈদেশিক ঋণ জিডিপির ৯৫ শতাংশেরও বেশি। সবচেয়ে আশঙ্কার বিষয় হলো, দেশটিতে চলতি বছরে প্রায় ১১ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ করতে হবে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক অর্থলগ্নিকারী প্রতিষ্ঠান জেপি মরগান। আরও একটি বৈশ্বিক বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের বরাত দিয়ে রয়টার্স বলছে, আগামী পাঁচ বছরে মিসরকে নগদ অর্থে প্রায় ১০০ বিলিয়ন ডলার শোধ করতে হবে।

দক্ষিণ এশিয়ার দেশ পাকিস্তানের অবস্থা এরই মধ্যে বেশ নাজুক হয়ে উঠেছে। দেশটির মুদ্রা ব্যাপকভাবে অবমূল্যায়িত হয়েছে। খাদ্য, জ্বালানিসহ প্রয়োজনীয় আমদানির তুলনায় রপ্তানি একেবারেই কম। দেশটির রিজার্ভ এখন ইতিহাসে সবচেয়ে কম; ৯ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলারে নেমেছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। দেশটির মোট রাজস্বের ৪০ শতাংশেরও বেশি ব্যয় করতে হয় ঋণ পরিশোধে। ফলে উন্নয়নের জন্য দেশের বাকি থাকে সামান্যই।

এদিকে বাংলাদেশের ঋণ জিডিপির সাপেক্ষে তেমন বেশি না হলেও আগামী কয়েক বছরের মধ্যে বেশ কয়েকটি বড় প্রকল্পের ঋণ পরিশোধ শুরু করতে হবে।কিন্তু সরকারের রাজস্ব আদায় বাড়বে, তেমন সম্ভাবনা কম।ঋণ পরিশোধের চাপ বাংলাদেশের ওপরও পড়বে বলে অনেক বিশ্লেষক আশঙ্কা করছেন।