রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে বিশ্বজুড়ে বেড়েছে মূল্যস্ফীতি। সেই মূল্যস্ফীতিতে রাশ টানতে বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক নীতি সুদহার বাড়িয়েছে। এতে সামগ্রিকভাবে সমাজে অর্থের প্রবাহ কমে গেছে। কমেছে পরিবারের আত্মবিশ্বাস ও চাহিদা। বিশেষ করে উন্নত দেশের অবস্থা শোচনীয়।
এ পরিস্থিতিতে বিশ্বের ধনী দেশগুলোর সংগঠন অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (ওইসিডি) ধনী দেশগুলোর পরিস্থিতি খতিয়ে দেখছে। আগামী ১২ মাসে এই দেশগুলো কেমন করতে পারে, তার রূপরেখা দিয়েছে ওইসিডি।
চীন: ৪.৬% প্রবৃদ্ধি
চীন বরাবরই নিজেকে বহির্বিশ্ব থেকে আলাদা করে রাখে। গত দুই বছরেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরু হয় চীনে। আবার তারাই প্রথম এই ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে। কিন্তু গত বছর বিশ্বের অন্যান্য দেশে করোনাভাইরাসের প্রকোপ কমতে শুরু করলেও চীনে আবার বাড়তে শুরু করে। ফলে ২০২২ সালের বড় একটি সময় চীনে লকডাউন ছিল। সম্প্রতি তারা করোনাজনিত বিধিনিষেধ শিথিল করেছে। ফলে অর্থনীতিতে গতি আসতে শুরু করেছে, যদিও দেশটিতে আবাসন বাজারে বড় ধরনের সংকট আছে।
ওইসিডি মনে করছে, ২০২৩ সালে চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দাঁড়াতে পারে ৪ দশমিক ৬ শতাংশ, ২০২২ সালে যাদের প্রবৃদ্ধি ছিল ৩ দশমিক ৩ শতাংশ।
আয়ারল্যান্ড: ৩.৮%
চীন ওইসিডিভুক্ত দেশ নয়। ওইসিডি বলছে, ২০২৩ সালে তাদের ৩৮টি সদস্যদেশের মধ্যে আয়ারল্যান্ডের প্রবৃদ্ধি হবে সবচেয়ে বেশি। এ বছর তাদের প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৩ দশমিক ৮ শতাংশ। তবে ২০২২ সালে উইন্ডফল কর ও অভ্যন্তরীণ চাহিদা বৃদ্ধির কারণে দেশটির প্রবৃদ্ধি দাঁড়াতে পারে ১০ দশমিক ১ শতাংশ।
তুরস্ক: ৩%
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে মূল্যস্ফীতির হার সবচেয়ে বেশি বেড়েছে তুরস্কে। সর্বোচ্চ ৮৫ দশমিক ৫ শতাংশে ওঠে দেশটির মূল্যস্ফীতির হার। এ বছর মূল্যস্ফীতির হার কমে এলেও তা ৪০ শতাংশের ওপরেই থাকবে। এতে দেশটির অভ্যন্তরীণ চাহিদা ও বিনিয়োগ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সেই সঙ্গে আছে বেকারত্ব ও রপ্তানির নিম্নগতি। ফলে ২০২৩ সালে দেশটির প্রবৃদ্ধি দাঁড়াতে পারে ৩ শতাংশ, ২০২২ ও ২০২১ সালে যা ছিল যথাক্রমে ৫ দশমিক ৩ ও ১১ শতাংশ।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র: ০.৫%
উচ্চ মূল্যস্ফীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে পথ দেখিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ। দফায় দফায় নীতি সুদহার বাড়িয়েছে ফেড। এতে অবশ্য কাজও হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যস্ফীতির হার অনেকটাই কমে এসেছে। তবে মূল্যস্ফীতির হার ২০২৪ সালের আগে ফেডারেল রিজার্ভের লক্ষ্যমাত্রা ২ শতাংশের মধ্যে আসবে না। সেই সঙ্গে সুদহারও বাড়তি। ফলে অর্থনীতিতে চাপ থাকবে। ওইসিডির পূর্বাভাস, ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রবৃদ্ধি দাঁড়াতে পারে শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ।
জার্মানি: ০.৩%
রাশিয়ার জ্বালানির ওপর যেসব দেশ সবচেয়ে নির্ভরশীল, তাদের মধ্যে জার্মানি অন্যতম। রাজনৈতিক কারণে তারাও একরোখা, রাশিয়ার জ্বালানি ব্যবহার করা যাবে না। ফলে জ্বালানির উচ্চ দামের কারণে তারা সবচেয়ে ভুক্তভোগী হচ্ছে। চলতি ২০২৩ সালে দেশটির অর্থনীতি সংকুচিত হবে বলে আশঙ্কা করছে ওইসিডি, হার দাঁড়াবে ০.৩।
যুক্তরাজ্য: ০.৪%
২০২০ সালে উন্নত দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে সংকুচিত হয়েছে যুক্তরাজ্য। এরপর তারা ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছিল। ২০২১ সালে তারা ঘুরে দাঁড়ায়। ২০২২ সালেও তাদের প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৪ দশমিক ৪ শতাংশ। কিন্তু জার্মানির মতো যুক্তরাজ্যের অর্থনীতিও রাজনীতির বলি হতে যাচ্ছে বলেই মনে করছে ওইসিডি। অর্থাৎ রাশিয়ার জ্বালানি না নেওয়ার খেসারত দিতে হবে তাদেরও। পূর্বাভাস, ২০২৩ সালে যুক্তরাজ্যের অর্থনীতি শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ সংকুচিত হতে পারে।
সামগ্রিকভাবে চলতি বছর ভালো যাবে না বলেই মনে করছে বৈশ্বিক সংস্থাগুলো। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) গতকাল বলেছে, আগামী বছর বিশ্বের এক-তৃতীয়াংশ দেশ মন্দার কবলে পড়তে পারে। ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা বলেছেন, নতুন বছর, অর্থাৎ ২০২৩ সালে বিশ্ব অর্থনীতি গত বছরের তুলনায় কঠিন সময় পার করবে। কারণ, যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) অর্থনীতির গতি এরই মধ্যে মন্থর হয়ে গেছে। এমনকি যেসব দেশ মন্দার কবলে পড়বে না, তাদের গায়েও আঁচ লাগবে বলে তাঁর আশঙ্কা।