প্রযুক্তি কোম্পানির ব্যবসায় ধস

২০২০ ও ২০২১ সালে মহামারির সময় মানুষের চলাচল সীমিত হয়ে পড়লে সারা বিশ্বেই ই-কমার্স খাতের বাড়বাড়ন্ত হয়। ফলাফল—সেই দুই বছরে ই-কমার্স খাত বিপুল মুনাফা করে। কিন্তু পরিস্থিতির পরিবর্তন হতেই চালচিত্র আবার বদলে গেছে। মানুষ এখন সরাসরি বাজারে গিয়ে কেনাকাটা করছে।

আবার চলমান অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যে অতিপ্রয়োজনীয় নয়—এমন কেনাকাটা কমে গেছে। স্বাভাবিকভাবেই চাহিদায় ভাটা পড়েছে। সামগ্রিকভাবে ই-কমার্স খাতের প্রবৃদ্ধি থমকে গেছে।

বাস্তবতা হলো, বিশ্বের বৃহত্তম ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান অ্যামাজনের বাজারমূল্যে রীতিমতো ধস নেমেছে। সিঙ্গাপুরভিত্তিক সংবাদমাধ্যম স্ট্রেইটস টাইমসের খবরে বলা হয়েছে, কঠোর আর্থিক নীতি ও মুনাফার দুর্বল পূর্বাভাসের কারণে পুঁজিবাজারে অ্যামাজনের শেয়ারদর নিম্নমুখী। সব মিলিয়ে গত ১৬ মাসে কোম্পানিটির বাজারমূল্য কমেছে এক লাখ কোটি ডলার।

এই প্রথম কোনো প্রতিষ্ঠানের বাজারদর এতটা কমল। শুধু অ্যামাজন নয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সব বড় প্রযুক্তি কোম্পানির অবস্থাই খারাপ। দ্য ইকোনমিস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত এক বছরে অ্যালফাবেট, অ্যামাজন, অ্যাপল ও মাইক্রোসফটের সম্মিলিত স্টক মূল্য দুই ট্রিলিয়ন বা দুই লাখ কোটি ডলার কমেছে।

এর মধ্যে ফেসবুকের মূল কোম্পানি মেটা গত সপ্তাহে জানিয়েছে, তারা ১৩ শতাংশ বা ১১ হাজার কর্মী ছাঁটাই করবে। আরেক দিকে টুইটারের অবস্থা তথৈবচ। কোম্পানির নতুন মালিক ইলন মাস্ক ইতিমধ্যে অর্ধেক কর্মী ছাঁটাই করেছেন। টুইটারে রীতিমতো আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। আর তথ্য সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান ক্রাঞ্চবেসের তথ্যানুসারে, ২০২২ সালে ৬০ হাজার মার্কিন প্রযুক্তি কর্মীর কাজ গেছে।

দ্য ইকোনমিস্ট প্রযুক্তি খাতের এই দুর্দশার কারণ অনুসন্ধান করেছে। তাদের ভাষ্য, দুর্বল ব্যবসায়িক মডেল এর জন্য আংশিক দায়ী। সেই সঙ্গে উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও বন্ধকি ঋণের ক্রমবর্ধমান সুদের কারণে ডিজিটাল পণ্য ক্রেতাদের অর্থের টান পড়েছে।

গত বছরের শেষ দিকে বিশ্বের সবচেয়ে দামি কোম্পানিতে পরিণত হয় অ্যাপল। সে সময় তার বাজারমূল্য তিন লাখ কোটি ডলারের মাইলফলক ছোঁয়ার কাছাকাছি পৌঁছে যায়। ২ লাখ কোটি ডলারের বাজারমূল্য থেকে ৩ লাখ কোটি ডলারের কাছাকাছি পৌঁছতে অ্যাপলের সময় লেগেছিল ১৬ মাস।

আবার ১ লাখ কোটি থেকে ২ লাখ কোটি ডলারের কোম্পানিতে পরিণত হতে অ্যাপলের সময় লেগেছিল দুই বছর। তবে সে জায়গা থেকে চলতি মাসে আইফোন নির্মাতার বাজারমূল্যও ২ লাখ ১৪ হাজার কোটি ডলারে নেমেছে।