অতি মুনাফালোভীদের কারণেই বৈষম্য তৈরি হচ্ছে: ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ

ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান সবুর খান সম্পাদিত ’সংগ্রামী উদ্যোক্তাদের সাহসী পথচলা বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সাবেক তত্ত্ববধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, সবুর খান, মেঘনা গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. মোস্তফা কামাল প্রমুখছবি: সংগৃহীত

প্রকৃত উদ্যোক্তাদের কারণে অর্থনৈতিক বৈষম্য সৃষ্টি হয় না; হয় অতি মুনাফালোভী ও অনৈতিক সুবিধাভোগীদের কারণে। এরা নীতিনির্ধারক মহলের আনুকূল্যে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে অবৈধ সম্পদ অর্জন করে। অতি পুঁজিবাদের কারণে দেশে অর্থনৈতিক বৈষম্য তৈরি হয়েছে।

গতকাল রোববার ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ডিআইইউ) ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. সবুর খান সম্পাদিত ‘সংগ্রামী উদ্যোক্তাদের সাহসী পথচলা’ শীর্ষক বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। খবর বিজ্ঞপ্তি।

অনুষ্ঠানে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, দেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা ৩৫ শতাংশ। তবে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একটু ব্যতিক্রমী বলেই তাঁর মনে হয়। উদ্যোক্তা তৈরির মাধ্যমে বেকারত্ব কমানোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে এই বিশ্ববিদ্যালয়। প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে ক্ষুদ্র, মাঝারি ও বৃহৎ উদ্যোক্তাদের সম্মিলিত প্রয়াসে বাংলাদেশ উন্নয়নের এ পর্যায়ে আসতে পেরেছে বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন মেঘনা গ্রপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান মো. মোস্তফা কামাল, আইবিসিসিআইয়ের সভাপতি ও নিটল নিলয় গ্রুপের চেয়ারম্যান আবদুল মাতলুব আহমেদ, এলিট গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালক শাইয়ান সিরাজ, এক্সক্লুসিভ ক্যান লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ নাসির, বারডেমের ইমেরিটাস অধ্যাপক হাজেরা মাহতাব, আরপি সাহা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মনীন্দ্র কুমার রায় প্রমুখ।

ডিআইইউ ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড ইনোভেশন সেন্টারের উদ্যোগে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বইটির ওপর আলোকপাত করেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক। অনুষ্ঠানে বইটির সম্পাদক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. সবুর খান তাঁর প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য এম লুৎফর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত প্রকাশনা অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্ডাস্ট্রি ইনোভেশন সেন্টারের পরিচালক আবু তাহের খান। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী পরিচালক সামিহা খান।

ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ আরও বলেন, দেশে রাজনৈতিক স্খলনের পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্যেরও স্খলন হয়েছে। তিনি ব্যবসায়ীদের মুনাফা অর্জনের পাশাপাশি সমাজের কল্যাণে কাজ করার মাধ্যমে সোশ্যাল কন্ট্যাক্ট বা সামাজিক চুক্তিতে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানান।

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে মাহমুদ বলেন, জীবন চলার পথে দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের একটি হচ্ছে পেশা নির্বাচন। অর্থের প্রাচুর্য কম থাকলেও নিজের ভালো লাগা ও পছন্দ গুরুত্ব দিয়ে পেশা নির্বাচন করার আহ্বান জানান তিনি। জীবনের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো বিয়ে, যার মধ্য দিয়ে সঙ্গীকে নিয়ে সারা জীবন একসঙ্গে কাটাতে হবে। এর ফলে এখানেও যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বনের প্রয়োজন রয়েছে।

অনুষ্ঠানে মো. সবুর খান বলেন, বিপুলসংখ্যক উদ্যোক্তা তৈরি করা ছাড়া দেশের টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। উদ্যোক্তারা নিজের জীবনের পরিবর্তনের পাশাপাশি পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় পরিসরে পরিবর্তন নিয়ে আসেন। বিপুল পরিমাণ মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেন তাঁরা। এতে দেশের উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয়। তাই তরুণ প্রজন্মকে উদ্যোক্তা হতে উদ্বুদ্ধ করেন তিনি।

সবুর খান আরও বলেন, ইন্ডাস্ট্রি-একাডেমিয়ার সেতুবন্ধ তৈরিতে এ উদ্যোগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে এবং সে লক্ষ্যেই ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি দেশের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে উদ্যোক্তা তৈরিতে কাজ করে যাচ্ছে।

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সবুর খান ২০১৪ সালে ‘উদ্যোক্তা উন্নয়ন নির্দেশিকা’ শীর্ষক প্রথম বই লেখেন।

এরপর দ্বিতীয় বই লেখেন ২০১৬ সালে, ‘এ জার্নি টুওয়ার্ডস এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ’ নামে। এর এক বছর পর তিনি তৃতীয় বই লেখেন ‘উদ্যোক্তা উন্নয়ন ও ব্যবসায় নির্দেশনা’ শিরোনামে। এ বছরের জানুয়ারি মাসে লেখেন ‘পথিকৃৎ উদ্যোক্তাদের সংগ্রামী জীবন’ শীর্ষক আরেকটি বই আর গতকাল প্রকাশিত হলো ‘সংগ্রামী উদ্যোক্তাদের সাহসী পথচলা’।