ভোজ্যতেলে ভ্যাট অব্যাহতি থাকুক

চালের দর কৃষি ও খাদ্য মন্ত্রণালয় দেখবে। মসুর ডাল, রড ও সিমেন্টের দর নির্ধারণে এখন কাজ চলছে।

ভোজ্য তেল
ফাইল ছবি

আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত সয়াবিন ও পাম তেলের দাম কমা সত্ত্বেও বাংলাদেশের ভোক্তারা এর সুবিধা পাচ্ছেন না। কারণ, আমদানি ব্যয় পরিশোধ করতে হয় যে মার্কিন ডলারে, সেটির দাম বেড়ে গেছে।

বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক প্রতিবেদনে এ কথা বলেছে। কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অপরিশোধিত সয়াবিন ও পাম তেল আমদানিতে বর্তমানে ১০ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (মূসক বা ভ্যাট) অব্যাহতি রয়েছে। এটি ভোক্তাদের স্বার্থে ২০২৩ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত অব্যাহত রাখার সুপারিশ করেছে সংস্থাটি। আগের দেওয়া অব্যাহতি এক সপ্তাহ পর অর্থাৎ ৩০ সেপ্টেম্বর শেষ হয়ে যাবে।

ভোক্তার ক্রয়ক্ষমতা বিবেচনা করে ভোজ্যতেলের মূল্য ও সরবরাহে স্থিতিশীলতা ধরে রাখতে শুধু আমদানিতেই নয়, সেই সঙ্গে উৎপাদন ও ব্যবসায়ী পর্যায়েও ভ্যাট অব্যাহতি দরকার বলে মনে করে ট্যারিফ কমিশন।

১০ শতাংশ ভ্যাট অব্যাহতির গুরুত্ব তুলে ধরে ইতিমধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) চিঠি পাঠানো হয়েছে। আশা করছি, এনবিআর তা আমলে নেবে।
তপন কান্তি ঘোষ, বাণিজ্যসচিব

গত ৩০ আগস্ট বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে ৯টি পণ্যের দাম বেঁধে দেওয়ার যে সিদ্ধান্ত হয়, তার পরিপ্রেক্ষিতে ট্যারিফ কমিশন এ প্রতিবেদন তৈরি করে।

বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষ প্রথম আলোকে বলেন, ‘১০ শতাংশ ভ্যাট অব্যাহতির গুরুত্ব তুলে ধরে ইতিমধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) চিঠি পাঠানো হয়েছে। আশা করছি, এনবিআর তা আমলে নেবে।’

প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতি লিটার ভোজ্যতেলের ক্ষেত্রে উৎপাদকের মুনাফা ২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১ শতাংশ, পরিবেশকের মুনাফা ৪ টাকা থেকে ২ টাকা ৫০ পয়সায় এবং খুচরা ব্যবসায়ীর মুনাফা ৬ টাকা থেকে ৪ টাকা ৫০ পয়সায় নামিয়ে আনা যেতে পারে।

এ ছাড়া চিনির ক্ষেত্রে প্রতি কেজিতে উৎপাদকের মুনাফা ২ শতাংশ থেকে ১ শতাংশ, পরিবেশকের ২ টাকার বদলে ১ টাকা এবং খচরা ব্যবসায়ীদের ৩ টাকা থেকে ২ টাকায় নামিয়ে আনা যেতে পারে।

‘দুটি অন্তর্বর্তীকালীন প্রতিবেদন পাঠিয়েছি। মসুর ডাল, আটা, ময়দা, রড ও সিমেন্ট নিয়ে কাজ চলছে। আমরা সময় চেয়েছি। আশা করছি, ভালো প্রতিবেদনই তৈরি হবে।’
মাহফুজা আখতার, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান

