এবার ইসরায়েলের ঋণমান কমিয়ে দিল মুডিস

হামাসের সঙ্গে যুদ্ধে জড়ানো ইসরায়েলের জন্য অর্থনৈতিকভাবেও কাল হচ্ছে। আন্তর্জাতিক ঋণমান নির্ণয়কারী সংস্থা মুডিস বলেছে, এই যুদ্ধের দীর্ঘমেয়াদি রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ফল ভোগ করতে হবে ইসরায়েলকে। সে জন্য তারা ইসরায়েলের ঋণমান অবনমন করেছে।

সিএনএনের সংবাদে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক ঋণমান নির্ণয়কারী সংস্থা মুডিস গতকাল শুক্রবার ইসরায়েলের ঋণমান এ১ থেকে নামিয়ে এ২ করেছে। ফিলিস্তিনি হামাস বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার ফল ভোগ করতে হবে ইসরায়েলকে। এই যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী ভূরাজনৈতিক উত্তেজনাও বেড়ে গেছে।

গতকাল শুক্রবার এক বিবৃতিতে মুডিস বলেছে, হামাসের সঙ্গে ইসরায়েলের চলমান যুদ্ধ ও তার বৃহত্তর প্রভাব বিবেচনায় নেওয়া হলে বলা যায়, ইসরায়েল রাজনৈতিক-অর্থনৈতিকভাবে ঝুঁকির মুখে আছে। সেই সঙ্গে নিকট ভবিষ্যতে দেশটির নির্বাহী ও আইনি প্রতিষ্ঠান দুর্বল হয়ে পড়বে এবং আর্থিক সক্ষমতা বিনষ্ট হবে।

ঋণমান এ২ বিনিয়োগের জন্য ক্ষতিকর না হলেও এই অবনমনের কারণে ইসরায়েলের পক্ষে ঋণ করা এখন আগের চেয়ে ব্যয়বহুল হয়ে পড়বে।

গত বছরের ৭ অক্টোবর হামাস বাহিনী ইসরায়েলে হামলার চালানোর পর দুই পক্ষের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। হামলার পর মধ্য অক্টোবরেই মুডিস সতর্কবাণী দিয়েছিল যে ইসরায়েলের ঋণমান অবনমন করা হতে পারে।

তখন মুডিস বলেছিল, অতীতে সামরিক সংঘাতের মধ্যেও ইসরায়েলের ঋণমান অক্ষুণ্ন থাকলেও চলমান সংকটের যে তীব্রতা, তাতে দেশটির আন্তর্জাতিক ঋণমানে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়তে পারে।

কিন্তু এবার যুদ্ধের ভয়াবহতা বেশি হওয়ায় ইসরায়েলের সামরিক ব্যয় বেড়ে যাবে, ফলে বেড়ে যাবে বাজেট–ঘাটতি। মুডিস ধারণা করছে, ২০২২ সালে ইসরায়েলের যে বাজেট–ঘাটতি ছিল, ২০২৪ সালে তা দ্বিগুণ হয়ে যেতে পারে। এমনকি পরের বছর ঘাটতি আরও বেড়ে যেতে পারে।

মুডিস বলেছে, যুদ্ধবিরতির সাপেক্ষে গাজায় অধিকতর মানবিক সহায়তা ও বন্দী মুক্তি নিয়ে আলোচনা থাকলেও এ ধরনের ঐকমত্যের সম্ভাবনা, সময়সীমা ও স্থায়িত্ব নিয়ে পরিষ্কার কিছু বলা যায় না।

মুডিস আরও মনে করছে, এই সংঘাতে হিজবুল্লাহ বাহিনীর জড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা আছে। সেটা হরে পরিস্থিতির আরও অবনতি হবে। মুডিস বলছে, এই সংঘাতে হিজবুল্লাহ জড়িয়ে পড়লে ইসরায়েলের অখণ্ডতা আরও বড় ঝুঁকির মুখে পড়বে।

বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবর অনুসারে, যুদ্ধ শুরুর দিকে ইসরায়েলের অর্থ মন্ত্রণালয় ধারণা করেছিল, এ যুদ্ধে ব্যয় হবে ৫০ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু যুদ্ধ যত তীব্র হচ্ছে, ব্যয় বৃদ্ধির আশঙ্কাও তত বাড়ছে। অনেক অর্থনীতিবিদের হিসাব, এই ব্যয় ৪০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়াতে পারে। দেশটিকে এখন মার্কিন সহায়তা ও বিভিন্ন উৎস থেকে পাওয়া ঋণের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে।

এ ছাড়া মাইক্রোসফট, আইবিএম, ইনটেল, গুগলসহ প্রায় ৫০০ বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান ইসরায়েলের প্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগ করেছে। যুদ্ধ দীর্ঘ মেয়াদে চললে এই প্রতিষ্ঠানগুলো ইসরায়েলে বিনিয়োগ অব্যাহত রাখবে কি না, সেটাও তারা পুনর্বিবেচনা করতে পারে।

সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, যে দেশ গত ১৭ বছরে ছয়টি যুদ্ধে জড়িয়েছে, সেই দেশ দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়লে বিনিয়োগকারীরা সেখানে বিনিয়োগে আগ্রহী হবেন কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা।