যারা কর দেয়, তাদের আরও চাপ দেওয়া হয়: সালমান এফ রহমান

সালমান রহমানছবি প্রথম আলো

‘বাংলাদেশের কর-জিডিপির অনুপাত সম্প্রতি আরও কমেছে। যারা কর দেয়, আমরা চেষ্টা করি, তাদের কাছ থেকে আরও বেশি কর সংগ্রহের। সেটা না করে আমাদের করজাল সম্প্রসারণ করা দরকার। সেই সঙ্গে দরকার করহার কমানো।’ বাংলাদেশ বিজনেস ইনডেক্স প্রকাশ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান।

প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘গত ১৫ বছরে আমাদের জিডিপি অনেক বেড়েছে, কিন্তু আমাদের কর-জিডিপির অনুপাত বাড়ছে তো না, উল্টো কমছে। এটা প্রকৃত অর্থেই আমাদের ব্যর্থতা।’

আজ রাজধানীর গুলশানে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ব্যবসা পরিবেশ সূচক বা বিজনেস ক্লাইমেট ইনডেক্স (বিবিএক্স) প্রকাশ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন সালমান এফ রহমান। ব্যবসায়ীদের নিয়ে করা জরিপের ভিত্তিতে এ সূচক তৈরি করা হয়েছে। এবার নিয়ে তৃতীয়বার বিবিএক্স জরিপ পরিচালনা করেছে মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই) ও বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশ।

বর্তমান সরকার ব্যবসাবান্ধব এবং এ কারণে সরকার এত দূর আসতে পেরেছে বলে মন্তব্য করেন সালমান এফ রহমান। ব্যবসা–বাণিজ্যের পরিবেশ নিয়ে এমসিসিআই ও পলিসি এক্সচেঞ্জ যে প্রতিবেদন দিয়েছে, তার ওপর কাজ করতে হবে বলে তিনি মনে করেন।

সালমান এফ রহমান বলেন, দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে ব্যবসার পরিবেশের উন্নতি করতে হবে। বিনিয়োগের জন্য অর্থায়ন প্রয়োজন, কিন্তু অর্থায়ন নিয়ে যে জটিল সমস্যা আছে, সেটি জরিপে উঠে এসেছে। বাংলাদেশের অর্থনীতির যে আকার, তার সাপেক্ষে শক্তিশালী পুঁজিবাজার থাকা প্রয়োজন। প্রধানমন্ত্রীও সে কথা বলেছেন। এটা নিয়ে সিকিউরিটিস অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি) ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে কথা হয়েছে। এ খাতে যেসব সংস্কার করা দরকার, তা করা হবে।

একসময় বিশ্বব্যাংক বিশ্বব্যাপী সহজে ব্যবসার সূচক প্রণয়ন করত। পরবর্তীকালে তা বন্ধ হয়ে যায়। সালমান এফ রহমান বলেন, বিশ্বব্যাংকের সেই সূচকের পরিসংখ্যানগত ভিত্তি অতটা শক্তিশালী ছিল না। তবে এমসিসিআই ও পলিসি এক্সচেঞ্জ যা করেছে, তা খুবই ভালো হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। বলেন, তারা দেশের আটটি বিভাগের সব খাত নিয়ে এই জরিপ করেছে।

এই সূচক প্রণয়নের জন্য এমসিসিআইকে ধন্যবাদ জানান সালমান এফ রহমান। তিনি বলেন, ‘তিন বছর ধরে এই জরিপ হচ্ছে। এ সময়ের তথ্য-উপাত্ত আমাদের হাতে চলে এসেছে। বিডাকে অনুরোধ করব, এই প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে কোথায় আমরা উন্নতি করতে পারি, তার রূপরেখা প্রণয়ন করা হোক।’

বাংলাদেশের চলমান অর্থনৈতিক সংকট প্রসঙ্গে সালমান এফ রহমান বলেন, ‘কোভিডের আগপর্যন্ত সবাই বলেছে যে বাংলাদেশের উন্নয়ন মডেল আন্তর্জাতিক পরিসরে অনুসরণীয়। কোভিডের সময়ও প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ ভালো করেছে; ২০২০ সালেও আমাদের ৫ শতাংশের বেশি হারে প্রবৃদ্ধি হয়েছে।’

সালমান রহমান মনে করেন, বাংলাদেশের সংকট শুরু হয়েছে রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধের পর। মূল সমস্যা শুরু হলো, ফেডারেল রিজার্ভের নীতি সুদহার বৃদ্ধির মধ্য দিয়ে। ফলে ডলারের বিনিময় হার বেড়ে গেল। টাকা ও রিজার্ভের ওপর চাপ বাড়ল। জ্বালানি, সার ও গমের মতো সব আমদানি পণ্যের দাম বাড়ল, মূল্যস্ফীতি ঊর্ধ্বমুখী হলো। ডলারের বিনিময় হার বেড়েছে; আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দামও বেড়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘ডলারের বিনিময় হার অনেকটা বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এতে ডলার–সংকট অনেকটা নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে। মূল্যস্ফীতি এখনো বেশি। এ জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক নীতি সুদহার বৃদ্ধি করেছে। আমরা আশাবাদী, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।’

২০২৩-২৪ অর্থবছরে দেশের ব্যবসা পরিবেশ সূচকে অর্জিত পয়েন্ট ৫৮ দশমিক ৭৫; ২০২২-২৩ অর্থবছরে যা ছিল ৬১ দশমিক ৯৫ পয়েন্ট।