ই–কমার্স কেলেঙ্কারির পর হচ্ছে আইন

আইনের খসড়া তৈরি। এর ওপর মতামত নিয়ে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য। একটি কর্তৃপক্ষ গঠনের মাধ্যমে আইনটি কার্যকর হবে।

ই–কমার্স
প্রতীকী ছবি

ডিজিটাল বাণিজ্য বা ই–কমার্স খাতে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান অনেক কেলেঙ্কারি জন্ম দেওয়ার পর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় অবশেষে একটি আইন করছে। এর নাম ‘ডিজিটাল বাণিজ্য আইন-২০২৩’। ইতিমধ্যে আইনটির খসড়া তৈরি হয়েছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলছে, ডিজিটাল বাণিজ্যের ধারাবাহিক প্রসার; ডিজিটাল বাণিজ্যে শৃঙ্খলা রক্ষা; সংঘটিত অপরাধ প্রতিরোধ, দমন, বিচার এবং ডিজিটাল বাণিজ্য কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠার উদ্দেশে এ আইন প্রণয়ন করা হচ্ছে। আইনটি বাস্তবায়নে ডিজিটাল বাণিজ্য কর্তৃপক্ষ গঠন করা হবে। এতে একজন মহাপরিচালক (ডিজি) ও তিনজন পরিচালক থাকবেন।

আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে, পণ্য বিক্রি ও সেবা দেওয়ার অনলাইন পেজ ও ফেসবুক পেজভিত্তিক সব ডিজিটাল বাণিজ্যপ্রতিষ্ঠানকে ব্যবসা শুরুর আগে ডিজিটাল বিজনেস আইডেনটিটি (ডিবিআইডি) নিবন্ধন নিতে হবে। আইন কার্যকর হওয়ার পর থেকে চার মাসের মধ্যে নিবন্ধন নেওয়া বাধ্যতামূলক। নিবন্ধন না নিয়ে কোনো ডিজিটাল ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ব্যাংক, মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান ও পেমেন্ট গেটওয়ে কোম্পানির সঙ্গে লেনদেন করতে পারবে না।

ইভ্যালির মতো কোনো প্রতিষ্ঠান বড় ধরনের সংকট তৈরি করলে অর্থ উদ্ধারের পদ্ধতি কী হবে, তা গুরুত্বপূর্ণ। খসড়ায় তার অনুপস্থিতি দেখলাম।
সুবর্ণ বড়ুয়া, সহযোগী অধ্যাপক, ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডিজিটাল কমার্স সেলের প্রধান মো. হাফিজুর রহমান গত সোমবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটা একটা প্রাথমিক খসড়া। এর ওপর সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকে নিয়ে একটা বৈঠক হয়েছে, আরও বৈঠক হবে। এর পর তা পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। তার পর মন্ত্রিসভার অনুমোদন পেলে পাঠানো হবে সংসদে।’

পণ্যের ট্র্যাকিং–পদ্ধতি বাধ্যতামূলক

পণ্য পরিবহন ও লজিস্টিকস সেবা দানকারী প্রতিষ্ঠানকে মেইলিং অপারেটর ও কুরিয়ার সার্ভিস আইনের অধীনে নিবন্ধিত হওয়ার কথা বলা হয়েছে খসড়ায়। এ জন্য উভয় পক্ষের মধ্যে চুক্তি থাকতে হবে। তবে কোনো ডিজিটাল ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের নিজস্ব পণ্য পরিবহনের ব্যবস্থা থাকলে নিবন্ধন ও চুক্তি করতে হবে না।

ডিজিটাল পদ্ধতিতে পণ্যে পার্সেল ও সেবা ট্র্যাকিং করার ব্যবস্থা থাকতে হবে সব ডিজিটাল ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের। পণ্য পরিবহনের সুবিধার্থে গুদাম থাকাও বাধ্যতামূলক। পণ্য ও সেবা পরিবহনের সময় ঘোষিত পরিবহন খরচের বাইরে গ্রাহকের কাছ থেকে বাড়তি টাকা নেওয়া যাবে না।

