আগামী অর্থবছর বিপুল টাকা ছাপাতে হতে পারে

বাজেট ঘাটতি মোকাবিলায় সরকার সাধারণ ব্যাংক ঋণ, বিদেশি ঋণ ও সঞ্চয়পত্রের ওপর নির্ভর করে। কিন্তু প্রথাগত এসব উৎস শুকিয়ে আসছে, তাই আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সরকারকে এক লাখ কোটি টাকা পর্যন্ত সমমূল্যের নোট ছাপাতে হতে পারে।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে সরকারের আবর্তক ব্যয় ৮৬ হাজার কোটি টাকা বা ২৬ শতাংশ বেড়েছে।

এর মধ্যে কর্মচারী ও প্রশাসনিক খাতে ব্যয় ৬০ হাজার কোটি টাকা বা ৩৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। মেগা প্রকল্পের পেছনে ব্যয় ৬ হাজার কোটি টাকা বা ১১ শতাংশ বেড়েছে। অর্থাৎ মেগা প্রকল্প নয়, মূলত প্রশাসনিক ব্যয় মেটানোই এখন দেশের মানুষের জন্য সবচেয়ে বড় চাপ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। এই খরচ মেটাতেই টাকা ছাপানোর প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার অনলাইনে ফোরাম ফর বাংলাদেশ স্টাডিস আয়োজিত ‘বাজেট ২০২৩-২৪ ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার মূল্যায়ন’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধে এসব কথা বলেন জার্মান ফেডারেল শিক্ষা ও গবেষণা মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প গবেষক জিয়া হাসান। জিয়া হাসান আরও বলেন, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সরকারের অতিরিক্ত ব্যয় ন্যূনতম এক লাখ কোটি টাকা অতিক্রম করবে, টাকা ছাপানো ছাড়া অন্য কোনো উপায়ে অর্থায়নের তেমন সুযোগ নেই।

টাকা ছাপানোর বিপদ সম্পর্কে জিয়া হাসান বলেন, টাকা ছাপিয়ে প্রশাসনের ব্যয় বৃদ্ধির এই বাজেটে মূল্যস্ফীতি অনিবার্য হবে, সাধারণ মানুষের জীবন অসহনীয় হয়ে উঠবে। এতে টাকার মানের পতন ঘটবে এবং প্রতিটি পণ্য ও সেবায় দফায় দফায় মূল্যস্ফীতি হবে। ডলার রেশনিংয়ের কারণে সরকারি পণ্যে অগ্রাধিকার দিতে গিয়ে সাধারণ মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় পণ্যের এলসি খোলা যাবে না।

অনুষ্ঠানে প্যানেল আলোচক ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, সরকার ব্যাংক খাত ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বিপুল পরিমাণে ঋণ নিলে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বাড়বে না। অর্থাৎ এর মাধ্যমে সরকার নিজেই কর্মসংস্থানের পথ রুদ্ধ করে দিচ্ছে। তাই সালেহউদ্দিন আহমেদ মনে করেন, সঞ্চয়পত্রের ওপর নির্ভরশীলতা কমানো ঠিক হয়নি।

এতে যেমন মানুষের আয় বাড়ত, তেমনি সরকারও ব্যাংক খাতের ওপর নির্ভরশীল হতো না। মূল বিষয় হলো রপ্তানি ও প্রবাসী আয় বাড়াতে হবে। সে সঙ্গে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি বাড়াতে হবে, তা না হলে বিদেশি ঋণ আসবে না।

সরকারের ব্যয় প্রসঙ্গে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, সরকার ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ঘাটতি মোকাবিলা করলে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ কমে যাবে। এতে কর্মসংস্থান কমে যাবে। সরকারের অনেক প্রকল্প আছে, যেগুলোর তেমন কার্যকারিতা নেই, এসব কাটছাঁট করলে তেমন কোনো সমস্যা নেই।

সে সঙ্গে সরকারের প্রশাসনিক ব্যয় বাড়ছে, যা কমলে সরকারের ঘাটতিও অনেক কমে যায়। সেটা হলে ব্যাংক খাত থেকে সরকারের ঋণ নেওয়ার প্রয়োজন কমে, সে অর্থ বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ হলে বরং কর্মসংস্থান বাড়ত। কিন্তু এখন একদিকে মূল্যস্ফীতি বাড়তি, সেই সঙ্গে কর্মসংস্থা কম, এতে একধরনের স্ট্যাগফ্লেশন তৈরি হয়েছে।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজনের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার। সমাপনী বক্তব্য দেন ফ্রাই ইউনিভার্সিটি ব্রাসেলসের পোস্ট-ডক্টরাল ফেলো সাইমুম পারভেজ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন টেকসই উন্নয়নবিষয়ক লেখক ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব।