ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) ও ঢাকায় ভারতীয় দূতাবাস আয়োজিত এক সেমিনারে অংশ নিয়ে এসব কথা বলেন মসিউর রহমান। আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি হোটেলে ভারত ও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা কাজে লাগাতে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়ন বিষয়ে এ সেমিনার আয়োজন করা হয়। ডিসিসিআই এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানিয়েছে।
ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের মাধ্যম হিসেবে বাংলাদেশকে মার্কিন ডলারের পরিবর্তে রুপি ব্যবহারের প্রস্তাব দিয়েছিল ভারত। গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে এ প্রস্তাব আসে দেশটি থেকে। এরপর বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ভারতের কাছে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব চাওয়া হয়। এ নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে কথাবার্তা চলছে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা মসিউর রহমান বলেন, দুই দেশের বাণিজ্য স্থানীয় মুদ্রায় করা যেতে পারে।
বাংলাদেশে বিনিয়োগ সহায়ক পরিবেশ রয়েছে জানিয়ে মসিউর রহমান বলেন, ভারত এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে একক কিংবা যৌথ বিনিয়োগে এগিয়ে আসতে পারে। এ ছাড়া যমুনা রেলসেতু স্থাপনসহ বেশ কিছু প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। এগুলো শেষ হলে দুই দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ পরিবেশ আরও সহজ হবে।
প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে কাঁচা পাট রপ্তানিতে আরোপিত অ্যান্টি-ডাম্পিং শুল্কের কারণে আমাদের স্থানীয় উদ্যোক্তারা সমস্যায় পড়ছেন।’ এটি নিরসনে ভারত সরকারকে সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি। এ ছাড়া ভারতের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশি পণ্যের ট্রান্সশিপমেন্ট প্রক্রিয়া আরও সহজ করার কথা বলেন মসিউর রহমান।
সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা, সাবেক পররাষ্ট্রসচিব ফারুক সোবহান, ঢাকা চেম্বারের সভাপতি মো. সামীর সাত্তার, সাবেক সভাপতি মতিউর রহমান, আসিফ ইব্রাহীম, মো. সবুর খান, শামস মাহমুদ, মেট্রোপলিটন চেম্বারের সাবেক সভাপতি আনিস উদ-দৌলা প্রমুখ।
ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা বলেন, বর্তমানে সাতটি ল্যান্ড কাস্টমস স্টেশনের অবকাঠামো উন্নয়নকাজ চলছে। এগুলো শেষ হলে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য আরও সহজতর হবে। পাশাপাশি বাংলাদেশি উদ্যোক্তারা অন্যান্য দেশে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে কলকাতা ও দিল্লি বিমানবন্দর ব্যবহার করতে পারে। এ ছাড়া ভবিষ্যতে সীমান্তবর্তী বর্ডার হাট কার্যক্রম আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
সেমিনারে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি মো. সামীর সাত্তার বলেন, ২০২২ অর্থবছরে ভারত-বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৬০০ কোটি মার্কিন ডলার। যোগাযোগ অবকাঠামোর প্রয়োজনীয় উন্নয়ন করা গেলে এই পরিমাণ ২ হাজার কোটি ডলারে নেওয়া সম্ভব।
স্থলবাণিজ্যের ৭০ শতাংশ বেনাপোল বন্দর দিয়ে
সেমিনারে ভারতীয় দূতাবাসের পক্ষ থেকে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়। এতে বলা হয়, ভারত-বাংলাদেশের মধ্যকার মোট বাণিজ্যের ৪০ শতাংশ হয়ে থাকে স্থলবন্দরের মাধ্যমে। এ ক্ষেত্রে প্রায় ৭০ ভাগই হয়ে থাকে বেনাপোল-পেট্রাপোল বন্দর ব্যবহার করে।
এতে আরও বলা হয়, গত পাঁচ বছরে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। আর গত তিন বছরে ভারতে বাংলাদেশের রপ্তানি দ্বিগুণ হয়েছে। এ ছাড়া ভারত থেকে সরাসরি ডিজেল আনতে প্রস্তাবিত পাইপলাইন চালু হলে বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ১০ লাখ মেট্রিক টন এ জ্বালানি তেল আনা সম্ভব হবে।
সেমিনারে মুক্ত আলোচনায় বক্তারা বাংলাদেশি উদ্যোক্তাদের জন্য ভারতের ভিসা দেওয়ার প্রক্রিয়া আরও সহজ করার পরামর্শ দেন।