বিক্রেতার ব্যাংকে টাকা জমা নয়

খসড়ায় বলা হয়েছে, কোনো গ্রাহক সুবিধামতো ক্যাশ অন ডেলিভারি অথবা অগ্রিম মূল্য পরিশোধ করতে পারবেন। ডিজিটাল বাণিজ্যপ্রতিষ্ঠানগুলোকে এ ধরনের বিকল্প ব্যবস্থা রাখতে হবে। গ্রাহক অগ্রিম মূল্য পরিশোধের জন্য গ্রাহক বাংলাদেশ ব্যাংক অনুমোদিত যেকোনো ক্রেডিট কার্ড, ডেবিট কার্ড বা মোবাইল আর্থিক সেবা দাতা কোম্পানির (এমএফএস) মাধ্যম ব্যবহার করতে পারবে।

তবে কোনো অবস্থাতেই সরাসরি ডিজিটাল বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান বা অনলাইন বিক্রেতার ব্যাংক হিসাবে অর্থ জমা দেওয়া যাবে না। ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে পেমেন্ট গেটওয়ে প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ থাকতে হবে। গ্রাহকের টাকা পেমেন্ট গেটওয়ে প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানের কাছে যাবে।

ব্যবসা করতে পণ্য কেনা যাবে না

বলা হয়েছে, সব পণ্য ও সেবার উৎপাদন এবং মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ, প্রস্তুতকারক ও প্রস্তুতের স্থান, মূল্য এবং আনুষাঙ্গিক সব বিষয় বিশদভাবে উল্লেখ করতে হবে। বিদেশি পণ্য ও সেবার ক্ষেত্রেও আমদানিকারকের বিবরণ থাকা চাই। বিক্রির জন্য প্রদর্শিত পণ্য ও সেবার বিপরীতে কতটি ক্রয়াদেশ দেওয়া যাবে, তা–ও উল্লেখ করতে হবে। নিত্যপণ্যের ক্ষেত্রে একই দ্রব্য সর্বোচ্চ পাঁচটি এবং শৌখিন দ্রব্য দুটির বেশি কেনা যাবে না। শৌখিন দ্রব্য এক হাজার টাকার কম হলে পাঁচটির ক্রয়াদেশ দেওয়া যাবে। তবে ক্রেতা শুধু ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য পণ্য কিনতে পারবেন, ব্যবসায়ের জন্য নয়।

পণ্য না দিলে তিন গুণ জরিমানা

কোনো ধরনের মিথ্যা তথ্য প্রকাশ করলে বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানকে তিন বছরের কারাদণ্ড এবং পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থ দণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে হবে। নির্দিষ্ট সময়ে পণ্য বা সেবা দিতে না পারলে পণ্য বা সেবার মূল্যের তিন গুণ অর্থদণ্ড এবং অনাদায়ে তিন মাস বিনাশ্রম কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে খসড়ায়।

জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সুবর্ণ বড়ুয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘আইন হচ্ছে এটা একটা ইতিবাচক বিষয়। টেবিলে বসে আইন তৈরির চেয়ে একটা গবেষণা হওয়া জরুরি। ইভ্যালির মতো কোনো প্রতিষ্ঠান বড় ধরনের সংকট তৈরি করলে অর্থ উদ্ধারের পদ্ধতি কী হবে, তা গুরুত্বপূর্ণ। খসড়ায় তার অনুপস্থিতি দেখলাম।’

সুবর্ণ বড়ুয়া আরও বলেন, মুক্তবাজার অর্থনীতিতে পাঁচটি বা তিনটি পণ্য কেনার কথা বলা মুশকিল। সংখ্যা বেঁধে দেওয়াটা ডিজিটাল ব্যবসার প্রবৃদ্ধিকে টেনে ধরবে।