ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারেও সর্বজনীন পেনশন নিবন্ধনের সুযোগ আসছে

সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি

  • পেনশনের বিভিন্ন কর্মসূচির জন্য আগামী অর্থবছরে প্রায় শতকোটি টাকার বরাদ্দ রাখা হতে পারে।

  • আগামী ১ জুলাই বাধ্যতামূলকভাবে ‘প্রত্যয়’ নামক নতুন কর্মসূচি চালু করা হচ্ছে।

পেনশনপ্রতীকী ছবি

ব্যাংকের পাশাপাশি ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারগুলোতেও সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচির (স্কিম) নিবন্ধন করা যাবে। তথ্যপ্রযুক্তির (আইটি) জ্ঞান না থাকা বা কম জ্ঞান থাকা ব্যক্তিদের জন্য এমন সুযোগের ঘোষণা আসতে পারে আগামী বাজেটে।

এ ছাড়া ইন্টারনেট ক্যাফেগুলোতে গিয়েও করা যাবে নিবন্ধন। আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট বক্তব্যে এমন সব ঘোষণা দিতে পারেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

পেনশন কর্মসূচিতে নিবন্ধনের পর আসে চাঁদা জমা দেওয়ার প্রশ্ন। অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যে ঘোষণা থাকতে পারে ব্যাংকে গিয়ে চাঁদা জমার বাইরে ঘরে বসে অনলাইন ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমেও চাঁদা দেওয়ার সুযোগ থাকবে। এ ছাড়া ক্রেডিট কার্ড, ডেবিট কার্ড এবং মোবাইলে সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান (এমএফএস) অর্থাৎ বিকাশ, নগদ ইত্যাদির মাধ্যমেও চাঁদা জমা দেওয়ার সুযোগ থাকবে।

 ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বাস্তবায়নের সঙ্গে সংগতি রেখে সম্পূর্ণ ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা–পদ্ধতির উন্নয়নে বাজেটে এসব পদক্ষেপ নেওয়ার ঘোষণা দিতে পারেন অর্থমন্ত্রী। তিনি আরও বলতে পারেন, একজন চাঁদাদাতা অনলাইনেই সরাসরি দেখতে পারবেন তাঁর জমা চাঁদার মোট টাকা ও লভ্যাংশের পরিমাণ।

অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী আগামীকাল যে বাজেট বক্তব্য দেবেন, তাতে সর্বজনীন পেনশনের নিবন্ধনের বিষয়ে নতুন ঘোষণা থাকতে পারে।

সূত্রগুলো জানায়, বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী ঘোষণা দেবেন, কারও যদি অনলাইনে টাকা পরিশোধের সুবিধা না থাকে, তবে তিনি নির্ধারিত ব্যাংকের যেকোনো শাখায় গিয়ে টাকা জমা দিতে পারবেন। অর্থমন্ত্রীর মতে, এ প্রক্রিয়া প্রধানমন্ত্রীর স্মার্ট বাংলাদেশ তথা ‘ভিশন ২০৪১’ বাস্তবায়নে বিশেষ ভূমিকা রাখবে।

প্রবাস, প্রগতি, সুরক্ষা ও সমতার পাশাপাশি স্বায়ত্তশাসিত ও রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের জন্য আগামী ১ জুলাই যে বাধ্যতামূলকভাবে ‘প্রত্যয়’ নামক নতুন কর্মসূচি চালু করা হচ্ছে, সে কথাও থাকবে অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যে।

দেশে সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি কীভাবে এল, তার একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণও দিতে পারেন অর্থমন্ত্রী। সেখানে উল্লেখ থাকতে পারে—বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমৃত্যু এ দেশের মানুষের অর্থনৈতিক ও সামাজিক মুক্তির পাশাপাশি একটি বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করে গেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজের অংশ হিসেবে দেশের ১৮ বছরের বেশি বয়সী জনগোষ্ঠীকে একটি টেকসই ও সুসংগঠিত সামাজিক নিরাপত্তা কাঠামোর আওতায় নিয়ে আসার প্রথম উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তার অংশ হিসেবেই ২০০৮ সালের আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে সর্বজনীন পেনশনের বিষয়টি তুলে ধরা হয়।

পেনশনের বিভিন্ন কর্মসূচির জন্য সরকারের পক্ষ থেকেও আগামী বাজেটে বরাদ্দ রাখা হতে পারে। এ জন্য আগামী অর্থবছরে প্রায় শতকোটি টাকার বরাদ্দ রাখা হতে পারে বলে অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।

গ্রাহক এখন পৌনে ৩ লাখ

দেশে চারটি কর্মসূচি নিয়ে সর্বজনীন পেনশন কার্যক্রম শুরু হয়েছে ২০২৩ সালের ১৭ আগস্ট থেকে। জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত সাড়ে আট মাসে নিবন্ধন করেছেন ২ লাখ ৭৯ হাজার ৫৬৯ জন। সংখ্যার দিক থেকে সবচেয়ে বেশি নিবন্ধন হয়েছে সমতা কর্মসূচিতে। আর পরিমাণের দিক থেকে বেশি টাকা জমা পড়েছে প্রগতি কর্মসূচির বিপরীতে।

পেনশন কর্তৃপক্ষ জানায়, প্রথম ছয় মাস পর্যন্ত নিবন্ধনের প্রবৃদ্ধি কম থাকলেও সম্প্রতি তা বেড়েছে। গত এক মাসেই নিবন্ধন হয়েছে দেড় লাখের বেশি। আর পেনশন তহবিলে এ পর্যন্ত ৮২ কোটি টাকা জমা পড়েছে। এর মধ্য থেকে সরকারি ট্রেজারি বিলে বিনিয়োগ করা হয়েছে ৬২ কোটি ৫০ লাখ টাকা।

পেনশন কর্তৃপক্ষ এখন পর্যন্ত সোনালী, অগ্রণী, দি সিটি এবং ব্র্যাক ব্যাংক—এই চার ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি করেছে। এ ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে চাঁদা জমা হয় রাষ্ট্রীয় কোষাগারে। বেসরকারি আরও চার ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি করার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। এগুলো হচ্ছে প্রাইম ব্যাংক, ইস্টার্ণ ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক এবং ডাচ্ বাংলা ব্যাংক। এর বাইরে জনতা ব্যাংকের সঙ্গেও প্রক্রিয়া চলছে।

জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের সদস্য মো. গোলাম মোস্তফা প্রথম আলোকে বলেন, ‘নিবন্ধন করার কাজটি সহজ করতে আমরা তৃণমূল পর্যায়ে যাচ্ছি। তার অংশ হিসেবেই ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারগুলোতে গিয়েও সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচির নিবন্ধন করার সুযোগ তৈরি করা হচ্ছে। সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচির নিবন্ধন প্রবৃদ্ধি নিয়ে আমরা খুবই আশাবাদী।’