ব্যবসা–বাণিজ্যে গতি কম, কোম্পানি নিবন্ধনে ভাটা

আরজেএসসি

অর্থনীতির খারাপ সময়ে কোম্পানি গঠনে উদ্যোক্তাদের আগ্রহ কমে গেছে। গত কয়েক বছরে উদ্যোক্তারা কোম্পানি গঠন করে ব্যবসায় আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। সে জন্য যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মগুলোর পরিদপ্তরে বা আরজেএসসিতে কোম্পানির নিবন্ধন বেশ কমে গেছে। দুই বছর আগে যেখানে প্রতিদিন গড়ে ৩৩টি কোম্পানি নিবন্ধিত হতো, এখন তা কমে ১৮টিতে নেমে এসেছে।

আরজেএসসি সূত্রে জানা গেছে, দুই বছরের ব্যবধানে কোম্পানি নিবন্ধন এক-তৃতীয়াংশ কমে গেছে। ২০২০-২১ সালে আরজেএসসিতে ১২ হাজার ১২৫টি নতুন কোম্পানি নিবন্ধন নেয়; গত অর্থবছরে তা কমে দাঁড়ায় ৮ হাজার ২১টি।

চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) ২ হাজার ৬৪৮টি কোম্পানি নিবন্ধিত হয়েছে। পাঁচ মাস পেরিয়ে গেলেও গতবারের তিন ভাগের এক ভাগ কোম্পানিও নিবন্ধিত হয়নি। এখন প্রতিদিন গড়ে ১৮টির মতো কোম্পানি নিবন্ধন পায়। গতবার প্রথম পাঁচ মাসে সাড়ে তিন হাজারের মতো কোম্পানি নিবন্ধিত হয়েছিল।

এ বিষয়ে দেশের একাধিক শীর্ষ ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা সবাই বলেছেন, অর্থনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য কিছুটা খারাপ অবস্থায় আছে; তাই উদ্যোক্তারা নতুন বিনিয়োগ আগ্রহী নন।

ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মাহবুবুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, এ কথা সত্যি, ব্যবসা-বাণিজ্য আগের চেয়ে কিছুটা কম। মূলধনী যন্ত্রপাতি, কাঁচামাল আমদানিও কমেছে। কারণ, এখন ডলার–সংকট চলছে; মুদ্রাবাজারে তারল্যের স্বল্পতা আছে। এমন পরিস্থিতিতে কেউ নতুন বিনিয়োগে আগ্রহী হচ্ছেন না। তাই কোম্পানির নিবন্ধন কমে যেতে পারে।

ব্যবসা-বাণিজ্য আগের চেয়ে কিছুটা কম। মূলধনী যন্ত্রপাতি, কাঁচামাল আমদানিও কমেছে। কারণ, এখন ডলার–সংকট আছে। মুদ্রাবাজারে তারল্যের স্বল্পতা আছে। এমন পরিস্থিতিতে কেউ নতুন বিনিয়োগে আগ্রহী হয়ে উঠছেন না।
মাহবুবুল আলম, সভাপতি, এফবিসিসিআই

একই কথা বলেন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি জসিম উদ্দিন। তিনি মনে করেন, গত দু-তিন বছর ব্যবসা-বাণিজ্যের গতি কমে গেছে, তাই নতুন বিনিয়োগে আগ্রহ কম ব্যবসায়ীদের। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, কোভিড, ইউক্রেন যুদ্ধ, ডলার–সংকটসহ নানা কারণে অর্থনীতি চাপে আছে। এ ছাড়া কোম্পানি নিবন্ধন নিয়ে বসে থাকার উপায় নেই। কর কর্মকর্তারাও দেখেন, কারা নিবন্ধন নিয়েছেন, তাঁরা রিটার্ন জমা দেন কি না, এসব কারণে নিবন্ধনে কিছুটা ভাটা পড়েছে।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরজেএসসির এক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, দেশের অর্থনীতির এই খারাপ সময়ে কেউ নতুন করে বিনিয়োগ করতে চান না। তাই কোম্পানি নিবন্ধন কমেছে। তিনি জানান, আগে প্রতি মাসে ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ কোম্পানি নিবন্ধনের আবেদন পড়ত। এখন তা ৭০০ থেকে ৮০০–তে নেমে এসেছে। আবার অনেকে কোম্পানি নিবন্ধন নিয়েও কার্যক্রম শুরু করছেন না।

আরজেএসসির সর্বশেষ হিসাবে, বর্তমানে দেশে প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি আছে ২ লাখ ৮ হাজার ৬৩৭টি। গত বছর জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) একটি দল তদন্ত করে দেখেছে, সব কোম্পানির টিআইএন ও রিটার্ন দেওয়া বাধ্যতামূলক হলেও মাত্র ৭৮ হাজার কোম্পানির টিআইএন আছে। মাত্র ২৮ হাজার কোম্পানি নিয়মিত রিটার্ন দেয়। অনেক কোম্পানি গঠিত হওয়ার পরে পরিচালনায় আসেনি। এসব কোম্পানি কাগুজে কোম্পানি হিসেবেই থেকে যাচ্ছে। এনবিআরের ওই তদন্ত দল দেখতে পায়, কারওয়ান বাজারের দুটি ঠিকানায় প্রধান কার্যালয় হিসেবে দেখিয়ে নিবন্ধন নিয়েছে ১ হাজার ৪০০ কোম্পানি। বাস্তবে ওই দুটি ঠিকানায় ওই সব কোম্পানির অস্তিত্ব নেই।