ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ বেসরকারি খাতে ঘাটতি তৈরি করতে পারে: এমসিসিআই

বাজেট ২০২৪-২৫

ঘাটতি বাজেট পূরণে প্রস্তাবিত বাজেটে সরকার ব্যাংকিং খাত থেকে ১ লাখ ৩৭ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই) মনে করছে, এর ফলে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগযোগ্য অর্থের ঘাটতি হতে পারে।

অন্যদিকে সরকার কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নিলে মূল্যস্ফীতির চাপ বাড়ে, যে চাপ শেষ পর্যন্ত ভোক্তা বা জনগণকে বহন করতে হয়। এমসিসিআই মনে করে, এই দুই বিষয়ের মধ্যে যথাযথভাবে সমন্বয় করতে হবে। সংগঠনটির আশঙ্কা, ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতির কারণে ভবিষ্যতে ব্যবসা-বাণিজ্যের গতি কমে যেতে পারে।

গতকাল জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট পেশ করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। সেই বাজেট নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে এমসিসিআই।

চেম্বার মনে করে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে গরিবমুখী ও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধিতে বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত ছিল। এ ছাড়া সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীর মাধ্যমে দরিদ্র মানুষের সহায়তা উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ানো উচিত বলে তাদের মত। প্রস্তাবিত বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীর জন্য প্রস্তাবিত বরাদ্দ ১ লাখ ৩৬ হাজার ২৬ কোটি টাকা—২০২৩-২৪ অর্থবছরে যা ছিল ১ লাখ ২৬ হাজার ২৭২ কোটি টাকা। এই খাতে বরাদ্দ মাত্র ৯ হাজার ৭৫৪ কোটি টাকা বা ৭ দশমিক ৭২ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়েছে। এমসিসিআই এই খাতের বরাদ্দ যৌক্তিকভাবে বাড়ানো প্রয়োজন বলে মনে করে।

বাজেট প্রতিক্রিয়ায় আরও বিভিন্ন বিষয়ে নিজেদের মত তুলে ধরেছে এমসিসিসিআই। তাদের বিশ্বাস, অনুন্নত যোগাযোগব্যবস্থা ও অবকাঠামো, জ্বালানির অসম বণ্টনব্যবস্থা ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পথে এখনো মূল বাধা। এ ছাড়া দুর্বল রাজস্ব আদায়ব্যবস্থা (বর্তমান অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিল মধ্যে ৭০ দশমিক ৬ শতাংশ সংগৃহীত) এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) বাস্তবায়ন (বর্তমান অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিল পর্যন্ত ৪৯ দশমিক ৩ শতাংশ বাস্তবায়িত) অর্থনীতির জন্য উদ্বেগের কারণ।

সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিতে উচ্চ আমদানি প্রবণতা ও বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয়ে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছে এমসিসিসিআই। বিদ্যুৎ, গ্যাস ও সারের দামে উচ্চ ভর্তুকি নিয়ন্ত্রণের কথাও বলেছে তারা; তা না হরে ভর্তুকি ব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে আরও বৃদ্ধি পাবে বলে এমসিসিআই মনে করে।

শেয়ারবাজারের তালিকাবহির্ভূত কোম্পানি এবং একক ব্যক্তি কোম্পানিসমূহের করপোরেট করহার ২ দশমিক ৫ শতাংশ কমানোর প্রস্তাবের প্রশংসা করেছে এমসিসিআই। তবে এমসিসিআই অন্যান্য কোম্পানির ক্ষেত্রেও করহার কমানোর সুপারিশ করেছে। এতে সব কোম্পানি কর দিতে অনুপ্রাণিত হবে বলে এমসিসিআই বিশ্বাস করে।

এদিকে করপোরেট করহারের ক্ষেত্রে নগদ লেনদেনের শর্তাবলি পুনর্বিবেচনার বিষয়ে প্রস্তাব না থাকায় হতাশা ব্যক্ত করেছে এমসিসিআই। তারা মনে করে, বাংলাদেশের প্রায় ৮০ শতাংশ অর্থনীতি অপ্রাতিষ্ঠানিক; সে জন্য এসব শর্ত সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।

অন্যদিকে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে এমন নির্মাণ, অবকাঠামো ইত্যাদি পরিষেবায় উৎসে কর কর্তনের (টিডিএস) হার কমানোর পরামর্শ দিয়েছে চেম্বার। তারা মনে করে, বাংলাদেশে কার্যকর করহার অত্যন্ত বেশি। এ ক্ষেত্রে অনুমোদিত ব্যবসায়িক খরচ এবং উৎসে কর কর্তনের (টিডিএস) হার যৌক্তিকীকরণের মাধ্যমে করহার কার্যকরভাবে কমানোর লক্ষ্যে যুগোপযোগী পদক্ষেপ আশা করে চেম্বার।

ধারাবাহিক উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েই চলেছে। এই পরিস্থিতিতে ব্যক্তি শ্রেণির করদাতাদের করমুক্ত আয়সীমা বৃদ্ধি না করে উল্টো করহার ২৫ থেকে বৃদ্ধি করে ৩০ শতাংশ নির্ধারণ করার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছে এমসিসিআই।

চেম্বার মনে করে, করদাতার সংখ্যা বৃদ্ধি তথা করনেট বৃদ্ধি না করে শুধু বিদ্যমান করদাতাদের করহার বৃদ্ধি করে আশানুরূপ কর জিডিপি অনুপাত অর্জন করা সম্ভব নয়।