যুক্তরাষ্ট্রে কর্মসংস্থান বাড়ছে, মূল্যস্ফীতির লড়াইও আছে

ডলার
ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রে সদ্য সমাপ্ত নভেম্বর মাসে মানুষের কর্মসংস্থান বেড়েছে। একই সঙ্গে বেড়েছে কাজের মজুরি। অন্যদিকে বিশ্বের বৃহত্তম এই অর্থনীতি এখনো ধুঁকছে মূল্যস্ফীতি মোকাবিলায়। পণ্যের ক্রমবর্ধমান দামের কারণে দেশটি এখন একটি কঠিন লড়াইয়ের মুখে রয়েছে।

গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রের নিয়োগকর্তারা সব মিলিয়ে ২ লাখ ৬৩ হাজার নতুন লোককে চাকরি দিয়েছেন। সেই সঙ্গে কর্মীদের মজুরিও বৃদ্ধি পেয়েছে। কর্মীদের ঘণ্টাপ্রতি বেতন গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫ দশমিক ১ শতাংশ বেড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি পরিসংখ্যানে এই চিত্র উঠে এসেছে।

তবে কর্মসংস্থান ও মজুরি বাড়লেও যুক্তরাষ্ট্রে এখনো বেকারত্বের হার ৩ দশমিক ৭ শতাংশে রয়ে গেছে। মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ অর্থনীতি ও মূল্যস্ফীতি স্থিতিশীল রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এ জন্য নীতিনির্ধারণী সুদের হার বাড়ানো হয়েছে, যাতে অর্থনীতি ও পণ্যের দাম স্থিতিশীল হয়।

এতে ফল মিলছে। প্রত্যাশার তুলনায় কর্মসংস্থান বেশি হয়েছে। ফেডারেল রিজার্ভ ১৯৮০-এর দশকের পর চলতি বছরেই সবচেয়ে দ্রুতগতিতে ঋণের সুদের হার বাড়িয়েছে। এই বছর যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতি যে হারে বেড়েছে, তা বিগত প্রায় ৪০ বছরের সর্বোচ্চ।

বিশ্লেষকরা অবশ্য ভবিষ্যদ্বাণী করছেন যে যুক্তরাষ্ট্রে কর্মসংস্থানের হার দুর্বল হয়ে আসবে। এর কারণ হিসেবে তাঁরা ব্যবসায়ের সম্প্রসারণ ধীর হয়ে পড়া ও ব্যয়বৃদ্ধির কথা উল্লেখ করেছেন।

এদিকে কিছু খাতে কর্মী ছাঁটাইয়ের খবরও প্রকাশ পাচ্ছে। এর মধ্যে অন্যতম দুই খাত হলো আবাসন ও প্রযুক্তি। যেখানে চাকরিচ্যুতির খড়্গ পড়েছে। এ রকম অবস্থায়ই মার্কিন শ্রম বিভাগ গতকাল শুক্রবার এক প্রতিবেদনে জানায়, সার্বিকভাবে শ্রমবাজার দৃঢ় থাকার কথা বলেছে।

নভেম্বর মাসে যুক্তরাষ্ট্রে বিশেষ করে বার, রেস্তোরাঁ, স্বাস্থ্যসেবা প্রভৃতি খাতের সংস্থাগুলোয় কর্মী নিয়োগ বেশি হয়েছে। এমনকি নির্মাণ ও উৎপাদনের মতো খাতগুলোতেও নতুন কর্মসংস্থান হয়েছে।

এটাকে শ্রমিকদের জন্য সুখবর বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা। তবে তাঁরা বলেন, মজুরি বৃদ্ধি আবার পণ্যের দামকে ঊর্ধ্বমুখী করে তুলতে পারে। এই অবস্থায় তাঁরা কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভকে সামনের মাসগুলোতে সুদের হার বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন।

প্রিন্সিপাল অ্যাসেটের চিফ গ্লোবাল স্ট্র্যাটেজিস্ট সীমা শাহ বলেছেন, ‌‘‌গত তিন মাস ধরে যুক্তরাষ্ট্রে যে ঘণ্টাপ্রতি গড় মজুরি ক্রমাগত বেড়েছে এবং সব প্রত্যাশাকে ছাড়িয়ে গেছে, তা নিশ্চয়ই ফেডারেল রিজার্ভের কর্মকর্তাদের নজরের বাইরে ছিল না। সীমা শাহ আরও বলেন, ‘হ্যাঁ, এটা ভালো যে মার্কিন শ্রমবাজার এখন শক্তিশালী। কিন্তু এটা খুবই ভয়ংকর যে ক্রমাগত মজুরির চাপ তৈরি হচ্ছে।’

যুক্তরাষ্ট্রে মজুরি বাড়ছে বটে, তবে তা পণ্যের দামের মতো দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে না। জুনের পর থেকে মূল্যস্ফীতি অবশ্য কমেছে। এরই ধারাবাহিকতায় গত মাসে মূল্যস্ফীতি ৭ দশমিক ৭ শতাংশে নেমে আসে, যা জুনের দিকে ছিল ৯ দশমিক ১ শতাংশ, যা প্রায় ৪০ বছরের সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতির কাছাকাছি। সূত্র: বিবিসি