কোম্পানিগুলো বলে থাকে যে অপরিশোধিত সয়াবিন পরিশোধন করতে গেলে প্রক্রিয়াজাতকরণ ক্ষতি হয় ৪ দশমিক ২৫ শতাংশ। আর চিনির ক্ষেত্রে এই হার ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে এ ক্ষতি ধরা হয়। প্রতিবেদনে সয়াবিনের ক্ষতি ৩ শতাংশ ও চিনির ক্ষতি ৪ শতাংশ ধরার সুপারিশ করা হয়েছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, এখন অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে কারখানাগুলো চলে। ফলে আগের মতো প্রক্রিয়াজাতকরণ ক্ষতি আর হয় না।

ব্যবসায়ীদের আপত্তি

প্রায় ১০ বছর ধরে অভিন্ন মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতি অনুযায়ী ভোজ্যতেল ও চিনির মূল্য পর্যালোচনা করে ট্যারিফ কমিশন। তারা ব্যবহার করে ঋণপত্র (এলসি) ও কাস্টমসের শুল্কায়নের তথ্য। প্রতিবেদনে বলা হয়, দীর্ঘদিন যাবৎ ডলারের বিনিময় হার স্থিতিশীল থাকায় এ নিয়ে ব্যবসায়ীদের কোনো আপত্তিও ছিল না।

এ বছরের মে মাস থেকে সরকারের বেঁধে দেওয়া ডলারের বিনিময় হার এবং খোলাবাজারে (কার্ব মার্কেট) ডলারের বিনিময় হারে বড় ধরনের পার্থক্য দেখা যাচ্ছে। ফলে প্রচলিত পদ্ধতিতে হিসাব করলে ব্যবসায়ীদের ক্ষতি হবে। তাই এর সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেন তাঁরা।

বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) প্রথম সহসভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘১০৫ থেকে ১১০ টাকা দরে ডলার কিনে এলসি খুলে পণ্য আমদানি করলে তা হিসাবের ক্ষেত্রে বিবেচনায় না নেওয়া অনেকটা গায়ের জোরের মতো হয়ে যায়। এ রকম করলে ভবিষ্যতে কেউ এলসিই খুলবেন না।’

ট্যারিফ কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্যবসায়ীদের দাবি মেনে মূল্য নির্ধারণ করতে গেলে ভোজ্যতেল ও চিনির দাম বাড়বে এবং ভোক্তাদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি হবে। তবে ব্যবসায়ীদের আপত্তি আমলে নেওয়া হবে কি না, এ ব্যাপারে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে প্রতিবেদনে।

বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষ এ নিয়ে প্রথম আলোকে বলেন, পাম তেল ও চিনির দাম কিছুটা কমানো হয়েছে। প্রতি ডলারের দাম ১০৫ টাকা ধরে হিসাব করার দাবি ব্যবসায়ীদের। এ কারণে সয়াবিনের দাম কমানো সম্ভব হয়নি। এ নিয়ে কাজ চলছে।

চালের দর নির্ধারণে দুই মন্ত্রণালয়

বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনার জন্য গঠিত ট্যারিফ কমিশনের কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাদের পক্ষে চালের দর ঠিক করা যৌক্তিক হবে না। যৌথভাবে এ সিদ্ধান্ত নিতে পারে খাদ্য ও কৃষি মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষে কিছু করা সাংঘর্ষিক হবে। তবে মসুর ডাল, আটা ও ময়দা নিয়ে কিছু বলতে ৫ দিন সময় লাগবে।

এদিকে ১৮ সেপ্টেম্বর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে আলাদা এক প্রতিবেদন পাঠিয়ে ট্যারিফ কমিশন বলেছে, মান ও গ্রেডভেদে রড ও সিমেন্টের মূল্যে ব্যাপক পার্থক্য রয়েছে। এ দুটির মূল্য নির্ধারণে সময় লাগবে ২০ কার্যদিবস।

বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান মাহফুজা আখতার প্রথম আলোকে বলেন, ‘দুটি অন্তর্বর্তীকালীন প্রতিবেদন পাঠিয়েছি। মসুর ডাল, আটা, ময়দা, রড ও সিমেন্ট নিয়ে কাজ চলছে। আমরা সময় চেয়েছি। আশা করছি, ভালো প্রতিবেদনই তৈরি হবে।’